1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ নভেম্বর ২০২২

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সঙ্গে পার্টনারশিপ কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ এই চুক্তির ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল৷

https://p.dw.com/p/4K4zM
বাংলাদেশ ও ইইউর পতাকা
বাংলাদেশ ও ইইউর পতাকাছবি: Viacheslav Chernobrovin/Zoonar/picture alliance

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ইইউ'র সাথে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়৷ সংলাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷ ইইউ'র পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইইউ'র বৈদেশিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমহাসচিব এনরিকে মোরা৷ সংলাপে দুই পক্ষই পার্টনারশিপ কো-অপারেশন চুক্তি করতে সম্মত হয়৷

বৈঠকের মাঝামাঝি সময়ে যৗথ সংবাদ সম্মেলনে ওই চুক্তি সুবিধাজনক যে কোনো সময়ে করা হবে বলে জানানো হয়৷ এই চুক্তি হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

আলোচনা ও চুক্তি নিয়ে যা বললেন

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ইইউ নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আমাদের কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে, যার মধ্যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, ইন্টারনেট সিকিউরিটি, অর্গ্যানাইজড ক্রাইম, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মতো বিষয় রয়েছে৷’’

বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক, নিরাপত্তা ও প্রত্যাবাসনের দিক নিয়েও আলোচনা হয়৷

এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশসহ জাতিসংঘের সদস্য বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক, ইউক্রেন যুদ্ধ,খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কিভাবে আরো সুসংহত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়৷

ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান এনরিকো মোরা বলেন, ‘‘আমাদের সম্পর্ক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি, যার মূল ভিত্তি গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার৷ সামনে আমরা অংশীদারিত্ব সহযোগিতা চুক্তি করবো৷’’ গত ১০ বছরে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘মূলত দুটি কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চায় ইইউ৷ এক. বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুই. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান৷’’ তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ইন্দো-প্যাসিফিক কিংবা রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধসহ কোনো ইস্যুতেই বাংলাদেশের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না ইইউ৷ বরং ঢাকার স্বাধীন সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে৷’’

বাণিজ্য- বিনিয়োগ

সম্প্রতি ‘স্ট্রেংদেনিং বাংলাদেশ-ইউ ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন: ইস্যুজ অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজ’ শিরোনামে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউরোপের ২৭ দেশে বছরে বাংলাদেশ এখন ২৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে৷ এর পরিমাণ আরো ১৮ বিলিয়ন বাড়ানো সম্ভব সক্ষমতা ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়িয়ে৷ ২০০০-২০০১ সালে ইউকে এবং ইইউতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি ছি ২.৫ বিলিয়ন ডলারের৷ গত ২০-২১ বছরে তা এখন ১০ গুণ বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের শতকরা ৯০ ভাগই তৈরি পোশাক৷

আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে নেট এফডিআই প্রবাহ গত পাঁচ বছরে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এই সময়ের মধ্যে মোট এফডিআই প্রবাহের প্রায় এক চতুর্থাংশ৷

এই সময়ে সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এই বিষয়গুলো যে-কোনো দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ: ড. সেলিম রায়হান

উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি জ্ঞান দরকার

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার৷ আমরা সেখানে এখন যে বাণিজ্যিক সুবিধা পাই, তা ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করার পর আরো তিন বছর পাবো৷ তবে আমাদের রপ্তানি পণ্যের অধিকাংশই হলো গার্মেন্ট প্রোডাক্ট৷ এখানে বৈচিত্র্য দরকার৷ সহযোগিতা চুক্তির ফলে আমরা যদি উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিজ্ঞান পাই, তাহলে সেটা আমাদের জন্য অনেক লাভজনক হবে৷ আমাদের পণ্যের মান বাড়ানো এবং পণ্যের ভ্যারিয়েশন বাড়ানো সম্ভব হবে৷ আর বিনিয়োগ আমরা আকৃষ্ট করতে পারবো৷’’

তার কথা, ‘‘এই সময়ে সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র- এই বিষয়গুলো যেকোনো দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ৷ এটা কোনো চুক্তিতে থাকা না থাকার বিষয় নয়৷ অবশ্যই বাংলাদেশকে নিজের প্রয়োজনেই এই বিষয়গুলোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে৷ ইইউ এটা খেয়াল রাখবে৷’’

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের প্রতি সারা বিশ্বেরই আগ্রহ বাড়ছে: শহীদুল হক

বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন, ‘‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের প্রতি সারা বিশ্বেরই আগ্রহ বাড়ছে৷ ইইউর যেমন আগ্রহ আছে, আগ্রহ আছে অ্যামেরিকার, চীনেরও আগ্রহ আছে৷ তাই সব দিক বিবেচনা করে আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে৷ এটাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের জোট বা গ্রুপ হচ্ছে৷ আমাদের জোর দিতে হবে অর্থনীতির বিষয়ে৷ নতুন কোনো কোল্ড ওয়ারে আমরা যেন জড়িয়ে না পড়ি৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এটাকে টেকসই করতে হলে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকারের উন্নয়ন করতে হবে৷ আর এই সহযোগিতা চুক্তি থেকে সুফল পেতে হলে আমাদের এর উন্নয়ন ঘটাতে হবে৷’’

প্রসঙ্গত, ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইইউ'র সঙ্গে এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান এবং জোট হিসেবে আসিয়ানের অংশীদারিত্ব সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে৷