1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঊষর মরুতে শ্রমিকদের কান্না

২০ জুলাই ২০১০

কাজের সন্ধানে দক্ষিণ এশিয়া থেকে অনেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে৷ মন্দার ধাক্কায় বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা৷

https://p.dw.com/p/OPqB
সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করছেন এশিয় শ্রমিকরাছবি: dpa

৪৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা৷ মধ্যপ্রাচ্যের জন্য খুব বেশি না হলেও দক্ষিণ এশীয়দের জন্য এটাই অনেক বেশি৷ আর এর মধ্যেই গাদাগাদি করে থাকছে একদল শ্রমিক৷ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তো দূরের কথা, খাবারই জুটছে না তাদের৷ চাকরি নেই বললেই চলে৷ ফিরতে পারছে না দেশেও৷ বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ঊষর মরুতে দক্ষিণ এশিয়ার এই শ্রমিকদের ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে৷

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসার মূল কেন্দ্রই বলা যায় আরব আমিরাতকে৷ বিশেষ করে দুবাই, আর শারজাহ৷অর্থনীতির উল্লম্ফনে বিশাল বিশাল দালান উঠছিলো সেখানে৷ এই জন্য নেওয়া হয়েছে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক৷ কিন্তু মন্দার ধাক্কায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কাজ৷ আর যেসব কোম্পানি শ্রমিকদের নিয়েছিলো, তারা আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে, ফলে বিপাকে পড়েছে শ্রমিকরা৷ শারজাহ'র একটি ক্যাম্পে থাকা শ্রমিকরা জানালেন, তারা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে অনেকবার টেলিফোন করেছে৷ কিন্তু রিং বেজে গেলেও কেউ ধরছে না৷ তারা আরো জানান, ছয় মাস ধরে তারা কোনো বেতন পাচ্ছেন না৷ মাসিক ৮০০ দিরহাম অর্থাৎ ২১৭ ডলারে কাজ করতে এসেছিলেন তারা৷ বাসনা ছিলো, তাদের পাঠানো অর্থে পরিবারের অস্বচ্ছলতা ঘুচবে৷ কিন্তু সে আশায় এখন গুড়েবালি৷

মোহন নামে একজন শ্রমিক জানালেন, পরিবার নিয়ে এসেছিলেন তিনি৷ কিন্তু অবস্থা সুবিধার না হওয়ায় তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ নিজে থেকে গেছেন, যদি পাওনা বেতনের কিছু মেলে৷ মোহন বললেন, ‘‘ভারতে গিয়েও যে ভালো থাকবো, তার কী কোনো নিশ্চয়তা আছে৷'' শারজাহ-এ মোহনের ক্যাম্পে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ শ্রমিকদের দুর্দশা এখন সীমাহীন বলে জানালেন পাকিস্তানের সাহের শেখ৷ অবস্থাপন্ন এই নারী নিজের উদ্যোগেই শ্রমিকদের খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন৷ সাহের বললেন, ‘‘তাদের আনা হয়েছিলো কাজ করতে৷ বিনিময়ে মজুরি পাবে৷ এখন কোম্পানির লোকজন পালিয়েছে, কাজও বন্ধ, শ্রমিকদের মজুরিও নেই৷''

শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷ তারা বলছে, এই ধরনের কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ তবে অন্য তরফে বলা হচ্ছে, সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া বেশ কঠিন৷ বিশ্লেষক ইবতিসাম আল কিতবি বলেন, ‘‘সরকার এখন ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি চালু করার কথা ভাবছে৷'' তবে এই বিষয়ে আমিরাতের শ্রম মন্ত্রণালয় মুখ খুলতে চাইছে না৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্স যোগাযোগ করলে তাদের এক মুখপাত্র শুধু এটুকু বললেন, শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ আর দেড় হাজার জনকে ইতোমধ্যে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ অবশ্য শ্রমিকরা বলছে, সরকার শুধু মুখেই বলছে, কাজ করছে না৷ ভাগ্য বদলানোর আশায় ধার-দেনা করে অনেকে দেশ থেকে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ কিন্তু এখন আশাভঙ্গের যাতনা থেকে কেউ কেউ আত্মহত্যাও করছেন৷ এক শ্রমিক বললেন, ‘‘আমরা জেগে থাকি, নইলে ঘুমাই৷ আর জেগে থাকলে দুর্ভাবনার জন্য থাকে অফুরন্ত সময়৷'' দেনা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরতেও অস্বস্তি, এরপরও বাড়ি ফিরতে চান এদের অনেকেই৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক