‘ইসলামবার্গ’: যেখানে মুসলমানদের সঙ্গী ‘অপবাদ’ ও আতঙ্ক
আশির দশকে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে টম্পকিন্স নামের এই ছোট্ট গ্রামটিতে গিয়েছিলেন তাঁরা, শান্তির খোঁজে৷ আজ সেই গ্রামের মুসলিম বাসিন্দাদের আতঙ্কে দিন কাটছে৷
শান্তির খোঁজে
টম্পকিন্স আসলে নিউ ইয়র্ক শহরের ১৯০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ছোট একটি গ্রাম৷ রাস্তায় ছেলেরা খেলছে, কোথাও বা মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘ইসলামবার্গে স্বাগতম’৷ সন্ত্রাসের কোথাও কোনো চিহ্ন নেই – অথচ টম্পকিন্সের অধিবাসীদের সেই অপবাদই দেয়া হয়৷
তৃতীয় প্রজন্মের অ্যামেরিকান
বসতিটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পাকিস্তানের সুফি মওলানা শেখ মুবারিক গিলানি৷ আজ সেখানে প্রধানত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের আফ্রো-অ্যামেরিকানদের বাস৷ বাসিন্দারা গ্রামে থাকলেও, বাইরে কাজ করেন৷ ছেলেমেয়েরা বাড়িতেই পড়াশুনা করে; বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের পরিচয় শুধুমাত্র খেলাধুলার কল্যাণে৷
দরজা খোলাই থাকতো
ক্যাটসকিল পর্বতমালার গা ঘেঁষে এই গ্রাম৷ বহির্জগতের সঙ্গে একমাত্র সংযোগ একটি কাঁচা রাস্তা৷ একটি ছোট সুপারমার্কেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়৷ আর আছে একটি মসজিদ৷ কিছুদিন আগেও এখানে সব বাড়ির দরজা খোলাই থাকতো৷
‘অ্যামেরিকার দুঃস্বপ্ন’?
কয়েক বছর হলো দক্ষিণপন্থিদের নজর পড়েছে ইসলামবার্গ, অর্থাৎ টম্পকিন্স গ্রামের উপর৷ ‘ফ্রিডম ডেইলি’ নামের একটি ব্লগে দাবি করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশমতো খানাতল্লাসি চালিয়ে ইসলামবার্গে ‘অ্যামেরিকার সবচেয়ে বিভীষণ দুঃস্বপ্ন’ দৃষ্টিগোচর হয়েছে৷ আরো দাবি করা হয় যে, ইসলামবার্গে আছে একটি জিহাদি প্রশিক্ষণ শিবির৷ ‘স্নোপস’ নামের একটি ফ্যাক্ট-চেক ওয়েবসাইট অবশ্য তা ভুল প্রমাণিত করেছে৷
মোটরসাইকেল সওয়ারিদের উৎপাত
ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর শেষ পর্যন্ত আর ভুয়া খবর থাকেনি৷ ‘অ্যামেরিকান বাইকার্স এগেন্স্ট জিহাদ’ নামধারী একটি মোটরবাইক গ্যাং ইসলামবার্গে এসে ভয় দেখিয়ে গেছে৷ ২০১৫ সালে টেনেসির এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যে ইসলামবার্গের মসজিদটি পুড়িয়ে দেবার ডাক দিয়েছিল৷ মেয়র রশিদ ক্লার্ক সে কাহিনী ভালোভাবেই জানেন৷
‘এখানে কোনো সমস্যা নেই’
স্থানীয় পুলিশও সে কথা জানে৷ পুলিশ কর্মকর্তাদের এখানে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়৷ ‘‘এখানকার মানুষ সবাই মার্কিন নাগরিক৷ এরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে রয়েছেন, বসতিটি গড়ে তুলেছেন৷ বাইরের সঙ্গেও এদের যোগাযোগ আছে৷ এখানে কোনো সমস্যা নেই,’’ এপি সংবাদ সংস্থাকে এমনটিই বলেছেন পুলিশ প্রধান জেমস বার্নস৷
‘সব বাজে কথা’
‘মুসলিমস অফ অ্যামেরিকা’ সংগঠনটির মুখ্য কার্যালয় ইসলামবার্গে৷ মার্কিন সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, সংগঠনটি হলো আশির দশকের ‘জামায়াত আল-ফকরা’ অপরাধী সংগঠনের উত্তরাধিকারী৷ ‘মুসলিমস অফ অ্যামেরিকা’-র সভাপতি হুসেইন অ্যাডামস অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ত্রিশের দশক থেকে যদি এখানে জিহাদের প্রস্তুতি চলে থাকে, তবে তা আজও ঘটল না কেন?’’
অভিযোগ আর বাস্তব
‘‘ইসলামাবার্গ সন্ত্রাসীদের স্বর্গ’’– এ অভিযোগ এখানকার বাসিন্দাদের কাছে নতুন নয়৷ তবে স্থানীয় ‘হ্যানকক হেরাল্ড’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক স্যালি সেগার্স সংবাদ সংস্থা এপি-কে বলেছেন, ‘‘ওরা (মুসলমান) কোনো গোলমাল করে না, যা কিনা মফস্বলে বাস করার প্রথম শর্ত৷’’
তবু ভয় থেকেই যায়
কেননা সন্দেহ ও অভিযোগ এত সহজে দূর করা সম্ভব নয়৷ ইসলামবার্গের মসজিদে দোয়া চাইছেন আইনজীবী তাহিরাহ ক্লার্ক৷ তাঁর সেই দোয়া পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত হয়ত ইসলামবার্গের বাসিন্দারা বাড়ির কপাট বন্ধই রাখবেন৷