1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপজুড়ে কোভিড বিক্ষোভের কারণ কী?

১২ ডিসেম্বর ২০২১

মহামারির সবশেষ ঢেউ মোকাবিলা করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে নাগরিকরা বিক্ষোভ করেছেন৷ কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভে ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে৷

https://p.dw.com/p/449eJ
Belgien I Protest gegen die COVID-19-Beschränkungen in Brüssel
ছবি: Nicolas Maeterlinck/BELGA/picture alliance

মহামারির সবশেষ ঢেউ মোকাবিলা করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে নাগরিকরা বিক্ষোভ করেছেন৷ কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভে ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে করোনায় আক্রান্তের হার বেড়ে চলেছে৷ সংক্রমণ ঠেকাতে অনেক সদস্য রাষ্ট্রই বিধিনিষেধও কঠোর করেছে৷ এর মধ্য়ে রয়েছে কোনো কোনো পেশার জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করা, লকডাউন এবং স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা৷

কিন্তু অনেকেই এসব বিধিনিষেধে খুশি নন, এবং ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাস্তায়ও নেমেছেন তারা৷ কিন্তু এই বিধিনিষেধ মানতে না চাওয়া এবং বিক্ষোভের কারণ কী?

কোভিড বিক্ষোভ কোথায় হচ্ছে?

জার্মানি এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতেই মূলত বিক্ষোভগুলো হচ্ছে৷ অস্ট্রিয়ান পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েনায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সম্প্রতি লকডাউন এবং বাধ্যতামূলক টিকা দেওয়ার বিরুদ্ধে মিছিল করেছেন৷ কিছু বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়৷

গত সপ্তাহে বেলজিয়ামের রাজধানী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তর ব্রাসেলসে প্রায় আট হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন বিক্ষোভকারীর সংঘর্ষ হয়৷ লুক্সেমবুর্গে বিক্ষোভকারীরা একটি ক্রিসমাস মার্কেটে হামলা চালায়৷ মার্কেটটিতে টিকা না নেয়াদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল৷

নেদারল্যান্ডসেও একই ধরনের বিক্ষোভ বেড়েছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে হেগে শত শত লোক মোটরসাইকেলে আগুন দেয় এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর পাথর ও অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করে।

জার্মানিতেও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে। জার্মান রাজ্য স্যাক্সনিতে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করার পর কট্টরডানপন্থি কিছু সংগঠন ‘হাঁটার' কর্মসূচি ঘোষণা করে৷ শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা স্যাক্সনি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে মশাল নিয়ে জড়ো হয়।

ধর্মপ্রচারক থেকে শুরু করে গ্যাংস্টার

নানা ধরনের মানুষ এসব বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন- রাজনৈতিকভাবে অসন্তুষ্ট গোষ্ঠী, রাষ্ট্রবিরোধী ও টিকাবিরোধী গোষ্ঠী৷ জার্মান পাবলিক ব্রডকাস্টার জেডডিএফ এর একটি সাক্ষাৎকারে বেলজিয়ামের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ লয়ফেনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মার্ক হুগে বেলজিয়ামের বিক্ষোভকে ফ্রান্সের ‘ইয়েলো ভেস্ট' আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেন৷ তিনি বলেন, এই বিক্ষোভে ‘খুব ভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর সংমিশ্রণ দেখা গেছে, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব উদ্দেশ্য রয়েছে৷’

জার্মানির অবস্থাও একই রকম। জার্মানির জিগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ইয়োহানেস কিস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হতাশা তাদের ঐক্যের কারণ৷ এই হতাশা কেবল কোভিড নীতি নিয়ে নয়, গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিয়েও৷''

তিনি বলেন, ‘‘সব জায়গাতেই আমরা ডানপন্থি রাজনীতিবিদদের এসব বিক্ষোভ সংগঠিত করতে ও নেতৃত্ব দিতে দেখছি৷'' উগ্র ডানপন্থিরা এই বিক্ষোভ কব্জায় নিয়েছে, এমন যুক্তি তিনি মানতে নারাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা শুরু থেকেই সেখানে ছিলেন এবং বিক্ষোভকারীরাও তাতে আপত্তি জানাননি৷''

ভিয়েনায় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কট্টর ডানপন্থি আইডেন্টিটারিয়ান মুভমেন্টের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন৷ নিজেদের ওয়েবসাইটে অস্ট্রিয়ার আরেক উগ্র ডানপন্থি দল ফ্রিডম পার্টিও এসব সমাবেশের প্রচারণা চালিয়েছে। বিক্ষোভে অতি-রক্ষণশীল ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও সমর্থন রয়েছে।

কিস বলেন, ‘‘এটি সবসময়ই প্রেক্ষাপট এবং একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে৷'' উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডসে, ইভাঞ্জেলিক্যাল খ্রিস্টানদের পাশাপাশি হুলিগানরাও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে৷ ‘‘অন্যান্য দেশে কিন্তু একই ধরনের ঘটনা ঘটছে না৷’’

এমনকি দেশগুলোর মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে বিশাল পার্থক্য রয়েছে৷ বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুসারে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানিতে বিক্ষোভের মূলে রয়েছে বামপন্থি আন্দোলন, অন্যদিকে পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভকারীরা অনেকেই কট্টর ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড- এএফডির সদস্য৷

প্রতিবাদ আসলে কিসের বিরুদ্ধে?

কিস বলেন, ‘‘আসলে এর পেছনে করোনার চেয়েও বড় কারণ রয়েছে৷’’

তিনি মনে করেন ফ্রান্সে এইসব বিক্ষোভকে করোনা বিধির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এসব বিক্ষোভ মূলত ‘মাক্রোঁ এবং তার রাজনৈতিক ধরনের বিরুদ্ধে৷' নেদারল্যন্ডসেও বিক্ষোভগুলো সরকারের সমাজ বিষয়ক নীতির সমালোচনার সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ কিস বলেন, ‘‘এর পেছনে যেসব ক্ষোভ কাজ করছে, তাকে আপনি স্বীকার করতে পারেন না৷’’ সাক্সনিতেও বিক্ষোভের মূলে ছিল রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের বিষয়ে অতৃপ্তি৷ কিসের মতে, ‘‘সেখানে রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা শূন্যের কোঠায়৷’’

ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সমাজবিজ্ঞানী আক্সেল সালহাইসার বলেন, ‘‘চরম ডানপন্থিরা রাষ্ট্রবিরোধী চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।’’

স্টেফানি হুপনার/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য