আহত আফগান যোদ্ধাদের কষ্ট
গত বছর প্রায় ১২ হাজার আফগান সৈনিক ও পুলিশকর্মী কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তার মূল্য দিয়েছেন কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়ে – হাত, পা কিংবা চোখ৷ আজ তাঁরা প্রতিবন্ধী, অথচ সরকার বা সমাজের তরফ থেকে সাহায্য আসে অতি সামান্যই৷
অস্ত্রোপচারের পর
২০১৫ সালে কুন্দুসে আহত হবার পর আফগান সৈনিক আবদুল রকিমকে চিকিৎসার জন্য কাবুলে দেশের বৃহত্তম সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ সেখানে তাঁর দু’টি পা-ই কেটে বাদ দিতে হয়৷ এছাড়া তাঁর কোমরের কাছ থেকে একটি গোলার টুকরো অস্ত্রোপচার করে বার করে নিতে হয়৷ সারা দেশে আফগান সেনাবাহিনীর ছ’টি হাসপাতাল আছে; আরো দু’টি তৈরি করা হচ্ছে৷
দেশের সেবায়
মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র এ বছরের প্রথম চার মাসে আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর ৪,২৩৮ জন সদস্য আহত ও আরো ২,৫৩১ জন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে নিহত নিরাপত্তাকর্মীদের সংখ্যা ছিল মোট ৭,০০০; আহত হয়েছিলেন প্রায় ১২,০০০৷
‘শুধু’ একটা পা কাটা গেছে
কাবুলের সামরিক হাসপাতালে সৈনিক সেফাতুল্লাহ৷ তাঁর কপাল ‘ভালো’ – কুনার প্রদেশে তালেবানের রাখা একটি মাইনবোমার উপর পা ফেলে শুধু তাঁর ডান পাটা হাঁটুর নীচে অবধি জখম হয়৷ দেশে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলে অনেক আহত সৈনিক জমি-জমা বেচে বিদেশে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন৷
যাদের কপাল আরো ‘ভালো’
যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েছেন, এমন কিছু আফগান সৈনিক কাবুলে আফগান সেনাবাহিনীর একটি স্পোর্টস হলে ক্যানাডার ইনভিক্টাস গেমস-এর জন্য প্র্যাকটিস করছেন৷ সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধী সেনাসদস্যদের জন্য এই ইনভিক্টাস গেমস একটি বিশেষ সুযোগ৷ কিন্তু আফগানিস্তানে অঙ্গহানির পরে যে সব সৈন্য সরকারের সাহায্য পেয়ে থাকেন, তাঁদের এক হিসেবে ভাগ্যবান বলা চলে৷
বেঁচে থেকে লাভ?
মতিউল্লাহ ২০০৯ সালে কান্দাহারে গুরুতরভাবে আহত হন৷ অঙ্গচ্ছেদের পর তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন৷ পরে তিনি একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখেন, অন্যান্য দেশের প্রতিবন্ধীরা কি করতে পারেন ও নিজের সাহস ফিরে পান৷ মতিউল্লাহ আজ ‘‘বীরদের জন্য সাহায্য’’ নামের একটি এনজিও-র হয়ে কাজ করেন৷ তবে এখানেও তিনি ব্যতিক্রম, কেননা তিনি স্কুল পাস, তাঁর পরিবার তাঁকে সাহায্য করে থাকে ও তাঁর বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা৷
একেবারে একা সম্ভব নয়
শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সাবেক আফগান সৈন্য ও পুলিশকর্মীকে একাই নিজেদের পথ করে নিতে হয়, কেননা তাঁরা প্রায় কোনোরকম সাহায্য পান না৷ তাঁদের অনেকেই লেখাপড়া জানেন না; অপরদিকে তাঁরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকেও তাঁদের কিছু জানানো হয় না৷
হাসপাতালে জায়গা কুলোয় না
অধিকাংশ ন্যাটো সৈন্য বিদায় নেওয়ার পর দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দায়িত্ব প্রায় পুরোপুরি আফগানিস্তানের উপর এসে পড়েছে – যার একটি ফল: ক্রমেই আরো বেশি নিরাপত্তাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হচ্ছেন৷ আফগান সেনাবাহিনীর ছ’টি হাসরাতালে আর আহতদের জায়গা হচ্ছে না৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা সামর্থ্যও আফগানিস্তানের নেই৷