1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উৎসবেও অন্ধকার ছৌ শিল্পীদের মুখ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ অক্টোবর ২০২১

উৎসবের আলোর মধ্যে অন্ধকারে ঢাকা ছৌ শিল্পীদের মুখ। করোনা কেড়েছে রোজগার, জীবিকা ও পুজোর আনন্দ। আশা ছিল, এবারের দুর্গাপুজোয় অন্তত ভালো বরাত আসবে। কিন্তু আশা পূরণ হয়নি।

https://p.dw.com/p/41gA4
Bengalen | Chhou-Künstler von Puruliya
ছবি: Payel Samanta/DW

করোনা অতিমারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত ছৌ শিল্পীরা। লকডাউনের ধাক্কায় পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত পুজোয় কোন অনুষ্ঠান করার সুযোগ ছিল না। তাই এবার আশা ছিল, এই দুর্গাপুজোয় তারা সেই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু জমায়েতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। দীর্ঘ লকডাউনে শিল্পীদের অব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র, ছৌ নাচের পোশাক নষ্ট হয়েছে। এক একটি ছৌ মুখোশের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা। কাজেই প্রতিটা দলকে ফের দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করে মুখোশ ও পোশাক তৈরি করতে হচ্ছে। আশা ছিল এ বছর দুর্গাপুজোয় বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করে কিছু উপার্জন করা যাবে। কিন্তু তার আগেই একের পর এক কমিটি তাদের বায়না বাতিল করেছে। ফলে এই উৎসব ছৌ শিল্পীদের ঘরে আলো জ্বালতে পারেনি। অল্প কয়েকটি ছৌ নাচের দল পুজোর অনুষ্ঠান করছে।

পুরুলিয়া জেলার ছৌ গবেষক ও একটি দলের পরিচালক, ৬৭ বছরের সুনীল মাহাতো ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আগে চৈত্র সংক্রান্তি থেকে ছৌয়ের মরশুম শুরু হত। ইদানীং কালে সেই সময় এগিয়ে পুজো থেকে শুরু হচ্ছে। কিন্তু করোনার জন্য পুজো কমিটিগুলো পুজোতে অনুষ্ঠান করতে ডাকছে না। অন্য বছর কলকাতা ও বিভিন্ন শহর থেকে পুজোয় অনেক বায়না আসে, এবার সে সব কিছুই আসছে না।" ছৌ, ঝুমুর, নাটুয়া সব শিল্পীদেরই একই অবস্থা।

সুনীল মাহাতো

এই দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠান করতে এসেছে নিউ স্টার ছৌ ডান্স গ্রুপ। এই বছর পুজোয় এই একটিমাত্র অনুষ্ঠান তারা পেয়েছে। অথচ করোনাপূর্ব দুর্গাপুজোর দিনগুলো তো বটেই, তার পরেও ছৌ নাচের অনুষ্ঠান পাওয়া যেত। এই দলের কর্ণধার দেবাশিস দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'করোনার আগে পুজোয় ইচ্ছেমতো অনুষ্ঠান করেছি আমরা। এখন সে সুযোগ নেই। আগে পুজোর ১০ দিন আগে পর্যন্ত আশা থাকত অনুষ্ঠানের বায়না পাওয়ার। পঞ্চমী থেকে স্টেজ পারফরম্যান্স শুরু হত। দশমীর কার্নিভাল ও তার পরেও সেটা চলত। এ বছর সব দিনেই ডাক এসেছিল। কিন্তু পুজোর মোট আটটা প্রোগ্রাম

বাতিল হয়েছে।" দেবাশিস জানান, তারা শহর থেকে ডাক পেলে ৩৫ হাজার টাকা নেন। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের বাইরের শহর থেকে ডাক এলে অনুষ্ঠান নির্বাচনের স্বাধীনতাও ছিল তাঁদের। কিন্তু করোনা সে সবে থাবা বসিয়েছে। বহু পুজো কমিটি তাদের বায়না বাতিল করেছে। অনেক উদ্যোক্তার অত বাজেট নেই। তিনি বলেন, "রাজ্যের বাইরে বছরে ৩০-৩৫টি অনুষ্ঠান পেতাম, রাজ্যের মধ্যে ৫০-৬০ টা। তবে স্থানীয় ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। লকডাউনের পর আস্তে আস্তে স্থানীয় অনু্ষ্ঠান পেতে শুরু করেছি।”

পুরুলিয়ায় এখন ৩০০ থেকে ৪০০টি পুরুষদের ছৌ নাচের দল রয়েছে৷ তৈরি হয়েছে অনেক মহিলাদের নাচের দল। যেমন পুরুলিয়ার মিতালি ছৌ মালডি এবং জামবাদ মহিলা দল। জামবাদ মহিলা দলের গৌতম মাহাতো বলেন, "আমাদের ৭০-৭২ টার মতো অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে লকডাউনের জন্য। তবুও ৪০-৪২ টার মতো অনুষ্ঠান করতে পেরেছি। এখন সব জায়গায় অনুষ্ঠান করতে দিচ্ছে না। তার মধ্যেও একটা দুটো অনুষ্ঠান পাচ্ছি। পুজোয় এবার নবমীর দিন একটা অনুষ্ঠান আছে আমাদের।” ছৌ নাচের পাশাপাশি গৌতম সংসার চালানোর জন্য এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তার মতো অনেক ছৌ শিল্পীও অন্য জীবিকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন । হকারি, চাষবাস, দোকানে কাজ ইত্যাদিতে যুক্ত হয়ে সংসারের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন।

ছৌ মুখোশ তবু অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। সে দিক থেকে ছৌ নাচের শিল্পীরা আরো অসহায়। মিতালি ছৌ মালডি দলের কান্ডারি মৌসুমী চৌধুরী বলেন, "করোনায় অনেক বিদেশ সফর বাতিল হয়েছে। এমনকি দেশ ও বিদেশের ছোটদের ছৌ নাচ শেখানোর ক্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনলাইনে নাচ শেখানো যায়। কিন্তু আমি তাতে সন্তুষ্ট হচ্ছি না।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য