1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একটি মাত্র ভাষা জানা যথেষ্ট নয় ব্রিটেনে

১০ ফেব্রুয়ারি ২০১১

সম্প্রতি ব্রিটেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, সেখানকার স্কুলগুলোতে একটি বিদেশি ভাষা শেখা অত্যাবশ্যকীয় করা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে টীন এজারদের জন্য তা জরুরি বলে জানানো হয়৷

https://p.dw.com/p/10EuF
ছবি: DW

সাত বছর আগে ‘বিদেশি ভাষা' শেখার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছিল৷ বিশ্বায়নের এই যুগে, শ্রম বাজারে টিকে থাকতে হলে – নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে৷ জানতে হবে একাধিক ভাষা – বলছে ব্রিটেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়৷

লন্ডনের গ্যোয়েটে ইন্সটিউটে গেলে মনে হবে এখানে সবাই বিদেশি ভাষা শিখতে আগ্রহী৷ প্রায় দুই হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এখানে জার্মান শিখছে৷ জার্মান ভাষা শেখার পেছনে তাদের মূল উদ্দেশ্য হল চাকরি খোঁজা, অর্থনৈতিক সংঙ্কট থেকে নিজেদের রক্ষা করা৷ অথচ পাঁচ বছর আগেও এই চিত্র ছিল পুরোপুরি ভিন্ন৷ ইনস্টিটিউটের কার্ল ফাইফার তার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন,‘‘এর অন্যতম কারণ হল স্কুলগুলোতে বিদেশি ভাষা শেখানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষ করে জার্মান ভাষা আর শেখানো হয়নি৷ যারা আমাদের কাছে জার্মান শিখতে আসছেন তারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক এবং তাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷ তারা সবাই জানিয়েছেন, স্কুলে তারা জার্মান শিখেছেন কিন্তু বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর এই বিদেশি ভাষাটি আর শেখানো হয়নি৷ ভাঙা, ভাঙা জার্মান তারা এখনো জানেন৷ ভাষাটি পুরোপুরি শিখতে তারা এখানে এসেছেন৷ অর্থনৈতিক এই সঙ্কটে তারা কাজ খুঁজছেন৷''

FUBiS Sprachschule an der Freien Uni Berlin
ভাষা জানার মাধ্যমে একজন হয়ে উঠতে পারে বিশ্ব নাগরিকছবি: FUBiS

প্রয়োজন একাধিক ভাষা জানা

ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে শোনা গেল জার্মান ভাষা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য৷ একজন জানাল,‘‘আমার মনে হয়, ইউরোপের মানুষরা বেশ ট্যালেন্টেড৷ তারা দুই থেকে তিনটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে৷ আজকাল দেখা যায় অনেকেই চারটি ভাষা পর্যন্ত জানে৷ আমার মনে হয় আমাদের ব্রিটিশদেরও এগিয়ে যাওয়া উচিত৷ আরেকটি ভাষা শেখা উচিত৷''

আরেকজন বলল,‘‘আমি ইউরোপের অন্যান্য দেশে কাজ খুঁজছি৷ তাই আমি মনে করি নতুন একটি ভাষা জানা থাকলে কাজ খুঁজে পাওয়ার পরিধিও অনেকটা বেড়ে যাবে৷''

গত সাত বছর ধরে ব্রিটিশ টীন এজারদের বিশাল এক সংখ্যা বিদেশি ভাষা না শিখেই স্কুলের পর্ব শেষ করেছে৷ কার্ল ফাইফার মনে করেন, একটি ভাষা না শেখার অর্থ হল একটি দেশের সংস্কৃতিকে পুরোপুরি বর্জন করা৷ কার্ল আরো জানান,‘‘যে বা যারা কোনদিন আরেকটি ভাষার সংস্পর্শে আসেনি তারা কখনোই বিশ্বায়ন সম্পর্কে কোন ধারণা পাবে না৷ অন্য কোন কিছু করা বা অন্যভাবে চিন্তা করাও তাদের জন্য কঠিন৷''

ব্রিটিশরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে

এ কারণেই কি ব্রিটিশরা বিশ্বায়নের এই যুগে পিছিয়ে পড়ছে? ব্রিটেনে সরকারি চাকরি যারা করছেন তারা যদি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনে পোস্টিং চান তাহলে বিদেশি একটি ভাষায় তাদের পরীক্ষা দিতে হয়৷ এক্ষেত্রে ব্রিটিশরা সত্যিই পিছিয়ে রয়েছে আর এ জন্যই ব্রিটিশ সরকার চাচ্ছে বিদেশি ভাষার এই পরীক্ষার ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দেওয়া হোক৷

দক্ষিণ লন্ডনের একটি প্রাথমিক স্কুল চেষ্টা করছে পুরনো প্রথায় অর্থাৎ নতুন একটি ভাষা শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে৷ উইক্স প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানো হচ্ছে ফরাসি ভাষা৷ ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি ভাষায় এদের দক্ষ করার চেষ্টা চলছে৷ স্কুলের প্রধান মার্ক ওলস্টেনক্রাফট জানান, বাবা-মায়েরাও সাদরে গ্রহণ করেছে এই নীতি৷ তাদের পুর্ণ সমর্থন পেয়েছে স্কুল কমিটি৷ মার্ক বললেন,‘‘আমাদের আশেপাশেই অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা চাচ্ছে তাদের ছেলে-মেয়েরা অন্তত দুটি ভাষায় পারদর্শী হোক৷ এবং তা যেন শুধুমাত্র স্কুলের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে৷''

মার্ক ওলস্টেনক্রাফট বেশ জোর দিয়েই বলেন, আরেকটি ভাষা জানার অর্থ শুধু ভাষা জানাই নয়৷ সেই দেশটিকে জানা, দেশের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসও জানা৷ মার্কের ভাষায়,‘‘অন্য একটি ভাষা নতুন এক দিক উন্মোচন করে মানুষের মধ্যে৷ তারা অন্যভাবে সবকিছুর ব্যাখ্যা দেয়৷ একাধিক ভাষার মাধ্যমে তারা যথার্থই হয়ে উঠতে পারে বিশ্ব নাগরিক৷''

ভুলে যাও ওয়াটারলু

ভৌগলিকভাবে ফ্রান্সের খুব কাছে অবস্থিত ব্রিটেন৷ তাই ফরাসি স্কুল ব্যবস্থা ‘লিসে'র কিছু কর্মসূচি লন্ডনের এই স্কুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ অনেকদিন বিদেশি ভাষা অনুপস্থিত ছিল স্কুল প্রাঙ্গন থেকে৷ এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সৃজনশীলতা যেন পুরোপুরি হারিয়ে গেছে৷ হারিয়ে গেছে ব্রিটেনের গোটা স্কুল ব্যবস্থা থেকে৷

উইক্স প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গ্যোয়েটে ইন্সটিটিউট চেষ্টা করছে, ব্রিটিশ সরকারের বিদেশি ভাষা শেখানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে কিন্তু বলতেই হচ্ছে স্রোতের বিপরীতে চলছে সংস্থা দুটি৷ সরকার চেষ্টা করছে বাবা-মায়েদের উৎসাহিত করতে যেন তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি সমর্থন করেন৷ তাহলেই অন্তত দুটি ভাষায় পারদর্শী হতে পারবে ব্রিটেনের আগামী প্রজন্ম৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক