আরব নারীদের দিশা লেবানন
একাধিক দাবি নিয়ে বর্তমানে পথে নেমেছে লেবাননের রাজধানী বেইরুটের নারীরা৷ তাদের আন্দোলন কীভাবে শক্তি জোগাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের নারীদের, দেখুন ছবিঘরে...
একগুচ্ছ দাবি নিয়ে পথে নারীরা
দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়ানো, দুর্নীতি ও প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে ঘিরে বর্তমানে উত্তাল লেবাননের রাজধানী বেইরুট৷ পথে নামা জনগণের মধ্যে রয়েছেন বেশির ভাগ নারীরা৷ তাদের শক্তহাতে নেতৃত্বদান ও অভিনব প্রতিবাদের ধরন অনুপ্রাণিত করছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অংশে বসবাসরত নারীদের৷ বিশেষজ্ঞদের মত, ফিরতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে নারীবাদের হালও৷
কেমন প্রতিবাদ?
বেইরুটের প্রাণকেন্দ্রে দেশের শিক্ষা মন্ত্রীর কনভয় থামিয়ে দেন প্রতিবাদী নারীরা৷ মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী বন্দুক উঁচিয়ে বাধা দিতে গেলে তাকে লাথি মেরে ধরাশায়ী করে দেন এক নারী৷ লেবাননে নারীদের এমন রূপ বিরল হওয়ার ফলে কিছুটা অবাক, কিছুটা লজ্জিত হয়েই ফিরে যায় সেই রক্ষী৷ এই দৃশ্য বর্তমানে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়৷
প্রতিবাদী, অথচ অহিংস
মন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীর ঘটনাটি ছাড়া গোটা প্রতিবাদটিই শান্তিপূর্ণ ও অহিংসভাবে চলছে, জানাচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷ শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ কর্মসূচীর অনেকটা জুড়েই রয়েছে নানা ধরনের শৈল্পিক প্রতিবাদ৷ এর মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত নৃত্য ‘বেলি ডান্স’ও৷
কী বলছেন নারীবাদীরা?
প্রতিবাদে শুধুমাত্র স্বাধীনচেতা, হিজাববিহীন নারীই নয়, যোগ দিয়েছেন ধর্মবিশ্বাসী হিজাব-পরিহিত নারীরাও৷ সমাজকর্মী হেন্দ এলখোলি ফেসবুকে লেখেন, এই প্রতিবাদ সমাবেশে নারীরাও পুরুষদের মতো শর্টস পরে ঘুরতে পারেন৷ সেখানে হেনস্থার ভয় নেই৷ তাঁর মতে, ‘‘পৌরুষ বলতে আমরা যা যা বুঝি, সেই সব এই প্রতিবাদে এলেই দেখতে পাবেন৷’’ এর আগে একটি প্রতিবাদে নারীদের পুরুষ প্রতিবাদীদের হাতে হেনস্থা হতে হয়৷
তবুও নারী শুধুই সুন্দরী...
বেইরুটের এই প্রতিবাদ আদতে রাজনৈতিক হলেও, মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদমাধ্যম একে তুলে ধরছে ‘সুন্দরী নারীদের জমায়েত’র মতো করেই৷ একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘‘এই লেবানিজ সুন্দরীরা আসলে বিপ্লবীও’’৷ এছাড়াও, বেছে বেছে প্রতিবাদী নারীদের শুধু ‘‘আকর্ষণীয়’’ ছবি ছাপার অভিযোগ করেছেন প্রতিবাদীদের একাংশ৷
লেবানিজ নারীদের দীর্ঘ লড়াই
২০১৭ পর্যন্ত, ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের শাস্তি মকুব হয়ে যেত লেবাননে, যদি সে ধর্ষিতাকে বিয়ে করত৷ সেই আইন বর্তমানে রদ৷ অন্যদিকে, ২০১৮ সালেও নারীরা রাস্তায় নেমেছিলেন ধর্ষণের দায় ধর্ষিতার ওপর থেকে ধর্ষকের ওপর সম্পূর্ণভাবে দেওয়ার দাবিতে৷ সে কারণেই, লেবাননে এমন প্রতিবাদ তুলে আনছে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে সমালোচনা ও তীর্যক মন্তব্য৷ এরপরেও, এই আন্দোলন থেকেই সাহস পাচ্ছেন আরবের সাধারণ নারীরা৷