আলোচনায় বিএনপি'র ‘জাতিসংঘ মিশন'
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮নির্বাচনের আগে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি৷ তারই অংশ হিসেবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ এদিকে, বিএনপি'র পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনে লবিস্ট নিয়োগের খবরও দিয়েছে বিদেশি সংবাদ মাধ্যম৷
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের যা অবস্থা তাতে নির্বাচন, মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছেন দলের মহাসচিব৷ কারণ এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ আমাদের যারা বন্ধু, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার তাদের এটা জানানো দরকার৷ জাতিসংঘও জানতে চায়৷ তাদের আমন্ত্রণে মির্জা ফখরুল সেখানে গিয়েছেন৷''
বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘মহাসচিবের আমন্ত্রণে এ বৈঠকে এসেছিলাম৷ আসন্ন নির্বাচনসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে৷ খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের চরম বৈরি আচরণের প্রসঙ্গও স্থান পায় এ বৈঠকে৷''
তবে বলা হচ্ছে, বিএনপি'র আগ্রহেই এই বৈঠক হয়েছে৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে নয়৷ এর জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘যারা এ কথা বলেন তাদের কূটনৈতিক বিষয় সম্পর্কে ধারণার অভাব আছে৷ জাতিসংঘের আমন্ত্রণ ছাড়া গেলে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব বৈঠক করেন কিভাবে? খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পরও তো জাতিসংঘ মহাসচিব বিবৃতি দিয়ে বলেছেন এটা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানে৷ তাদের দূতরা পরিস্থিতি নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে কথাও বলছেন৷ আমরা না জানালেও তারা জানেন৷ আমরা দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার পরিস্থিতি তুলে ধরছি দেশ ও জনগণের স্বার্থে৷''
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনে বিএনপি'র পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷
বিএনপি'র এই আন্তর্জাতিক তৎপরতার প্রতি নজর রাখছে সরকার৷ বিশেষ করে জাতিসংঘে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব কী বলেছেন তার বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে৷ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো কী কী করতে পারে তা ভেবে মেকাবেলারও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ সজাগ করা হচ্ছে সরকারের কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি'র এই তৎপরতা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত বা উদ্বিগ্ন নয়৷ তবে বিএনপি বিদেশিদের কাছে, যেচে জাতিসংঘে গিয়ে ধরনা দিয়ে দেশের ভাবমূতি নষ্ট করছে৷ যা খুবই দুঃখজনক৷ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করল৷ কিন্তু নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী হবে৷ দিল্লি-আমেরিকা-জাতিসংঘ করে কোনো লাভ নেই৷ তারা ভারতের অমিত শাহ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ আরো অনেক বিদেশি'র কাছে এর আগেও দৌঁড়-ঝাপ করেছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিএনপি ট্রাম্প প্রশাসনে লবিস্ট নিয়োগ করেছে অনেক টাকা খরচ করে৷ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা লুটপাট করেছে৷ সেই টাকা এখন খরচ করছে লবিস্ট-এর পিছনে৷''আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিএনপি'র অভিযোগের জবাব দেবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে আামাদের বন্ধু আছে প্রভু নেই৷ আমরা দেশের মানুষের ওপর আস্থাশীল৷ আমরা নির্বাচনসহ দেশের কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলব না৷''