1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর নিউজ করব না: নির্যাতিত সাংবাদিকের উপলব্ধি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ নভেম্বর ২০২০

সাংবাদিকেরা যাতে প্রভাবশালীদের অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো খবর প্রকাশ না করে সেজন্য অপহরণ ও নির্যাতন করে ভয় দেখানো হচ্ছে৷ শুধু তাই নয় খবর প্রকাশ করার পর হত্যারও হুমকি পাচ্ছেন কোনো কোনো সাংবাদিক৷

https://p.dw.com/p/3klPJ
উদ্ধার হওয়ার পর চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারছবি: Humaun Masud

অপহরণের পর উদ্ধার চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তাতে তাকে শুধু বলতে শোনা গেছে, ‘‘আমি আর নিউজ করব না প্লিজ, আমি আর নিউজ করব না প্লিজ৷’’ সারোয়ার এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷

চিকিৎসাধীন গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে কথা বলা না গেলেও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, ‘‘গোলাম সরোয়ারকে অপহরণ করা হয়েছিলো পেশাগত কারণেই৷ তিনি নিউজের কারণেই অপহৃত হন৷’’

গোলাম সরোয়ার ‘আজকের সূর্যোদয়ের’ স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটি নিউজ নামে একটি অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক৷ গত ২৯ অক্টোবর তাকে চট্টগ্রামের ব্যাটারি গলি থেকে অপরহরণ করা হয়৷ রোববার তাকে সীতাকুণ্ড এলাকার কুমিরা ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়৷ উদ্ধারের পর তিনি সংবাদ মাধ্যমকে তার ওপর নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন৷

অপহরণকারীরা বার বার যখন অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল তখন তারা স্যার স্যার বলছিলো৷ তারা আরো বলছিল, ‘‘সাংবাদিকদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সরোয়ারকে তুলে এনেছি, হত্যার জন্য নয়৷’’ তারা তাকে নির্যাতনের সময় বার বার বলছিল, ‘‘আর নিউজ করবি’’?

এই ঘটনায় আমরা চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা ভয়ের মধ্যে আছি: সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী

সরোয়ার কী সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন?
এখন প্রশ্ন তিনি কী নিউজ করেছিলেন যার জন্য তাকে অপরহণের পর নির্যাতন করা হলো৷ সেটা শুধু গোলাম সরোয়ারই বলতে পারবেন বলে জানান, চট্টগ্রাম কেতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসীন৷ অপহরণের পর জিডি করেছিলেন আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জুবায়ের সিদ্দিকী৷ তিনিও একই কথা বলেন৷ তবে আলোচনায় আছে ২৩ অক্টোবর সিটি নিউজ নামের নিউজ পোর্টালে জমি দখলের একটি খবর৷ আর ওই খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি জমি দখল করেছেন ৷ সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘এটা নিশ্চিত যে তাকে খবর প্রকাশের কারণেই অপহরণ করা হয়েছিল৷ আমরা পুলিশকে বলেছি এখন তারা অপহরণকারী ও এর নেপথ্যের গডফাদারদের চিহ্নিত করতে৷ এই ঘটনায় আমরা চট্টগ্রামের সাংবাদিকেরা ভয়ের মধ্যে আছি৷ সুস্থ হলে তার কাছ থেকেই আমরা জানতে পারব কোন নিউজের কারণে তাকে অপহরণ করা হয়,’’ বলেন এই সাংবাদিক নেতা৷

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসিন জানান, ‘‘এখন আমরা তার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় আছি৷ তবে চাইলে তার পরিবারের কেউ মামলা করতে পারেন৷ তার শরীরের বাইরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নাই৷ আশা করছি তিনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন৷’’

তার শরীরের বাইরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নাই: ওসি মোহাম্মদ মোহসিন

সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র:
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে এই বছরেরই প্রথম ৯ মাসে ২০৯ জন সাংবাদিক হুমকি, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৯ জন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে এবং ৩৫ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে৷ খবর প্রকাশের জন্য ৮১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরপত্তা আইনসহ অন্য আইনে মামলা হয়েছে৷ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ২৩ জনকে৷ নিহত হয়েছেন একজন সাংবাদিক৷

এই বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে৷ ২০১৯ সালে ৬৩ জনের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়৷ জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই আট মাসে ৩৮ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে৷

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ‘‘এই ধরনের অনাকঙ্খিত ঘটনা আমাদের স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে চরম অন্তরায়৷ সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি৷’’

সংবাদ প্রকাশের কারণে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও মুক্ত মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে তিনি মনে করেন৷ তার মতে, ‘‘এইসব ঘটনা একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে৷’’ তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন সাংবাদিকতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেল দিয়েছে৷ তবে তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল আচরণেরও আহ্বান জানিয়েছেন৷

৪ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...