ঈদের ছুটিতে সরকারি হাসপাতাল যেভাবে চলবে
২৮ এপ্রিল ২০২২হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সেবা যথারীতি চলবে। তবে ঈদের সময় ভর্তি রোগির সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমে যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। যাদের হাসপাতালে একদম না থাকলেই নয় তারা ভর্তি থাকেন। এরইমধ্যে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে বলে ঢাকার কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে।
গত দুই বছর করোনার কারণে চিকিৎসক ,নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাধারণভাবে কোনো ঈদের ছুটি দেয়া হয়নি। বিশেষ বিবেচনায় দেয়া হয়েছে। এবার সেই বাধ্যবাধকতা নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা হলো হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চিকিৎসা স্বাভাবিক রাখতে যত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী দরকার সেই সংখ্যক রাখতে হবে। জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে আর বহির্বিভাগ ছুটির তিন দিনে কমপক্ষে একদিন খোলা রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ( হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. বেলাল হোসেন জানান,"এবার চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা ঈদে ছুটি পাচ্ছেন। তবে চিকিৎসা সেবায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার নীতি হলো আউটডোর পর পর তিন দিন বন্ধ থাকতে পারবে না। জরুরি বিভাগ ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে হবে। আর হাসপাতালে যত রোগী থাকবে সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এবার তাই ঈদে ওই নীতি অনুযায়ী হাসাপাতালগুলোকে জরুরি রোস্টার করতে বলা হয়েছে। ঈদের সময় সেভাবেই হাসপাতাল চলবে।”
তিনি বলেন,"এখন করোনা সংক্রমণ তো একদম কমে গেছে। তাই করোনা বেডগুলোকে জেনারেল বেড করা হয়েছে। তবে ঈদের মধ্যে যদি ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি হয় আমরা তখন আমরা জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি । এসব হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩১৬টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৫টি, যেখানে মোট বেডের সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭টি। সরকারি স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ২৫ হাজার ৬১৫ জন। আর চিকিৎসক, সেবিকা ও নানা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল কর্মী মিলে মোট জনবল ৭৮ হাজার ৩০০ জন।
রোগীর তুলনায় বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। আর ঈদসহ টানা ছুটির সময় চিকিৎসা ব্যবস্থায় আরো সংকট তৈরি হয়। বিশেষ করে দুই ঈদের সময়ে অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে রোগীরা হাসপাতাল ছাড়েন।
তবে ঢাকার বড় সরকারি হাসপাতালের একটি মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজি মো. রশীদ উন নবী বলেন," ঈদের সময় রোগী কমই থাকে। কেউ হাসপাতালে ঈদ করতে চায় না। যারা থাকেন তাদের না থেকে উপায় থাকেনা। এখনই রোগী কমতে শুরু করেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) আমার হাসপাতলে রোগী আছে আটশ'র মতো। স্বাভাবিক সময়ে থাকে কমপক্ষে এক হাজার চারশ।”
তিনি জানান , ঈদের ছুটির সময়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য একটি জরুরি রোস্টার করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা চলবে।
তবে চিকিৎসকেরা জানান, কোনোভাবেই ৫০ ভাগের বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ঈদের সময় ছুটি দেয়া যায় না। কারণ স্বাস্থ্যসেবা সব সময়ই একটি জরুরি সেবা। আর এটা ২৪ ঘন্টার সেবা।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, তাদের হাসাপাতালে বিভাগ ভিত্তিক জরুরি রোস্টার করা হয়েছে। তাতে সর্বোচ্চ ৫০ ভাগ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ঈদের ছুটি ভোগ করতে পারবেন। তিনি বলেন,"আমরা চেষ্টা করেছি অন্য ধর্মের যারা আছেন তাদের ছুটি না দিয়ে মুসলিমদের ছুটি দিতে। তারপরও বড় একটি অংশ ছুটি পাচ্ছেন না। কারণ আমাদের তিন শিফট ম্যানেজ করতে হয়। চিকিৎসা সেবা যাতে কোনোভাবে ব্যহত না হয় আমরা সেদিকেই নজর দিচ্ছি বেশি। এজন্য ঈদের সময় মনিটরিং-এর ব্যবস্থা রেখেছি।”
এদিকে ঈদের ছুটিতে যারা বিদেশ যাবেন তাদের করোনা সার্টিফিকেটসহ সব ধরনের জরুরি সেবা চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. মশিউর রহমান। তিনি জানান,"জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালাগুলো জরুরি রোস্টারে চলবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী। এছাড়া ফেরি ও লঞ্চ ঘাট এবং বাস স্টেশনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা টিম থাকবে। এগুলো যাতে ঠিক মত হয় তা নিশ্চিত করেই ছুটি দেয়া হচ্ছে।”
বাংলাদেশে ১ মে থেকে মে দিবসসহ তিন দিনের ঈদের ছুটি শুরু হবে। যদি ঈদ ৩ মে হয় তাহলে ছুটি হবে ৪ মে পর্যন্ত।