1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে সবাইকে আরও খাটতে হবে: ম্যার্কেল

২৫ মে ২০১১

দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলিকে অবসর নেওয়ার বয়স বাড়াতে ও ছুটির দিন কমানোর ডাক দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্য ইউরোপীয় স্তরে সংহতির বিষয়টি নতুন করে উসকে দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/11Naw
কড়া কথা শোনাচ্ছেন ম্যার্কেলছবি: dapd

‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য' – রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাফল্যের চাবিকাঠির পেছনে এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ কিন্তু দুর্দিনে সেই ঐক্যে ফাটল ধরার দৃষ্টান্ত কম নয়৷ যেমনটা এখন দেখা যাচ্ছে ইউরো এলাকার সংকটের ক্ষেত্রে৷

Deutschland Rente mit 67 älterer Arbeitnehmer Maurer auf einer Baustelle
জার্মানিতে ৬৭ বছর বয়সে অবসর চালু হচ্ছেছবি: picture-alliance/ dpa

‘জার্মানরা কর্মঠ, গ্রিকরা অলস'

ইউরোপের প্রায় সব দেশ সম্পর্কেই কিছু প্রচলিত ধারণা রয়েছে৷ যেমন জার্মানরা কর্মঠ জাত, সবকিছু নিখুঁতভাবে না করতে পারলে তাদের শান্তি নেই৷ ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে তারপর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়৷ অন্যদিকে ইটালি, স্পেন, গ্রিসের মতো দক্ষিণের দেশের মানুষের ভাবমূর্তি একেবারে আলাদা৷ তারা বেশ হেলে দুলে সময় নিয়ে কাজ সারতে চায়৷ খেতে বসলে ওঠার নাম নেই, দুপুরে খাবার পর একটু দিবানিদ্রা না হলে চলে না – কৌতুকের সঙ্গেই দক্ষিণ ইউরোপের বাসিন্দাদের এমন একটা ছবি তৈরি করা হয়েছে এতদিন ধরে৷

জাতিগত এই বৈচিত্র নিয়ে ঠাট্টা-তামাশার রেওয়াজ যে একদিন ঝগড়া-ঝাঁটির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, এমনটা কে ভেবেছিল! গোটা সমস্যার মূলে ইউরো এলাকার সংকট৷ গ্রিস যে বছরের পর বছর ধরে হিসেব-নিকেশ জাল করে সরকারি কোষাগারের বেহাল অবস্থা গোপন রাখতে পারে, এমনটা কেউ ভাবে নি৷ কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য সেদেশের সরকারকে শাস্তি পেতে হচ্ছে৷ বেকায়দায় পড়ে সরকার সেই ব্যয় সংকোচের সিংহভাগ চাপিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের উপর৷

Symbolbild Urlaub
ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা গ্রিসছবি: picture-alliance/ ZB

গ্রিসকে নিয়ে দুশ্চিন্তা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল প্রাথমিক স্তরে গ্রিসকে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, এখন দেখা যাচ্ছে তা মোটেই যথেষ্ট নয়৷ গ্রিসের পর আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল এবং সম্প্রতি স্পেনকে নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷ বাঙালি সংসারে ‘ছোট ও অবুঝ' ভাইয়েদের দুর্বলতা ঢাকতে বড় ভাইয়ের মতো এগিয়ে আসতে হচ্ছে ইউরো এলাকার প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানিকে৷ তা সাহায্য পেতে হলে না হয় কিছু কটু কথা শুনতে হয়! যেমনটা বলেছেন জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘একেবারে কোনো ঋণ না নেওয়াটা কোনো বাস্তব সমাধান হতে পারে না৷ গ্রিস, পর্তুগাল বা স্পেনের মতো দেশে মানুষ আগেভাগেই অবসর নিতে পারবে, আর জার্মানিতে মানুষ আরও বেশিদিন কাজ করবে – এমনটা চলে না৷ সবাইকেই সমান উদ্যোগ নিতে হবে৷ একক ও অভিন্ন মুদ্রা থাকা সত্ত্বেও এক দেশের মানুষ অনেক দিন ছুটি পাবে, অন্য দেশের মানুষ কম দিন ছুটি পাবে, এই বৈষম্য দূর করতে হবে৷ বেশিদিন এমনটা চলতে পারে না৷''

Finanzminister beraten über Euro-Krise
ইউরোর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাছবি: picture alliance / dpa

বাস্তব চিত্র

এটা ঠিক, যে জার্মানিতে পুরুষরা ৬৫ বছর বয়সে অবসর নিতে পারেন, যেটা কিছুকাল পর বেড়ে ৬৭ হতে চলেছে৷ এমনকি আরও এক ধাপ এগিয়ে অবসরের সীমা ৬৯ বছরে আনার বিষয়েও আলোচনা চলছে৷ জার্মানি সহ গোটা ইউরোপে গড় আয়ু যেভাবে বেড়ে চলেছে এবং মানুষ যে হারে বেশি বয়সেও যথেষ্ট কর্মক্ষম থাকছে, তার প্রেক্ষাপটেই চলছে এই বিতর্ক৷ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে এতদিন ধরে চলে আসা অনেক অবাস্তব সুযোগ-সুবিধা যে বেশিদিন ভোগ করা যাবে না, এটা সকলেই ক্রমশ বুঝতে শুরু করেছে৷ কিন্তু কে আর স্বেচ্ছায় সেসব ছাড়তে চায়!

সমাজে পরিবর্তনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলতেই পারে, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো বিশেষ দেশ বা সমাজকে লক্ষ্যবস্তু করে সস্তার চমক দেখানো গ্রহণযোগ্য নয় – ম্যার্কেলের বিতর্কিত মন্তব্য শুনে সমালোচকরা একথা বলছেন৷ তাছাড়া সবুজ দলের প্রধান চেম ও্যজদেমির তথ্য-প্রমাণ পেশ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, যে কাগজে-কলমে যাই থাক না কেন, বাস্তবে জার্মানিতে অবসর নেওয়ার গড় বয়স ৬১.৭ এবং গ্রিসে তা ৬১.৪৷ অর্থাৎ তফাত মোটেই বেশি নয়৷ ম্যার্কেল অবশ্য ইতোমধ্যে জার্মানির মানুষের উদ্দেশ্যেও আরও আত্মত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন৷

Symbolbild Portugal Euro
জাঁতাকলের মাঝে ইউরোছবি: Detlef - Fotolia.com

ম্যার্কেলের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী লোরঁ ভোকিয়ে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত, ইউরোপীয় স্তরে সংহতির প্রয়োজন রয়েছে৷ জার্মানির অর্থনীতির জন্যও এটা গুরুত্বপূর্ণ৷ মনে রাখতে হবে, জার্মানির রপ্তানির প্রায় ৭০ শতাংশই যায় ইউরো এলাকার দেশগুলিতে৷ অর্থাৎ ইউরো এলাকায় গোলমাল হলে তা জার্মান অর্থনীতির জন্যও বড় সমস্যা৷ তবে এটাও ঠিক, যে বাকি দেশগুলিকেও এর বদলে কিছু করতে হবে৷ তাদেরও সংস্কারের কাজে মন দিতে হবে৷ প্রায় এক দশক ধরে জার্মানি বড় ধরনের সংস্কার করে দেখিয়েছে এবং বড় রকমের অগ্রগতি করেছে৷ গ্রিস, পর্তুগাল ও স্পেনকেও সেটা করে দেখাতে হবে৷''

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক