আসা যাওয়ার মাঝে আটক রোহিঙ্গারা
২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে দাঙ্গার পর নতুন করে অনিশ্চিত হতে শুরু করে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত৷ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বর্তমানে আবার অনিশ্চিত বাংলাদেশের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবন৷
নাগরিকত্বের প্রশ্ন
ধর্মীয় সংখ্যালঘুত্ব, ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অস্পষ্ট নাগরিকত্ব- মূলত এই তিন কারণেই চাপের মুখে দেশ ছাড়তে শুরু করেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর মানুষ৷ ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে দাঙ্গা বাধে, ফলে চাপ আরো ঘনীভূত হয়৷ ১৯৯০র দশক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা দেশছাড়া, বলছে জাতিসংঘ৷
বিশ্বের নজরে রোহিঙ্গা নৌকা
২০১৫ সালে ঘরছাড়া রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে আশ্রয়ের খোঁজে বের হয়৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি তোলে৷ একই সময়, ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ পত্রিকা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতির তালিকায় স্থান দেয় রোহিঙ্গাদের৷ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ছেয়ে যায় সমুদ্রে ভাসন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকার ছবিতে৷
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি
জাতিসংঘের শরণার্থী কমিশন (ইউএনএইচসিআর) জানাচ্ছে, ২০১২ থেকে রোহিঙ্গারা ছোট ছোট দলে বাংলাদেশে আসলেও, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে তাদের আগমনের হার বেড়ে যায়৷ এখন পর্যন্ত, মোট সাত লাখ ৪৫ হাজার জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছে বলে জানাচ্ছে তারা৷ টেকনাফ ও উখিয়া উপজিলাতে ৩৪টি ক্যাম্পে এদের বসবাস৷
এছাড়াও যেখানে...
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে৷ এছাড়াও রোহিঙ্গারা রয়েছে ভারত, ফিলিপাইনস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশেও৷
স্থানান্তর শুরু
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পাঠানো হবে রোহিঙ্গাদের, শুরু হবে তাদের স্থানান্তর, জানায় বাংলাদেশ সরকার৷ নথিভুক্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে প্রাথমিকভাবে ৩২ হাজার শরণার্থী স্থানান্তরের কথা বলা হয় সেখানে৷ নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় সরকার বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করা শুরু করে৷
প্রত্যাবাসনের আলোচনা
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার আলোচনায় বসলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসনের কাজ সম্পন্ন করার কথা নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার৷ ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে ‘স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের’ প্রক্রিয়া৷
টেকনাফ থেকে
বর্তমানে টেকনাফে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলাকালীন সেখানে রয়েছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিকেরা৷ সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তারা জানিয়েছেন যে, সরকারী সাহায্য থাকা সত্ত্বেও, এখনই কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী ফিরে যেতে অনিচ্ছুক৷ শুধু তাই নয়, নাগরিকত্ব, মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পক্ষে নিশ্চয়তার অভাবে রোহিঙ্গারা এখনই ফিরে যেতে চাইছেন না৷ ফলে, প্রশ্নের মুখে প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ সাফল্য৷