ইরানের পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো শিল্প
বার্লিনের একটি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ইরানের প্রাচীন শিল্পের নানা নিদর্শন। ছবিঘরে ইরানের শিল্প ইতিহাসের এক ঝলক।
দীর্ঘ ইতিহাস
বার্লিনের জেমস সিমন গ্যালেরিতে 'ইরান, ফাইভ মিলেনিয়া অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার' শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে প্রাচীন সময় থেকে আধুনিক ও বর্তমান ইরানের শিল্পচর্চার ইতিহাসের নানা দিক দেখানো হচ্ছে।
ক্লোরিট পুতুল
ইরানে আট হাজার বছর আগে নানা জনপদ গড়ে উঠতে শুরু করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধু সভ্যতার সাথে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে শিল্পভিত্তিক আদান-প্রদানও দেখা যায়। এলাম নামে ইরানের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের যাত্রা শুরু হয় খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকেই। সেই সময়ের একটি ক্লোরিট পুতুল রয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
চিত্রিত সোনার পাত্র
খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় সহস্রাব্দ থেকেই ক্যাসপিয়ান সাগর ও জাগ্রোস পর্বতমালায় মানুষের বসতি লক্ষ্য করা যায়। তৎকালীন ক্ষমতাধর রাজ্যের দৃষ্টিতে পাহাড়ের মানুষ মাত্রেই ছিল অশিক্ষিত ও বর্বর। কিন্তু সেই অঞ্চলের মানুষ গর্ব করতেন তাদের শিল্প নিয়ে। ছবিতে একটি চিত্রিত সোনার পাত্র দেখা যাচ্ছে, যা পাওয়া গেছে সেই পাহাড়ি অঞ্চলে।
দেবীর মূর্তি
হাজার হাজার বছর আগেই পারস্যের প্রযুক্তি বাকি দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল। মাটির নীচ থেকে পানি সরবরাহ করার প্রযুক্তি হোক, বা কোমল হাতে মূর্তি গড়া, সব ক্ষেত্রেই পারস্যের অভিনবত্ব চোখে পড়ার মতো। ছবিতে দ্বিতীয় শতাব্দীর একটি দেবীর মূর্তি, যেখানে স্পষ্ট উচ্চমানের কারিগরি ও বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে আদান-প্রদানের প্রভাব।
শিকারের দৃশ্য
ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে এই অঞ্চলের ক্ষমতায় আসে সাসানিদ বংশ। বর্তমান চীন, ভারত, আরব অঞ্চল, উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত ছিল এই বংশের রাজত্ব। শিল্পকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোশকতা দেওয়া হয় এই সময়ে। ছবিতে সেই সময়ের এক রাজার শিকারে যাবার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
নবম শতাব্দীর 'নীল কোরান'
সাসানিদ গোষ্ঠীকে যুদ্ধে পরাজিত করে এক আরব গোষ্ঠী, যারপর থেকে এই অঞ্চলে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় জোরোস্ট্রিয়ান ধর্মের স্থান নিতে শুরু করে ইসলাম ধর্ম। আরবি হরফের গুরুত্ব সেই সময় কতখানি ছিল, তা বোঝা যায় নীলরঙা পবিত্র কোরানের উদাহরণ থেকে।
বিখ্যাত কবি রুমির কবিতা
ফার্সি ও আরবি হরফের মেলবন্ধন নবম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে। রাজধানী বুখারাকে কেন্দ্র করে বেড়ে ওঠে চিত্র, কলা ও স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে হেরাত হয়ে ওঠে এই অঞ্চলের রাজধানী। কবি রুমি এই সময়েই খ্যাতিলাভ করেন তার বিখ্যাত 'মাথনাভি' বা অর্থবহ কবিতার মাধ্যমে।
বিশ্বের কেন্দ্রের ছবি
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে পারস্যের ক্ষমতায় আসেন সাফাভিদ বংশের রাজারা। রাজধানী ইসফাহানের বিভিন্ন মসজিদ, প্রাসাদ, বাগান ও দোকান গড়ে ওঠে বিখ্যাত নকশ-এ-জাঁহা স্কোয়ারে। নকশ-এ-জাঁহা শব্দের অর্থ 'গোটা বিশ্বের ছবি'। এই স্কয়ারটি বর্তমানে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।
ইউরোপীয় প্রভাব
এই প্রদর্শনীর আয়োজকদের মতে, ইরান ছিল এশিয়া ও ইউরোপের মাঝে সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ১৬৭৩ সালের এই ছবিটি সেই সংযোগের প্রতিকৃতি। একদিকে ফার্সি আদবকায়দার প্রভাব, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান চলাফেরা ও কেতাদুরস্ত পোশাকের ছাপ, এই দুই মিলেই ইরানের শিল্পের বেড়ে ওঠা।
বর্তমান ইরানের জন্ম
১৭৩৬ সালে সাফাভিদ রাজত্বের পতনের পর থেকে শিয়া আদর্শে গড়ে ওঠা বর্তমান ইরানের সূত্রপাত। ৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত৷