দৃকের কর্মকর্তা ইরফানুল হত্যা
১১ এপ্রিল ২০১৬দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হালকাভাবে বা অপরিকল্পিতভাবে ইরফানুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি না৷ ১৯৯৬ সালে আমার ওপর হামলা হয়েছে৷ আলোকচিত্রী আফতাব আহমেদকে খুন করা হয়েছে৷ এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পৃক্ত কিনা বলা মুশকিল৷ তবে পুলিশ যেভাবে বিরোধী দলকে দমনপীড়নে ব্যস্ত, টাকা কামাতে ব্যস্ত, সেখানে তারা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে কীভাবে?''
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ৮ নম্বর রোডে ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়ার পরই নিখোঁজ হন ইরফানুল৷ এর কয়েক ঘণ্টা পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের কাছে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়, যা হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয় পুলিশ৷ ইরফানুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছিল৷
ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ আমরা পেয়েছি৷ ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে যে, ইরফানুল ইসলাম সকাল ১১ টা ২০ মিনিটের দিকে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন৷ তবে ঘাতকরা ব্যাংকের সামনে থেকে ইরফানুল ইসলামকে তুলে নেয়নি বলেই আমরা ধারণা৷ কারণ এ ধরনের একটি ব্যস্ত এলাকা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অপর এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নেয়া সম্ভব নয়৷ ইরফানুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পাওয়া গেছে৷ এ মুহূর্তে সেটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত বিষয়টি ছিনতাইয়ের ঘটনা বলেই আমাদের মনে হচ্ছে৷''
দৃক গ্যালারির উপ-মহাব্যবস্থাপক রেজাউর রহমান জানান, ধানমন্ডির অফিস থেকে সকাল ১১টার পর একটি প্রাইভেট কার নিয়ে বেরিয়েছিলেন ইরফানুল৷ অফিসের জন্যই তিনি ঐ তিন লাখ টাকা তোলেন৷ গাড়িচালক ইরফানুলকে ব্যাংকের সামনে নামিয়ে দিয়ে পাশের সাত নম্বর সড়কে চলে যায়৷ এর আগে ঐ সড়কে একবার ট্রাফিক পুলিশ তাঁকে জরিমানা করেছিল বলে গাড়িচালক পাশের সড়কে গিয়ে অপেক্ষা করছিল৷ যাওয়ার সময় চালক এ কথা ইরফানুলকে মোবাইল ফোনে জানিয়েও ছিলেন৷ বেলা ১২টার পর বেশ কয়েকবার কল করেও ইরফানুলের ফোন বন্ধ পান চালক৷ এরপর তাঁর কাছ থেকে দৃকের কর্মকর্তারা খবর পেয়ে থানায় জিডি করেন৷ রেজাউর বলেন, সম্ভবত সাত নম্বর সড়কে থাকা গাড়িতে উঠতেই তিনি হেঁটে সে দিকে যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু পথের মধ্যেই তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ইরফানুল ইসলামের ভাই ইমদাদুল ইসলাম বাদি হয়ে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ইরফানুলের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল না৷ তাঁর ওপর কোনো ধরনের হুমকিও ছিল না৷ এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদেরও তিনি কিছু বলেননি৷ ফলে আমরা বুঝতে পারছি না যে, কী কারণে তাঁকে হত্যা করা হলো৷''
ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, ‘‘কেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে আমরা বুঝতে পারছি না৷ তবে দেশের একজন নাগরিক এভাবে খুন হবেন, গুম হবেন, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য এত নিরাপত্তা, সেখানে সাধারণের জন্য কোনো নিরাপত্তা থাকবে না, সেটা হতে পারে না৷ কয়েকদিন পর হয়ত আমরা দেখব যে, একটা জজ মিয়া নাটক তৈরি করা হয়েছে৷ আসলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন তারা যদি সুষ্ঠু তদন্ত না চান, তাহলে সেটা কখনোই হবে না৷ আমাদের দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই৷''
এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কী থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়? জানান মন্তব্যের ঘরে৷