1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউটিউবে হিন্দুত্ববাদীদের জোরালো প্রচার

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ নভেম্বর ২০১৮

সাম্প্রতিক কালে ইউটিউবের বিভিন্ন চ্যানেলে কয়েকজন পপশিল্পীর গান জনপ্রিয় হয়েছে৷ এই গানের মাধ্যমে হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের জোরালো প্রচার চলছে৷ এই প্রচারের বিপরীতে উদারপন্থিরা নিষ্ক্রিয়, নিষ্প্রভ৷

https://p.dw.com/p/38oB2
BdW Global Ideas Bild der Woche KW 34/2016 Indien Janamashtami Festival in Neu Delhi
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Gupta

জনসভা কিংবা বাড়ির দরজায় ঘুরে ঘুরে প্রচার এখন সাবেকি ধারণা৷ এখন অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারের শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ বিপণনের ক্ষেত্র বিস্তৃত করার জন্য শিল্পীরা তাঁদের অ্যালবাম প্রকাশ করছেন ইউটিউবে৷ একে হাতিয়ার করে গানের মাধ্যমে চলছে প্রচার৷ ইউটিউবে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন লক্ষ্মী দুবে, সন্দীপ চতুর্বেদি, সঞ্জয় ফৈজাবাদি, নরোত্তম রঙ্গের মতো শিল্পীরা৷ এঁদের সংগীত মূলত প্রচারমূলক৷ প্রত্যেকেই হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের পক্ষে গান বেঁধেছেন৷ এই গানে কখনো ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার দাবি উঠছে, কখনো বলা হচ্ছে ইতিহাস থেকে মোঘল সম্রাট বাবরের নাম মুছে ফেলতে হবে৷ কখনো গানে নিশানা করা হচ্ছে কোনো বিশেষ সম্প্রদায় বা রাষ্ট্রকে৷

সংগীত উৎকর্ষের বিচারে এগুলি কতটা মানোত্তীর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে৷ তবে তার থেকেও বড় প্রশ্ন উঠছে গানের বক্তব্য ঘিরে৷ এই গানগুলিতে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ সামনেই লোকসভা নির্বাচন, তার আগে এই প্রচারের পিছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘অতীতে আমরা এক ধরনের তাত্ত্বিক হিন্দুত্ব দেখেছি৷ এখন দেখছি কর্পোরেট হিন্দুত্ব৷ এখানে রাজনীতিও পণ্য হয়ে উঠেছে৷ তারই অঙ্গ হিসেবে সোশাল মিডিয়ায় এমন প্রচার চালানো হচ্ছে৷''

‘পশ্চিমবঙ্গের মসজিদ বিষয়ে এমন অভিযোগ আমি পাইনি’

যদিও শিল্পীদের বক্তব্য, তাঁরা নিজেদের ধর্মের প্রচার করছেন৷ লক্ষ্মী দুবে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি আমার ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার করছি৷ এতে অন্যায় কী আছে? রামের গান গাইতে আপত্তি থাকার কথা নয়৷ আমি চাই হিন্দুদের মধ্যে একতা গড়ে উঠুক৷'' কেন ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে এই গান শোনানোর কথা ভাবলেন তিনি? লক্ষ্মী বলেন, ‘‘অনেকগুলি বিষয় আমি দেখেছি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময়৷ মসজিদ, মাদ্রাসায় অস্ত্র মজুত রাখা হচ্ছে৷ হিন্দু মেয়েদের ক্ষতি করা হচ্ছে৷ কারো বন্দেমাতরম্ বলতে আপত্তি৷ তাই মনে হয়েছে, দেশভক্তির প্রচার করা দরকার৷''

এই অভিযোগ কতটা সত্যি? রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষকর্তা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমি এ ধরনের কোনো অভিযোগের কথা শুনিনি৷ আমার সহকর্মীরাও শুনেছেন বলে জানি না৷ অন্য রাজ্যের কথা বলতে পারব না৷ তবে এটাও ঠিক, আমি জানি না বলে অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে, সেটা বলতে পারব না৷'' বছর তিনেক আগে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে এমন মাদ্রাসার খোঁজ মেলে, যাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি গতিবিধি চলছিল৷ এ ব্যাপারে নজরুলের বক্তব্য, ‘‘এমন অনেক মাদ্রাসা রয়েছে, সেখানে শুধু ইসলামি ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয়৷ এগুলি সরকারি স্বীকৃতিহীন খারিজি মাদ্রাসা৷ তবে শুধু মাদ্রাসা কেন, স্কুলেও অস্ত্র উদ্ধারের দৃষ্টান্ত রয়েছে৷''

কর্পোরেট হিন্দুত্ব

মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচারে লক্ষ্মীকে দেখা গেলেও তাঁর দাবি, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিনি গান শোনাচ্ছেন না৷ বছর তিরিশের এই নারীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি হিন্দুদের হিতৈষী৷ তাই ওদের পক্ষে দাঁড়িয়েছি৷ যদি ওরা কখনো হিন্দুদের বিরুদ্ধে কাজ করে, তখন ওদের বিপক্ষেই থাকব৷ রাজনীতি নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই৷''

গান নিয়ে যে বিতর্কই থাক, ইন্টারনেটে তা বিপুল জনপ্রিয় হয়েছে৷ লক্ষ্মীর কোনো কোনো গান ইতিমধ্যে ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ অনলাইনে শুনেছে৷ বজরং দলের কর্মী অযোধ্যার সন্দীপ চতুর্বেদির কট্টর জাতীয়তাবাদী গানের দর্শক কয়েক লক্ষ৷ সামরিক পোশাক পরে দর্শকদের সামনে হাজির হওয়া দিল্লির সঞ্জয় ফৈজাবাদি তাঁর গানে প্রতিবেশী পাকিস্তান, চীন কিংবা জঙ্গি হাফিজ সৈয়দকে আক্রমণ করছেন৷ প্রচুর মানুষ এই ভিডিও দেখছে৷ সংগীত হিসেবে উন্নত না হলেও কেন জনপ্রিয় এসব গান? উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সর্বভারতীয় স্তরে কর্পোরেট হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে৷ সেই শূন্যতা কাজে লাগাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা৷ তরুণ সমাজ এখন কাজের অভাবে হতাশাগ্রস্ত৷ কোনো বিকল্প না থাকায় তাদের এই প্রচার ছুঁয়ে যাচ্ছে৷''

অনেকেই মনে করছেন, তথাকথিত উদারপন্থিদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রচার সফল হচ্ছে৷ বাংলাতেও কি তার প্রভাব পড়বে? কাজি নজরুল ইসলাম, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী প্রমুখ শিল্পীরা জনচেতনার গানে এ রাজ্যের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন৷ সেই ধারায় পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পী শুভেন্দু মাইতি গেয়েছিলেন ‘মৈনুদ্দিন কেমন আছো?'৷ তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, দিশাহীন৷ তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না৷ আমি যদি আরেকটা মৈনুদ্দিন লিখে ইউটিউবে দিই, সে গান কতজন শুনবে? বামপন্থিরাই তো গান শোনে না৷ প্রতিবাদ করতে হবে মাঠে নেমে, একজোট হয়ে৷'' তবে গানের পাল্টা গানকেই হাতিয়ার করার পক্ষপাতী আরেক শিল্পী পল্লব কীর্তনিয়া৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পাল্টা গান লিখতে হবে৷ প্রচার করতে হবে৷ শুধু গান কেন, নাটকও হাতিয়ার হতে পারে৷ উদারপন্থিরা সংখ্যালঘু, অধিকাংশ মানুষের মনে ধর্ম বাসা বেঁধে থাকে৷ তাই রামনবমীর পাল্টা হনুমান জয়ন্তী পালন করছি৷ আমরা কিন্তু বলছি না, রামনবমীর উন্মাদনার বিরুদ্ধে আমাদের চেতনার সংস্কৃতি গড়তে হবে৷''

‘ওদের থেকে ভালো গান আমাদের করতে হবে’

বছর দুয়েক ধরে পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী ঘিরে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এই আয়োজনে গেরুয়া শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ তার পাল্টা হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস ব্যাপকভাবে হনুমান জয়ন্তী পালন করেছে, যা এ রাজ্যে কখনো দেখা যায়নি৷ এটা কি কট্টর হিন্দুত্বকে নরম হিন্দুত্ব দিয়ে মোকাবিলার প্রকাশ নয়? পল্লবের সুরেই অধ্যাপক উদয়ন বলেন, ‘‘তাত্ত্বিক হিন্দুত্বকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করার সুযোগ ছিল৷ কিন্তু কর্পোরেট হিন্দুত্বকে সর্বভারতীয় স্তরে মোকাবিলা করার পথ বিরোধীরা খুঁজে পাচ্ছে না৷ তাই বিজেপির পাল্টা হিসেবেই রাহুল গান্ধী এখন মন্দিরে মন্দিরে যাচ্ছেন৷ তিনিও হিন্দুভোট হারানোর ভয় পাচ্ছেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য