ইয়েমেনে সংকট আরো ঘনাচ্ছে
এক মারাত্মক গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে ইয়েমেন একটির পর একটি সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে৷ কখনো অনশন ও দুর্ভিক্ষ, কখনো কলেরা মহামারী৷ সংঘাতের দাম দিচ্ছেন দেশের বেসামরিক জনগণ৷
বিপর্যয়ের মূল কারণ
জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধই হলো ইয়েমেনে একটির পর একটি সংকটের মূল কারণ৷ ২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করার অভিযান শুরু করার পর থেকে দশ হাজারের বেশি মানুষ এই সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০১৫ সালের মার্চ মাসে একটি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নির্মম অভিযান শুরু করে, যা বেসামরিক জনগণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ অভিযান আন্তর্জাতিক ভাবে সমালোচিতও হয়েছে৷
যারা অনাহারে মরছে
যুদ্ধের কারণে বেসামরিক নাগরিকদের একটি বড় অংশের কাছে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না৷ দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার’ মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন৷ অন্তত ২২ লাখ শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে৷ যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীরা যাতে ত্রাণসাহায্য প্রেরণের সুযোগ দেয়, সেজন্য জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ সৃষ্টি করতে বলেছেন৷
বাস্তুহারা
যুদ্ধে ২২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন, তাদের মধ্যে মুহাম্মাশীনের মতো প্রান্তিক গোষ্ঠীরা রয়েছে৷ এই সংখ্যালঘু উপজাতি গোষ্ঠী আদতে আফ্রিকা থেকে ইয়েমেনে আসে৷ ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও সোমালিয়া থেকে বহু মানুষ ইয়েমেনে পলায়ন করছেন, যার ফলে ইয়েমেনে ২৫৫,০০০-এর বেশি সোমালি উদ্বাস্তু অবস্থান করছেন বলে ইউএনএইচসিআর-এর বিবৃতিতে প্রকাশ৷
কলেরা
চলতি অক্টোবর মাসে ইয়েমেনে সম্ভাব্য কলেরা রোগের ঘটনা ৭৫০,০০০ ছাড়িয়ে যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন জানিয়েছে৷ এ বছর ইয়েমেনে অন্তত ২,১৩৫ জন মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন৷ রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি সাবধান করে দিয়েছে যে, বছর শেষ হবার আগে ইয়েমেনে কলেরার ঘটনা দশ লাখে পৌঁছাতে পারে৷
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূল্য দিচ্ছে যারা
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ইয়েমেনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রণাঙ্গণ বলে গণ্য করা হয়৷আরব উপদ্বীপে ইয়েমেনই আল-কায়েদার গতিবিধির মূল ঘাঁটি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে আল-কায়েদা নেতাদের বিরুদ্ধে ড্রোন ব্যবহার করে থাকে৷ এ ধরণের আক্রমণে অনেক বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷
অঙ্গহীন শিশু
সংঘাতে জর্জর দেশে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন৷ ইয়েমেনে এক কোটি দশ লাখের বেশি শিশুর মানবিক সাহায্য প্রয়োজন বলে জাতিসংঘের অনুমান৷ চলতি অক্টোবর মাসে সংস্থাটি বলেছে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ‘‘প্রায় ভেঙে পড়তে চলেছে,’’ অপরদিকে শিশুরা ‘‘অপুষ্টি, পেট খারাপ বা শ্বাসনলীর সংক্রমণের মতো প্রতিরোধ্য কারণে’’ প্রাণ হারাচ্ছে৷
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
জাতিসংঘের সমর্থিত শান্তি আলাপ-আলোচনার একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সৌদি আরব ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদি-র আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সরকারকে মদত দিয়ে যাওয়ার সংকল্প ঘোষণা করেছে৷ অপরদিকে হুথি বিদ্রোহীরা একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন দাবি করেছে৷ কিন্তু কোনো পক্ষই দৃশ্যত আপোশ করতে সম্মত নয়৷