1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় খুন?

৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

উত্তর প্রদেশে খুন করা হলো এক ট্যাক্সিচালককে। পরিবারের অভিযোগ ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তাঁকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

https://p.dw.com/p/3i8wc
ছবি: picture-alliance/empic/P. Byrne

উত্তর প্রদেশে আবার খুন। এ বার ট্যাক্সিচালক আফতাব আলম। বয়স ৪৫ বছর। তিনি প্রথমে ট্যাক্সিতে একজন যাত্রী নিয়ে বুলন্দশহর যান। তাঁকে নামিয়ে রাতে ফেরার পথে দুই জন যাত্রীকে তোলেন। তাঁদের হাতেই খুন হন তিনি।

আফতাবের ছেলে সারিব জানিয়েছেন, রাত আটটা নাগাদ আফতাব তাঁকে ফোন করেন। তিনি তখন একটি টোল প্লাজার কাছে ছিলেন। তাঁর ধারণা হয়েছিল, তিনি ভুল লোককে ট্যাক্সিতে তুলেছেন। তারপর ফোনটা চালু অবস্থাতেই পাশে রেখে দেন। সারিব কল রেকর্ড করতে শুরু করেন। সেখানেই শোনা যায়, একজন বলছেন, 'জয় শ্রীরাম বল'। আরেকজন বলছে, 'ভাই তু জয় শ্রীরাম বোল'। এর মিনিট পনেরো পরে আফতাবের ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়। সারিব প্রথমে দিল্লি পুলিশে ফোন করেছিলেন। তারা জানায়, নয়ডায় গৌতম বুদ্ধ নগর থানায় অভিযোগ জানাতে হবে। সেইমতো তিনি নয়ডা পুলিশকে ফোন করেন।

গ্রেটার নয়ডা পুলিশ তারপর গাড়িটি উদ্ধার করে। তখন আফতাব চালকের সিটে। তাঁর মাথায় ভারি জিনিস দিয়ে মারা হয়েছিল। চিকিৎসা করার সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়। গাড়ির সওয়ারিরা কেউ ছিল না। সারিবের দাবি, 'জয় শ্রীরাম' না বলার জন্যই তাঁর বাবাকে মারা হয়েছে। অডিও ক্লিপ তাঁর কাছে আছে। সেই অডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। 

পুলিশ অবশ্য সারিবের কথা মানতে চায়নি। তাদের দাবি, ওই দুই সওয়ারি মাতাল ছিল। তারা ট্যাক্সি চুরি করার মতলবে উঠেছিল। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, দুই জনই পাকা অপরাধী। অপরাধ ছাড়া এর পিছনে অন্য কোনো মোটিভ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দুই অপরাধী যদি গাড়ি চুরি করার মতলবে উঠে থাকে, তা হলে তারা গাড়ি চুরি করল না কেন?

ওই দুই ব্যক্তি কাকে জয় শ্রীরাম বলতে বলছিল? পুলিশের ব্যাখ্যা, দুই অপরাধী অন্য কাউকে জয় শ্রীরাম বলতে বলছিল। আফতাবকে নয়। নয়ডার জোন ২-এর এসিপি রাজীব কুমার বলেছেন, ''আমরা এ ব্যাপারে জানতে পারার পরই দাদরি পুলিশকে সতর্ক করে দেয়া হয়। দাদরির পুলিশই আফতাবের সুইফট ডিজায়ার গাড়ির সন্ধান পায়। চালকের মাথায় আঘাত ছিল। অভিযুক্তরা পলাতক। একটা অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে, জয় শ্রীরাম বলা নিয়ে। কিন্তু সেটা চালককে বলা হয়নি। গাড়ি যখন থেমেছিল তখন দুই অভিযুক্ত অন্য কাউকে ওই কথা বলছিল। এর মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িক বিষয় নেই।''

আফতাবের পরিবার অবশ্য মনে করে, সাম্প্রদায়িক কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে।

মৈনপুরিতে দলিত খুন

উত্তর প্রদেশেরই মৈনপুরিতে এক দলিতকে পিটিয়ে খুন করা হলো। বিরোধীদের অভিযোগ, এর পিছনে দক্ষিণপন্থী সংগঠনের হাত আছে। গুজবের ভিত্তিতে তঁকে খুন করা হয়েছে।

মৃত দলিত ব্যক্তির নাম সর্বেশ দিবাকর। তিনি ঠেলায় করে জিনিস বেচতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাইরে কাজে যান বলে তিনি তাঁর ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তারপরই গুজব রটতে শুরু করে, তিনি মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছেন।  সমাজবাদী পার্টি একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেছে। দূর থেকে নেয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির ছাদের উপর সর্বেশকে মারছে জনা পাঁচেক লোক।

এখানেও পুলিশ জানিয়েছে, কোনো সংগঠন এই হত্যার পিছনে নেই। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সর্বেশকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ভিডিওতে দেখা পাঁচজনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা অপরাধী। কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। এ নিয়ে গুজব না ছড়ানোর জন্য বলেছে পুলিশ।

উত্তর প্রদেশ নিয়ে প্রশ্ন

বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী টুইট করে বলেছেন, ''সর্বেশ কুমারকে পিটিয়ে মারা হলো। একইরকমভাবে মহারাজগঞ্জের গোবিন্দ চৌহান, শাহজাহানপুরের রাজীব মৌর্য, বরেলির ওয়াসিদ, কুশীনগরের সুধীর সিং ও বান্দায় বিনোদ গর্গকে গুলি করে বা অন্যভাবে মারা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাই দুঃখের।''

উত্তর প্রদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীরা বেশ কিছুদিন ধরে প্রশ্ন তুলছে। এর আগে পুলিশের ফেক এনকাউন্টার নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন উঠেছিল। এখন সাংবাদিক, দলিত, সংখ্যালঘু তো বটেই সব বর্ণের মানুষকে হত্যার অভিযোগ সামনে আসছে। ফলে যোগী আদিত্যনাথের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীরা।

জিএইচ/এসজি(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি)