ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রকর রেনোয়ার দুর্লভ চিত্র প্রদর্শনী
৩০ অক্টোবর ২০১০মাদ্রিদের প্রাদো জাদুঘরে রেনোয়ার ৩১ টি তৈলচিত্রের এক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ অর্থাৎ টানা আরো প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় মাদ্রিদবাসী রেনোয়া'র চিত্রকর্ম উপভোগের সময় পাচ্ছেন৷ ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ পর্যন্ত রেনোয়ার এই চিত্র প্রদর্শনীটি চলবে৷ বলাই বাহুল্য, স্পেনে ইম্প্রেশনিস্ট ঘরানার জাঁদরেল এই শিল্পীর এটিই প্রথম প্রদর্শনী৷ আরেকটি দিক থেকে রেনোয়ার এই প্রদর্শনীটি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে – এই প্রথমবারের মতোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্ক আর্ট ইন্সটিট্যুট তাদের সংগ্রহে থাকা রেনোয়ার ৩১ টি তৈলচিত্রের সবগুলোই কিছুদিনের জন্য একসঙ্গে ধার দিয়েছে প্রাদো জাদুঘরকে৷
রেনোয়ার এই চিত্রকর্মের প্রদর্শনীতে তাঁর প্রথমদিককার কাজগুলো তো আছেই পাশাপাশি যখন তিনি তিচিয়ানো এবং রুবেনসের মতো ধ্রুপদী শিল্পীর মতো এবং ইমপ্রেশনিজমের আরো ঘনিষ্ঠ এবং উচ্চতর পর্যায়ে নিজের অবস্থানটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেসময়কারও বেশকিছু চিত্রকর্ম প্রাদো'র প্রদর্শনীটিতে রয়েছে৷ ক্লার্ক ইন্সটিট্যুটের কিউরেটর রিচার্ড জানিয়েছেন, ‘এই প্রদর্শনীতে রেনোয়া'র চিত্রকর্মের সামগ্রিক অভিব্যক্তিটিই আমরা প্রকাশ করেছি৷'
মাদ্রিদে প্রদর্শিত রেনোয়ার চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে তাঁর আঁকা পোর্ট্রেট, নারী শরীরের চিত্র, ল্যান্ডস্কেপ বা নিসর্গের চিত্র, ফুল আর বেশকিছু স্টিললাইফ বা জড়জীবনের চিত্র৷ প্রদর্শনীতে রেনোয়ার দু'টি আত্মপ্রতিকৃতিও রয়েছে৷ এর একটির কাজ ১৮৭৫ সালের দিকে শেষ করেছিলেন রেনোয়া৷ সেখানে রেনোয়া নিজেকে এঁকেছেন বলিষ্ঠ তুলির টানে৷ আত্মপ্রতিকৃতিটিতে তাঁকে অভিজাত পোষাক পরিহিত অবস্থায় পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ আর অভিজাত পোশাকে, গলাবন্ধ এবং টাই পরিহিত রেনোয়াকে অসাধারণ দেখাচ্ছে৷ এছাড়াও ইমপ্রেশনিজমের গোড়ার দিকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মের মধ্যে রেনোয়ার আঁকা ‘দ্য ব্রিজ অ্যাট শাতো'ও এই প্রদর্শনীতে রয়েছে৷ উল্লেখ্য, রেনোয়া ১৮৯২ সালে প্রাদো'র এই জাদুঘরে একবার এসেছিলেন৷
প্রাদো'র উনিশ শতকের চিত্রকলা বিভাগের প্রধান এবং এই প্রদর্শনীর কিউরেটর খাবিয়ের বারন রেনোয়ার এই চিত্রকর্মটি দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছেন, ‘এটি একটি অসাধারণ চিত্র, বিস্ময়কর কাজ, রেনোয়ার উল্লেখযোগ্য চিত্রের মধ্যে এটি একটি অবিস্মরণীয় কাজ৷ উল্লেখ্য, প্রাদো জাদুঘরকে মাদ্রিদে রেনোয়ার এই ৩১ টি চিত্রকর্মের প্রদর্শনীটির সুযোগের বিপরীতে অবশ্য হিসেব চোকাতে তাদের সংগ্রহের বেশকিছু চিত্রকর্মও ধার দিতে হবে ক্লার্ক ইন্সটিট্যুটকে৷ যেভাবে তারা রেনোয়াকে মাদ্রিদবাসীর সামনে হাজির করতে পেরেছেন, চুক্তি অনুযায়ী তেমনটিই করার কথা৷
উল্লেখ্য, বিখ্যাত ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রকর রেনোয়ার শেষ জীবনটি ছিল অত্যন্ত ক্লেশকর যন্ত্রণার৷ তিনি জটিল আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছিলেন৷ শেষের দিকে শারীরিক সমস্যার কারণে চিত্রকর্মের জন্য বসতে কিংবা তা আঁকতেও পারতেন না এই ইমপ্রেশনিস্ট ধারার পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী৷ একসময় আঁকতে বসলে যার হৃদয় প্লাবিত হতো সৃষ্টিশীলতার আনন্দে, শেষ জীবনে শারীরিক যন্ত্রণার কারণে সেই আঁকাই তাঁর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ ১৬ বছর রোগভোগের পর রেনোয়া মৃত্যুবরণ করেন ১৯১৯ সালে৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন