আহা-উহ্ না, কাজ দেখতে চাই
১১ জুলাই ২০১৯গতবছর প্রায় একই সময়ে কুতুপালং গিয়েছিলেন জাতিসংঘের বর্তমান সভাপতি আন্তোনিও গুতেরেস৷ তিনি আবার প্রায় এক দশক জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ছিলেন৷ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুখে মিয়ানমারের রাখাইনে তাঁদের উপর নৃশংস অত্যাচারের কথা শুনে নিজের হতবিহ্বল হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন গুতেরেস৷
স্বয়ং জাতিসংঘ মহাসচিবের মনের এমন অবস্থার কথা জানার পর রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অগ্রগতি হবে বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ৷ কিন্তু এখনও একজন রোহিঙ্গারও রাখাইনে ফিরে যাওয়া হয়নি৷
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷ ঐ বছরেরই নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ এর দুই মাস পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বলা হয়, দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে৷ সেই দুই বছর শেষ হতে বাকি আর মাত্র ছয় মাস!
গুতেরেসের মতো এর আগে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে ও তাঁদের বর্তমান দুর্দশা দেখে কষ্ট পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বিশ্বের অনেক রথি-মহারথি৷ এই তালিকায় আছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো, নোবেলজয়ী তিন নারী ইরানের শিরিন এবাদি, আয়ারল্যান্ডের মারেইড ম্যাগুয়ার ও ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান, হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসির প্রতিনিধিদল, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এরদোয়ানসহ আরও অনেকে৷
কিন্তু যে কাজটি করলে রোহিঙ্গারা শান্তি পেতেন, বাংলাদেশের জন্যও ভালো হতো সেটি হচ্ছে না৷ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না৷
এ বিষয়ে যে দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেটি হচ্ছে চীন৷ কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে জাতিসংঘে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে চীন ও রাশিয়া তাতে বাধা দিয়েছে৷ কারণ চীন মনে করে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলাই এর প্রথম সপ্তাহে চীন সফর করেছেন৷ সেই সময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান তিনি৷ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী জানান, সমস্যার সমাধানে চীনের যা করণীয়, তা করা হবে বলে চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন৷ ফলে আবারও আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে বাংলাদেশ৷
কিন্তু শুধু আশ্বস্ত হয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ চীন যেন তার আশ্বাস পূরণে কাজ করে সেই চেষ্টা বাংলাদেশকে চালিয়ে যেতে হবে৷ কারণ চীন যতই বলুক সমস্যার সমাধান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের হাতে, কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি যাঁরা বোঝেন তাঁরা জানেন, সমাধানে অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে৷