ব্যাটারি চালিত মাল্টিকপ্টার
৩০ মে ২০১৬এই একটি আবিষ্কারের জন্য আলেকজান্ডার জোজেল-এর নাম বিমান পরিবহণের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে৷ উৎসাহী স্পোর্টস পাইলট হিসেবে তাঁর স্বপ্ন ছিল, ব্যাটারি চালিত এমন একটি মাল্টিকপ্টার তৈরি করা, যা সোজাসুজি আকাশে উঠতে পারবে৷ এ কাজে তিনি সতীর্থদের নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন৷
দেখতে একটা খেলনার মতো, কিন্তু এই যন্ত্র দিয়ে আকাশ থেকে ভিডিও ছবি তোলা যায়৷ অথচ ব্যাটারি চালিত যানে চড়ে চালক সহ মাটি ছেড়ে আকাশে ওঠা দৃশ্যত অসম্ভব৷ কিন্তু সত্যিই কি তাই? আলেকজান্ডার জোজেল ঠিক সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন৷
এ রকম উড়নযন্ত্র এ-পর্যন্ত কেউ দেখেছে কিনা সন্দেহ৷ ওদিকে প্রথম উড়ালের প্রস্তুতি চলছে৷ বিশ্বাস করা যায় না, অথচ আলেকজান্ডার জোজেল সত্যিই বড় বড় হেলিকপ্টার কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ ঐ কোম্পানিরাও চেষ্টা করছে ব্যাটারি চালিত একটি মাল্টিকপ্টার তৈরি করার৷ চ্যালেঞ্জটা হলো: ব্যাটারিচালিত ১৬টি রোটরের শক্তিতে ১৬০ কিলো ওজনের রেডিও-কন্ট্রোল্ড যানটি মাটি ছেড়ে আকাশে উঠতে পারে কিনা৷
অসম্ভব সম্ভব হলো: ভিসি ওয়ান প্রায় শব্দ না করে তার ঘুরন্ত রোটরগুলোর শক্তিতে হেলিকপ্টারের মতো মাটি ছেড়ে আকাশে উঠল৷ আলেকজান্ডার জোজেল জানালেন, ‘‘সারা বিশ্বে আমরাই প্রথম ইলেকট্রিক শক্তি দিয়ে খাড়া আকাশে উঠতে পেরেছি৷ বহু কোম্পানি, এমনকি বড় বড় হেলিকপ্টার কোম্পানি তা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি৷''
এই ভার্টিক্যাল টেক-অফ-এর ভিডিও ইন্টারনেটে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখবে৷ প্রথম উড়ালটা মাত্র পাঁচ মিনিটের৷ এছাড়া ভিসি-ওয়ান-এর ১৫ মিটারের বেশি দূর ওড়ার অনুমতি নেই, কেননা তার বিমান পরিবহণের লাইসেন্স নেই৷ আলেকজান্ডার জোজেল বললেন, ‘‘এটাকে ঠিক এয়ারোনটিক্যাল ইকুইপমেনট বলা চলে না৷ এটা একটা টেকনিক্যাল কনস্ট্রাকশন, যার ওপর আমরা একটা চেয়ার বসিয়েছি; আর তলায় একটা রাবারের বল বসিয়েছি, ধাক্কা সামলানোর জন্য৷ এ থেকে শুধু প্রমাণ হবে যে, যন্ত্রটি খাড়া আকাশে উঠতে পারে৷ এখন আমরা যেটা তৈরি করছি, তা হবে বাস্তবিক একটা এয়ারোনটিক্যাল ইকুইপমেন্ট – যেখানে নিরাপত্তা, আরাম বা স্টিয়ারিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের প্রয়োজন মেটাতে হবে৷ স্বভাবতই আমরা তা করতে চাই৷''
আলেকজান্ডার জোজেল তাঁর ডিজাইনারের সঙ্গে বসে প্রাথমিক আইডিয়াগুলো স্কেচ করার চেষ্টা করছেন৷ নকশাটা কম্পিউটারে ফেলে পূর্ণাঙ্গ করা হয়৷ এক্ষেত্রে যন্ত্রটা কেমন দেখাচ্ছে, সেদিকে নজর দিতে গিয়ে, প্রযুক্তিগতভাবে তা আদৌ করা সম্ভব কিনা, তা ভুললে চলবে না৷ ভালো দেখানো এক কথা, আর ওড়া আরেক কথা৷ আলেকজান্ডার জোজেল বললেন, ‘‘আমরা এখানে ভোলোকপ্টারের ডিজাইনটা তৈরি করছি৷ গ্রাহকরা যন্ত্রটা কিনতে চাইবেন কিনা, স্বভাবত সেটাই হলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ অর্থাৎ যন্ত্রটিকে ফ্যাশনদুরস্ত হতে হবে৷''
যে মাল্টিকপ্টারটির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তাতে একজন বা দু'জন আরোহীর বসার জয়গা থাকবে; ওপরে ঘুরবে ১৮টি ব্যাটারি চালিত রোটর৷ এর ফলে একাধিক রোটর বন্ধ হয়ে গেলেও যন্ত্রটি অক্ষত অবস্থায় মাটিতে নামতে পারবে৷ অ্যাকুমুলেটর, অর্থাৎ স্টোরেজ ব্যাটারিগুলি ভারি হওয়ার কারণে তলার কোচের অংশগুলো হালকা গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি করা হবে৷ টু-সিটার মাল্টিকপ্টারটির ওজন ৪৫০ কিলোর বেশি হলে চলবে না; তবেই তা এক উড়ালে পুরো এক ঘণ্টা উড়তে পারবে৷