1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আলিঙ্গনরত যুগল নিয়ে বিভক্ত কলকাতা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩ মে ২০১৮

কলকাতার মেট্রো রেলে এক যুগলের ‘‌নোংরামি'‌ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে, তাদের গণধোলাই দিয়ে সহবত শেখালেন একদল প্রবীণ নাগরিক৷ ঠিক হলো, না ভুল?‌ শহর দ্বিধাবিভক্ত৷

https://p.dw.com/p/2x6RY
Verkehr in Kolkata
ছবি: picture-alliance/Annie Owen/Robert Harding World Imagery

ঘটনাটি সোমবার রাতের৷ সেদিন মেট্রোতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরার অপরাধে এক যুগলকে কলকাতার দমদম স্টেশনে গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে৷

বিষয়টি নিয়ে কলকাতার জনমত এখন স্পষ্টতই দু'‌ভাগে বিভক্ত৷ মেট্রো রেলের মতো এক গণপরিবহণ মাধ্যমে, প্রকাশ্যে শরীরি খেলায় মত্ত দুই যুবক-যুবতী, যারা চারপাশে বয়স্করা আছে, মহিলা এবং শিশুরা আছে দেখেও পরোয়া করেনি, তাদেরকে ধরে উত্তম মধ্যম দেওয়াটাই ঠিক কাজ হয়েছে, বলছেন একদল৷ এই দলে যে শুধু বয়স্করাই আছেন, তা নয়৷ অনেক মধ্যবয়সি, এমনকি অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের একাংশও মনে করছে, প্রকাশ্যে, জনসমক্ষে সঙ্গীর শরীর ছুঁয়ে মজা খোঁজা অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে৷ অনেকেই এই প্রসঙ্গে শহরের পার্কগুলোর কথা বলেছেন, যেখানে সন্ধ্যার পর প্রেমিক-প্রেমিকাদের অভব্যতায় নাকি যাওয়া যায় না৷ কাজেই সহবত থাকা দরকার, তেমন হলে জোর করে, মেরেধরেও সেই সহবতের শিক্ষা দিতে হবে, মনে করছে এই দল৷

‘যখন রাস্তা নোংরা করে, তখন কেন খারাপ লাগে না?‌’

আর অন্য দল ঠিক এর বিপরীত মেরুতে৷ তাদের মূলমন্ত্র হলো আমার জীবন, আমার শরীর৷ আমি কীভাবে বাঁচব, কাকে, কখন কোথায় ছোঁব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত৷ মেট্রোর ঘটনাটির পর এরা পরপর দুদিন মেট্রো স্টেশনের সামনে এবং মেট্রোর কামরার ভেতরেও পোস্টার হাতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানিয়েছে, যার মূল স্লোগান ছিল - হোক আলিঙ্গন৷ কড়া পুলিশ পাহারার সামনে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে, গান গেয়ে, স্লোগান দিয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছে এরা৷ এবং এদের একটা বড় অংশ রীতিমত বিচলিত যে কলকাতার মতো একটা মুক্ত মানসিকতার শহরে একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে এমন গণরোষের শিকার হতে হচ্ছে, যা এতদিন শোনা যেত হরিয়ানা, বিহার, কিংবা উত্তর প্রদেশে৷

ঘটনার খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই নানাজন পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন৷ তাদেরই একজন শ্রাবণী খাঁ, শহরের একটি এফএম রেডিও স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত৷ তিনি বলেছিলেন, এবার থেকে মেট্রোয় একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে চলাটাই যেন দস্তুর হয়৷ সবাই যেন সেটাই করে৷ এমন রাগী মন্তব্যে কি আদৌ কোনও কাজ হবে?‌ ডয়চে ভেলের তরফ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল শ্রাবণীকে৷ তাঁর যুক্তি, যাঁরা এটাকে অশ্লীলতা ভাবেন, তাঁদের এটা বোঝা দরকার যে প্রেমিক-প্রেমিকার পরস্পরকে আলিঙ্গন আসলে অত্যন্ত স্বাভাবিক সুন্দর একটা ব্যাপার৷ আর এটা বুঝতে গেলে প্রথমে লোককে এ ধরনের দৃশ্যে অভ্যস্ত হতে হবে৷ আর তা ছাড়া, লোকে যখন রাস্তা নোংরা করে, থুতু ফেলে বা প্রকাশ্যেই প্রস্রাব করে, তখন কেন এই লোকেদের খারাপ লাগে না?‌ তখন কেন কেউ কিছু বলে না?‌ প্রশ্ন শ্রাবণীর৷

‘এরপর অন্য বর্ণে বা ধর্মে বিয়ে করলে খুন করতে পারে’

যুগলের নিগ্রহের প্রতিবাদে চলতি বিক্ষোভ-আন্দোলনের যে স্লোগান, সেই ‘‌হোক আলিঙ্গন'‌-এর মূল উৎস হলো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন, যার নাম ছিল ‘‌হোক কলরব'‌৷ বা তারপরেও ভারতের একাধিক জায়গায় নীতি পুলিশদের গা জোয়ারির প্রতিবাদে হয়েছিল ‘‌হোক চুম্বন'‌৷ দুটি আন্দোলনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, নাট্যকর্মী এবং সাংবাদিক উদ্দালক ভট্টাচার্য কিন্তু অনেক বেশি উদ্বিগ্ন যে কলকাতা শহরের মতো জায়গায় এই ঘটনা ঘটল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, যে তিনি ভয় পাচ্ছেন, এরপর অন্য বর্ণে, বা অন্য ধর্মে বিয়ে করলে খুন করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে পশ্চিমবঙ্গে৷ অথবা হরিয়ানা, বা উত্তর প্রদেশের কায়দায় এরপর বসবে খাপ পঞ্চায়েত, সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বাংলাতেও৷

উদ্দালকের প্রস্তাব, এই ভয়ংকর প্রবণতাকে রুখতে পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব, সামাজিক সংগঠনগুলোকে সতর্ক, সক্রিয় হতে হবে৷ বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বনভোজনের মতো বছরভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রচলন ফের শুরু করতে হবে আগের মতো৷ কারণ যা হচ্ছে, যা হতে চলেছে বলে আশঙ্কা, সেটা বাঙালি সংস্কৃতি নয়৷

এ নিয়ে আপনাদের মতামত জানান৷ লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য