ঈদ উৎসবে শহর ঢাকা
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর৷ গত দুই বছরে মহামারির কারণে বিধিনিষেধের মধ্যে কেটেছে৷ এবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে ঈদ৷ দেখুন ছবিঘরে
ঈদের চাঁদ ওঠার আনন্দ
৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় ঈদ-উল-ফিতরের চাঁদ দেখা গিয়েছে৷ সন্ধ্যা নামতেই ঢাকার আকাশে আতসবাজি ফাটিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয়৷
একসঙ্গে নামাজ
ঢাকার প্রধান দুই জামাতস্থল বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদ্গাহে সেখানে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হন৷ করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় এবারের জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো৷
ঈদের নামাজে মুসল্লিদের ঢল
ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এবং হাইকোর্টস্থ জাতীয় ঈদ্গাহে একাধিক জামাতে লাখো মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন৷ সকাল থেকেই ঈদের নামাজে আসা মুসল্লিদের চাপ সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে৷
নামাজের সময়সূচি
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদ-উল-ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়৷ এরপর ধাপে ধাপে সকাল পৌনে ১১টা পর্যন্ত পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়৷ এছাড়া জাতীয় ঈদ্গাহে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায়৷
দুই বছর পর জাতীয় ঈদ্গাহে নামাজ
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরের চারটি ঈদ লকডাউনের মধ্যে পড়েছিল৷ সামাজিক দূরত্ব এবং বিধিনিষেধের কারণে হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদ্গাহে ঈদের কোনো জামাত অনুষ্ঠিত না হলেও এবার নামাজের আয়োজন করা হয়েছে৷ এবার জাতীয় ঈদ্গাহ ময়দানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লিদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
স্বস্তির ঈদ
জাতীয় ঈদ্গাহে ছেলেসহ দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় পরে ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন পেশায় আইনজীবি মোঃ শিপু কাজী৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনার কারণে মানুষ এতদিন নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিল৷ আমরা কেউ কারো বাসায় ঘুরতে যেতে পারতাম না৷ দুই বছর পর এই স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া৷’’
নারীদের জন্য নামাজ পড়ার পৃথক ব্যবস্থা
হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদ্গাহ ময়দানে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা ছিল৷ সেখানে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার নারীর নামাজের ব্যবস্থা ছিল৷
করোনা থেকে মুক্তিলাভের দোয়া
ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের অনেকেই নামাজ শেষের দোয়াতে কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ কী দোয়া করলেন জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘করোনার কারণে গত ২ বছর মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তদের নাভিশ্বাস অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেরই প্রিয়জন মারা গিয়েছে৷’’ তাই আল্লাহর কাছে তার দোয়া, করোনা থেকে যেন সবাইকে মুক্তি পায়৷
কঠোর নিরাপত্তা
লকডাউন অথবা করোনার বিধিনিষেধ এবার না থাকলেও জাতীয় ঈদ্গাহ এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতা দেখা গিয়েছে৷ পুলিশ এবং র্যাব একাধিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে নজরদারি করেছে এবং র্যাবের একাধিক হেলিকপ্টার আকাশে উড়তে দেখা গিয়েছে৷ পুলিশের পক্ষ থেকে মুসল্লিরা যেন জায়নামাজ এবং ছাতা ছাড়া আর কিছু সঙ্গে না আনেন সে ব্যাপারেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷
‘আমগোরে কিছু সালামি দিয়া যান’
ঢাকার পল্টন মোড়ে গিয়ে দেখা যায় সড়ক বিভাজকের উপর কয়েকজন গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন৷ প্রতিবেদককে দেখে সেখানে বসবাসকারী মোঃ জসিম নামের একজন বলেন, ‘‘আপনেরা তো বেতন-বোনাস পাইসেন, আমগোরে কিছু সালামি দিয়া যান৷ এই ঈদে আমরা কিছু পাই নাই কারো থেকে৷’’ পেশা জানতে চাইলে তারা বলেন, রাস্তা থেকা কাগজ-প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করেন ওই ব্যক্তিরা৷
ভিক্ষুক বেড়েছে
ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ আদায় করতে গিয়ে জাতীয় মসজিদ ও ঈদ্গাহসহ বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শত শত ভিক্ষুক হাত পাতছেন৷ মোঃ তারেক আমিন নামের একজন মুসল্লি ভিক্ষুকদের ব্যাপারে প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘সম্প্রতি ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে৷’’ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘করোনার ফলে অনেকে কাজ হারিয়েছেন, তাছাড়া জিনিসপত্রের যা দাম, মানুষ বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামছেন৷’’
ঝড়-বৃষ্টি
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ঈদ-উল-ফিতরের দিন সকালে বৃষ্টি এবং কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে৷ ভোর থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল৷ সকাল নয়টায় হালকা বৃষ্টি শুরু হয়৷ পরে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ মুষলধারে বৃষ্টি হয়৷ নামাজ শেষে অথবা নামাজে এসে অনেক মুসল্লিই বৃষ্টিতে ভিজে যান৷
একসঙ্গে ঘোরা
ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের লেডিস ক্লাব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকালের ফিরনি-সেমাই খাওয়ার পর ঘুরতে বেরিয়েছেন তিন ভাই-বোন৷ কোনো অভিভাবক ছিল না তাদের সঙ্গে৷ কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে আসমা, জাকারিয়া এবং স্বপ্না বলেন, ‘‘আমাদের বাসা এই এলাকায়৷ বেশি দূর যাব না৷ এই বড় রাস্তা পর্যন্ত ঘুরেই বাসায় চলে যাব৷ বাবা বলেছে বিকালে পার্কে ঘুরতে নিয়ে যাবে৷’’