ইরাকে ইরান-মার্কিনি প্রক্সি লড়াই

কিরকুকে রকেট হামলায় মার্কিন এক ঠিকাদার নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ২৯ ডিসেম্বর ইরাক ও সিরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর ৫টি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে ২৫ জন মিলিশিয়া মারা যান৷ গোষ্ঠীটি ইরানের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়৷ একে ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙঘন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ইরাকও৷

ইরাক সরকারও এ হামলার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ঘটনা ইরাককে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের ‘প্রক্সি ওয়ারের’ কেন্দ্রে ঠেলে দিয়ে উপসাগরীয় দেশটিকে আরও সংকটে ফেলতে পারে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইসলামিক স্টেটবিরোধী আন্তর্জাতিক জোটে অবস্থান পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করতে পারে বলে সতর্কও করেছে ইরাকের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।

৩১ ডিসেম্বর কয়েক হাজার মানুষ পতাকা হাতে জড়ো হন প্রায় সব আন্দোলনের কেন্দ্র তাহরির স্কয়ারে৷ সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান দেন এবং মার্কিন অভিযানের নিন্দা জানান৷

এক পর্যায়ে কয়েক হাজার ইরাকি বাগদাদের ইরাকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকা গ্রিন জোনে ঢুকে পড়েন৷ সেখানে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন৷

গ্রিন জোনের নিরাপত্তায় ইরাকী আইনশৃঙ্খলা বাহিনি নিয়োজিত থাকলেও বিক্ষোভকারীদের তারা আটকাননি বলে অভিযোগ রয়েছে৷ ফলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে সহজেই জনতা মার্কিন দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিতে পারে৷ সেখানে তারা মার্কিন পতাকাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়৷

কিছু বিক্ষোভকারী এসময় দূতাবাসের সামনে থাকা গাড়িতে ভাংচুর চালায়৷ গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেয়া হয়৷ 

এক পর্যায়ে কিছু বিক্ষোভকারী দেয়াল টপকে দূতাবাসের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালান৷ এসময় দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত মার্কিন বাহিনী ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষুব্ধদের আটকানোর চেষ্টা করে৷

ভেতরে ঢুকতে না পেরে দূতাবাসের দেয়ালে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়৷ দূতাবাসে বাড়তে থাকে বিক্ষোভকারীদের ভিড়৷ মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে বাগদাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ জড়ো হতে থাকেন দূতাবাসের সামনে৷

আরো বিক্ষোভকারী জড়ো হওয়ায় এক পর্যায়ে কিছু ইরাকি দুতাবাসের মধ্যে ঢুকে পড়তে সমর্থ হন৷ তারা অভ্যর্থনাকেন্দ্র তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেন ও ভাংচুর চালায়৷ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ভেতরে আটকা পড়েন৷

দূতাবাস আক্রান্তের খবর পেয়ে দ্রুতই পার্শ্ববর্তী ঘাঁটি থেকে মেরিন সেনা পাঠানো হয়৷ তারা এসে স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয়৷

অবশেষে এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা দূতাবাস এলাকা থেকে বের হয়ে বাইরে অবস্থান নেন৷ পুরোটা সময় নিষ্ক্রিয় থাকা ইরাকি বাহিনী এসময় ব্যারিকেড তৈরি করে৷ দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে তৎপর হয় দমকল কর্মীরা৷

ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘কোনো প্রাণহানি বা আমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে তার জন্য ইরানই দায়ী থাকবে৷ সেজন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে৷ এটা কোনো সতর্কবার্তা নয়, এটা হুমকি৷

ট্রাম্পের হুমকির তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই লোক (ট্রাম্প) নাকি টুইট করে বলেছে, ‘বাগদাদের ঘটনার জন্য আমরা ইরানকে দায়ী মনে করি এবং আমরা ইরানকে এর জবাব দেবো৷' আপনারা কিছুই করতে পারবেন না৷''

হামলার ঘটনার পর বাগদাদে দূতাবাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার জানিয়েছেন, ৭৫০ জন সেনা তৈরি রয়েছে৷ কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের দূতাবাস ও আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হবে৷