ইরাকের নির্বাচনে এগিয়ে আলাউয়ির জোট
২৭ মার্চ ২০১০ইরাকের সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, প্রত্যাশিতভাবে কোন রাজনৈতিক দল বা জোটই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে নি৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইয়াদ আলাউয়ির নেতৃত্বাধীন ‘ইরাকিয়া' জোট নির্বাচনে ৯১ টি আসন পেয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ ধর্মীয় ও আঞ্চলিক সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে ইরাকের জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয় এই জোট৷ অন্যদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ৮৯ টি আসন৷ এর আগে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি ভোট পুনর্গণনার জন্য দাবি জানালেও তা নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন৷ তৃতীয় শক্তি হিসেবে শিয়াপন্থী জোট ৭০ টি আসন এবং কুর্দিপন্থী জোট ৪২ টি আসনে বিজয়ী হয়েছে৷ ভোট গণনার কাজ ১০০ শতাংশ শেষ হয়ে গেলেও আদালতের অনুমোদন পেলেই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে৷
সংসদে দুই প্রধান জোটের আসনসংখ্যার এত অল্প ব্যবধানের ফলে সরকার গঠনের কাজ বেশ কঠিন হবে – এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই৷ ফলাফল জানার পর আলাউয়ি টেলিভিশনে বলেন, তিনি সব গোষ্ঠীর প্রতি হাত ও হৃদয় বাড়িয়ে দিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা ইরাক গড়ার কাজে অংশ নিতে চায়, আমরা সবাই মিলে রাজনৈতিক বিভাজন ও রাজনৈতিক আঞ্চলিকতা ভুলে সেই কাজে হাত দেবো৷''
৭ই মার্চের ভোটগ্রহণের প্রায় ৩ সপ্তাহ পর এই প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হলো৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মালিকি'র জোট রাজধানী বাগদাদ ও দক্ষিণে শিয়া-প্রধান প্রদেশগুলিতে জয়লাভ করেছে৷ উত্তর ও পশ্চিমের সুন্নি-প্রধান এলাকার সমর্থন পেয়েছে আলাউয়ির ধর্মনিরপেক্ষ জোট৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিয়া হওয়া সত্ত্বেও আলাউয়ি বাকি সম্প্রদায়গুলির যথেষ্ট আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন৷ তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি ও ইরানের বিশেষ ঘনিষ্ঠ শিয়াপন্থী জোট মালিকির জোটের সঙ্গে সংযোজনের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে৷ দুই পক্ষের মধ্যে রফা হলে সংসদে বৃহত্তম শক্তি হিসেবে এই জোটই সরকার গড়ার পথে এগিয়ে যাবে৷ শিয়াপন্থী জোটের অন্যতম প্রধান নেতা ও ঘোরতর মার্কিন-বিরোধী মোকতাদা আল-সাদর এই মুহূর্তে ইরানে রয়েছেন৷
ইরাকের আগামী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে শুধু সংখ্যার হিসেবই গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ মালিকি ও শিয়াপন্থী জোট যদি পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আলাউয়িকে উপেক্ষা করে এককভাবেই সরকার গঠনের চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সুন্নিদের ক্ষোভ বেড়ে যেতে বাধ্য৷ এই ভারসাম্যে ফাটল ধরলে নতুন সরকারের পক্ষে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে৷ এমন এক পরিস্থিতিতে সরকার গঠন করতে কয়েক সপ্তাহ – এমনকি কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
শেষ পর্যন্ত যে জোটই সরকার গঠন করুক না কেন, এবারের সংসদ নির্বাচনের সার্বিক সাফল্যের ফলে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম