1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজইউক্রেন

ইজিউমের গণকবরে অত্যাচারের চিহ্ন

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

কবর থেকে বার করা হচ্ছে একের পর এক দেহ। প্রতিটি শরীরে অত্যাচারের চিহ্ন স্পষ্ট। দেখে এলেন ডিডাব্লিউয়ের প্রতিনিধি ইমানুয়েল শেজ।

https://p.dw.com/p/4H2Xt
ইউক্রেন
ছবি: Emmanuelle Chaze/DW

খারকিভ শহর থেকে বেশ খানিকটা রাস্তা পার হলে শুরু হয় জঙ্গল। পাইনের জঙ্গল দূর থেকে দেখতে অপূর্ব। সেই জঙ্গলের পথেই কবরস্থান। সেই জঙ্গলেরই একটি বড় অংশ জুড়ে মাটির উঁচু উঁচু ঢিপি হয়ে আছে। খানিকটা কাছে গেলে বোঝা যায়, মাটি কাটা হয়েছে সেখানে। সাদা পোশাক পরে একদল মানুষ সেই মাটির নীচ থেকে তুলে আনছেন একটার পর একটা মৃতদেহ। তুলে দেয়া হচ্ছে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা দুইটি ট্রাকে। ট্রাকের সামনে লেখা '২০০'। সেনাবাহিনীতে মৃতদেহের কোড ২০০।

যুদ্ধের আতঙ্ক নিয়ে ইউক্রেনে স্কুলে ফিরছে শিশুরা

কোদালের শব্দ, দেহ তোলার কসরত, পাইন পাতার হওয়ায় ঘসটানি ছাড়া এলাকায় আর কোনো শব্দ নেই। মাঝে মাঝে ক্যামেরার শাটারের শব্দ মনে করিয়ে দিচ্ছে, একদল সাংবাদিকও এলাকায় পৌঁছেছেন। সকলেই স্তব্ধ ওই গণকবরেরসামনে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল ৪৪০টি দেহ আছে। যারা কবর খুঁড়ছেন, তারা জানালেন, ৪০০ তো আছেই। তার চেয়েও বেশি কি না, খুঁজে দেখতে হবে। নানা মাপের চৌকো চৌকো খোপ কেটে খুব সাবধানে তুলে আনা হচ্ছে দেহগুলি।

ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে আছে। তবে দেহ তোলার জন্য তারা সাহায্য নিচ্ছে দমকলের। দমকলকর্মীরা মাপ করে কবর খুঁড়ে দেহ বার করছেন। ফরেনসলিক দল প্রাথমিকভাবে কবরের ভিতরেই দেহের পরীক্ষা করছে। এরপর দেহ তুলে দেওয়া হচ্ছে ট্রাকে। বাকি পরীক্ষা হবে মর্গে।

তেমনই এক দেহ তোলার পর সাংবাদিকদের ডাকা হলো। যাকে তোলা হয়েছে, তার বয়স ৮০ পেরিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। হাত দুইটি পিছমোড়া করে বাঁধা। থাইয়ের কাছে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন। পিঠের হাঁড় ভাঙা। মাথায় ধারালো ভারী অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলেই মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষা এগোতে থাকে। কথা হারিয়ে ফেলেন ফরেনসিক চিকিৎসক। আরো এক আঘাতের চিহ্ন দেখে ছিটকে যান খানিক দূরে। বসে পড়েন পড়ে থকা এক গাছের ডালের উপর। অত্যাচারের শেষ বিশ্লেষণটুকু অব্যক্ত থেকে যায়। ফের স্তব্ধতা গ্রাস করে গোটা এলাকাকে।

এখনো পর্যন্ত ১৬ জন সামরিক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে ওই কবর থেকে। তাদের প্রত্যেককেই খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। অধিকাংশ দেহই বেসামরিক মানুষের। বুচার ঘটনার পর ইউক্রেন আন্তর্জাতিক আদালতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করেছিল। ইজিউম থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই মামলায় এই গণকবরের কাহিনিও জুড়ে দেওয়া হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফের বিশ্বনেতাদের কাছে রাশিয়ার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ইজিউমের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের একাধিক দেশ এর নিন্দা করেছে। রাশিয়া এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

ইজিউমের ওই কহবরের কাছে দাঁড়িয়ে এই বাদপ্রতিবাদের কোনো আভাসই মেলে না। সেখানে একটার পর একটা দেহ কেবল উঠতে থাকে ট্রাকে। প্রতিটি দেহই একেকটি নম্বর। ডিএনএ পরীক্ষার আগে তাদের পরিচয়ও জানা যাবে না। গাছের পাতার আওয়াজ, ক্যামেরার শাটার, কোদালের শব্দ ছাপিয়ে খানিক দূরে শেলিংয়ের শব্দ শোনা গেল।

ইমানুয়েল শেজ/এসজি