এক গাছে এত প্রজাতির পাখি!
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে আছে এক মান্দার গাছ৷ ফেব্রুয়ারি-মার্চে গাঢ় কমলা রঙের ফুলে ছেয়ে যায় সেটি৷ ফুলের মধু খেতে দিনভর গাছটিতে ভিড় করে নানা রঙের পাখি৷ একটি গাছে একসঙ্গে এত বেশি প্রজাতির পাখি অন্য কোথাও দেখা যায় না৷
সাতছড়ির মান্দার গাছ
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই বিশাল আকারের মান্দার গাছটির অবস্থান৷ ছয়তলা বিশিষ্ট ওয়াচ টাওয়ারটির মতোই উচ্চতা এ গাছটির৷ ফলে ওয়াচ টাওয়ারটির প্রতি তলায় দাঁড়িয়ে খুব কাছে থেকে দেখা যায় নানান পাখি৷ প্রকৃতিপ্রেমী বিশেষ করে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফাররা ফুলের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেখানে যান৷
বাসন্তী লটকন টিয়া
টিয়া প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট এ পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর৷ সাতছড়ির মান্দার ফুলে এ পাখিটি প্রচুর দেখা যায়৷ ভোরা, লেজকাটা টিয়া বা শুধু লটকন বিভিন্ন নামে পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম ‘ভের্নাল হ্যাঙ্গিং প্যারট’৷ সাতছড়ির গাছে পাখিটি সকালে বেশি দেখা যায়৷
লালবুক টিয়া
মদনা টিয়া নামেও পাখিটি পরিচিত৷ ইংরেজি নাম ‘রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট’৷ এর ঠোঁট লাল, মাথা বাদামি, পিঠ সবুজ ও বুক লাল৷ গলায় সুন্দর একটি কালো মালা আছে৷ জোরে আওয়াজ করে দলবেঁধে এরা মান্দার ফুলের মধু আর পাপড়ি খেতে আসে৷ এ পাখিটিও সকালে আর বিকেলে বেশি দেখা যায়৷
সিপাহি বুলবুলি
এর ইংরেজি নাম ‘রেড হুইস্কার্ড বুলবুলি’৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পাখিটি ঝুঁটি বুলবুল, ঝুঁটকুলি, পাহাড়ি বুলবুল কিংবা চায়না বুলবুল নামেও পরিচিত৷ সাতছড়ির মান্দার গাছে পাখিটি সারাদিনই কম-বেশি দেখা যায়৷
কালো খোঁপা বুলবুলি
পাখিটি কালো-ঝুঁটি বুলবুলি বা কালো-খোঁপা হলদে বুলবুলি নামেও পরিচিত৷ ইংরেজি নাম ‘ব্লাক হেডেড ইয়োলো বুলবুল’৷ এ প্রজাতির পাখিটি গাছের ডালে একা একা বেশি বিচরণ করে৷ সবসময় এ প্রজাতির পাখিটি দেখা গেলেও তা সংখ্যায় অনেক কম৷
বাংলা বুলবুলি
সব জায়গাতেই পাখিটি প্রচুর দেখা যায়৷ মান্দার গাছের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সেখানেও পাখিটি আসে৷ সারাদিনই কমবেশি পাখিটির দেখা মেলে৷ এর ইংরেজি নাম ‘রেড ভেন্টেড বুলবুলি’৷
নীলগলা বসন্ত বৌরি
মান্দার গাছে মধু খেতে এসে পাখিটি দীর্ঘক্ষণ একনাগারে ডাকতে থাকে৷ এর ইংরেজি নাম ‘ব্লু থ্রোটেড বারবেট’৷ পাখিটির ডাক বনের অনেক দূর থেকেও শোনা যায়৷ দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে পাখিটি ধনিয়া, বড় বসন্ত বৌরি বা বসন্ত বাউরি নামেও পরিচিত৷
কাঠ শালিক
সাতছড়ির মান্দার গাছে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ পাখিটি৷ এর ইংরেজি নাম ‘চেস্টনাট টেইলড স্টার্লিং’৷ গাছের ডালে বসে এ পাখিকে অন্যান্য পাখির সঙ্গে সবসময় ঝগড়া করতে দেখা যায়৷
সবুজ পাতা বুলবুলি
পাখিটির ইংরেজি নাম ‘গোল্ডেন ফ্রন্টেড লিফবার্ড’৷ এলাকাভেদে এ পাখিটি সোনালি-কপাল পাতা বুলবুলি, পাতা বুলবুলি, সোনা-কপালি হরবোলা নামেও পরিচিত৷ এ পাখিটিও প্রচুর দেখা যায় সাতছড়ির মান্দার গাছে৷
উদয় ধলা চোখ
দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাখিটি শ্বেত আঁখি, শ্বেতাক্ষি, বাবুনাই, চশমা টুনি, চশমা পাখি নানা নামেও পরিচিত৷ এর ইংরেজি নাম ‘ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই’৷ পাখিটি আকারে খুবই ছোট এ পাখিটিও দলবেঁধে আসে সাতছড়ির মান্দার ফুলে৷
মেটেটুপি বাটকুড়ালি
সাতছড়ির মান্দার ফুলে মাঝে মধ্যে দেখা যায় পাখিটি৷ এর ইংরেজি নাম ‘গ্রে ক্যাপড উডপেকার’৷ পাখিটি আকারে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো৷ পাখিটিকে গাছে ডালে বসে কাঠ ঠোকরাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়৷
আরো আছে নানান পাখি
এছাড়াও আরো নানান পাখির মেলা বসে সাতছড়ির এই মান্দার গাছে৷ এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সবুজ টিয়া, ফুলমাথা টিয়া, পাহাড়ি ময়না, সুঁইচোরা, ভিমরাজ, হরিয়ালসহ আরো নানা রকম চোখ জুড়ানো পাখির মেলা বসে সাতছড়ির মান্দার ফুলে৷