ইটালিতে বাংলাদেশি ও অন্য শরণার্থীদের রমজান পালন
ইটালিতে নতুন আসা শরণার্থীরা বাড়ি থেকে অনেক দূরের প্রবাসে এসে একা একা রমজান পালন করছেন৷ অনেকের কাছেই এটা একটা সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ৷ সিসিলি থেকে দিয়েগো কুপোলো’র পাঠানো ছবি ও তথ্য৷
বিদেশে রোজা
চলতি বছরে এ পর্যন্ত পুরো ইউরোপের মোট শরণার্থীর ৮৫ ভাগ এসেছে ইটালিতে৷ বেশিরভাগ শরণার্থীই ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ অনেকের জন্য প্রবাসে এটাই প্রথম রোজা৷ বিদেশে রমজান পালন করতে গিয়ে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা টের পাচ্ছেন তারা৷
বাড়ছে বাংলাদেশি
সাহারা এবং পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চল থেকে শরণার্থীরা লিবিয়া হয়ে অবৈধভাবে ইটালিতে প্রবেশ করছে৷ একইভাবে অনেক বাংলাদেশিও ইটালিতে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
বাংলায় কোরান
সিসিলিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলিম শরণার্থীদের জন্য ‘মসজিদ আর রহমান’-এর ইমাম ইসমাইল বোসনাফা মসজিদে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত কোরান রেখেছেন৷
কোনো বিরতি নেই
ইটালির দক্ষিণাঞ্চলে দুপুরে কিছুটা সময় ঐতিহ্যবাহী দোকান-পাটগুলো বন্ধ থাকে৷ কিন্তু বাংলাদেশি দোকানদাররা রোজা রেখেও দোকান খোলা রাখেন৷ ৮ মাস আগে ইটালিতে আসা মোমিন মাতুব্বর জানালেন, ‘‘আমরা ক্লান্ত হলেও দোকান খোলা রাখি৷ এটা ততটা কঠিন নয়, এটা আমাদের ধর্ম৷’’
ভেতরে প্রবেশ করার পথ
ইমাম ইসমাইল জানালেন, ‘‘সিসিলিতে সেই সব শরণার্থীই থাকেন, যারা অন্য কোথাও কাজ পান না৷ এসব শরণার্থীকে সাহায্য করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি৷ তবে এ কাজের জন্য সময় ও অর্থ কম৷ তাই আমরা তাদের অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়ার চেষ্টা করি৷’’
ইউরোপে খাপ খাওয়ানো
রমজানে রোজা রাখেন মুসলিম সম্প্রদায়, পাশাপাশি একসাথে নামাজও পড়েন৷ ফলে বিদেশের মাটিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা মেলবন্ধন হয়৷ নাইজেরিয়া থেকে আসা গালাডিমা জানালেন, ‘‘আমার কাছে সবচেয়ে বিস্ময়ের যে বিষয়টি, তা হলো ইউরোপে এই মাসটাতে একই মানুষকে বার বার দেখতে পাবেন আপনি, যদিও আপনি তাদের চেনেন না৷ ’’
দীর্ঘ সময়
যেসব মুসলিম ইউরোপে প্রথম এসেছেন, সংস্কৃতির ভিন্নতা নিয়ে তাঁদের যতটা না সমস্যা হয়, তার চেয়ে বেশি সমস্যা হয় সময় নিয়ে৷ ভৌগোলিক কারণে গ্রীষ্মে ইউরোপে দিন অনেক বড়৷ তাই রোজার সময়টাও অনেক বেড়ে যায়৷ গালাদিমা জানালেন, ‘‘ভোর ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে– ভাবতেই পারিনি৷’’
সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব
২৮ বছরের পাকিস্তানি এই যুবক জানালেন, ‘‘রমজান মাসে যখন আমার মসজিদে থাকার কথা, তখন আমি রাস্তায় কাটাচ্ছি৷ এখানকার সংস্কৃতি আমাদের চেয়ে অনেক ভিন্ন৷ ইটালি ইসলামিক দেশ নয়৷ আমি খ্রিষ্টান নই৷ কিন্তু একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এটা কোনো বিষয় নয়৷’’
খাবারে ভিন্নতা
অনেক অভিবাসী রমজান মাসে বাড়ির তৈরি বিশেষ খাবারগুলোর অভাববোধ করেন৷ প্রবাসে রমজান মানেই ইফতারে ভিন্ন রকম খাওয়া অভ্যাস করা৷ আফ্রিকানরা মুরগী আর ভাত খান৷ সাংস্কৃতিক মধ্যস্থতাকারী ইসমাইল জামেহ জানালেন, ‘‘তারা জানেন না মাংসের বল বা মিটবল কী জিনিস৷ এমনকি আমি যখন প্রথম এসেছিলাম পাস্তা আমার মোটেও ভালো লাগতো না৷’’
একাকীত্বের জ্বালা
লিবিয়া থেকে সম্প্রতি আসা কিশোর মালা জানালেন, ‘‘রমজানের দিনগুলোতে আমরা দেশের কথা ভাবি আর ভীষণ একাকীত্ব বোধ করি৷ পরিবার ছাড়া এটা আমার প্রথম রমজান৷ ইটালিতে আমরা বিদেশি এবং নতুন দেশে কিছু চাপের মধ্যে থাকতে হয়৷ কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের হলো, পরিবারকে ছেড়ে থাকা৷’’