আরব্য রজনির শাসক: ওমানের সুলতান
ওমানের জনপ্রিয় সুলতান পাঁচ দশক ধরে রাজ্যশাসন করেছিলেন৷ মৃত্যুর পরও তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি৷
সুদীর্ঘ রাজ্যকাল
আরব নৃপতিদের মধ্যে ওমানের সুলতান কাবুস বিন সঈদ আল-সঈদ এক ধরনের ব্যতিক্রম বলা চলে৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যে কোনো রাজার চেয়ে বেশিদিন রাজত্ব করেছেন৷ ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন সুলতান কাবুস, সেই সঙ্গে তাঁর ৫০ বছরের রাজত্বের অবসান হয়৷
দ্রুত বিকাশ
সুলতান কাবুস ওমানকে আধুনিকতার দিকে নিয়ে গেছেন অধীর গতিতে৷ ৫০ বছর আগে ওমান ছিল আরব বিশ্বের সবচেয়ে পিছনে পড়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে একটি৷ অপরদিকে বিশ্বের যে সব দেশ সবচেয়ে বেশি প্রগতি করেছে, আজ ওমান সেই তালিকার শীর্ষে, বলে জাতিসংঘের বিবরণে প্রকাশ৷
সাগরপাড়ি
সুদূর অতীতে ওমানের খ্যাতি ছিল তার ধূপধুনার জন্য, পরে তামার ব্যবসায় সেইরকম নাম করে ওমান৷ সতেরো আর আঠেরো শতাব্দীতে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের একটা বড় অংশ ছিল ওমানের সুলতানের তাঁবে, এমনকি তিনি কিছুকাল করে জাঞ্জিবারেও বাস করতেন৷ উপনিবেশবাদের আগমনের পর ওমান তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব হারায়৷
মধ্যযুগ থেকে আধুনিকতায়
৫০ বছর আগে শুধুমাত্র রাজধানী মাস্কাট-এ বাঁধানো রাস্তা ছিল৷ কলের জল কিংবা বিদ্যুৎও যে সবসময় পাওয়া যেতো, এমন নয়৷ আজ ওমানের রাস্তাঘাট দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তগুলি অবধি চলে গেছে৷ সবচেয়ে দূরের বসতিগুলিতেও স্কুল ও হাসপাতাল আছে৷ সারা দেশে ২০টির বেশি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি...৷
নারী প্রগতি
ওমান সরকার বিশেষ করে নারী প্রগতিতে উৎসাহী৷ ওমানে মহিলারা স্বচ্ছন্দে চলাফেরা ও পড়াশুনা করতে পারেন৷ রাষ্ট্রীয় সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরুষ ছাত্রদের জন্য কোটা রাখা রয়েছে, কেননা স্কুলকলেজে মেয়েরাই সাধারণত ভালো ফলাফল করে থাকে৷
মরুভূমি
ওমানের আয়তন সাবেক পশ্চিম জার্মানির সমান, অথচ জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ৷ সে হিসেবে ওমানকে বিশ্বের সবচেয়ে কম বসতির দেশগুলির মধ্যে ফেলা চলে৷ দেশের একটা ব্যাপক অংশ মরুভূমিতে ঢাকা৷ দেশের তেলসম্পদ সীমিত, কাজেই সরকার অর্থোপার্জনের অন্যান্য পথ খুঁজছেন – যেমন পর্যটন৷
যা পর্যটকদের টানে
মাস্কাট বন্দরে যেমন একদিকে বড় বড় ক্রুইজশিপ বাঁধা, অন্যদিকে তেমন পুরনো আমলের ঢাউস নৌকা দেখা যায়৷ সেই সঙ্গে রয়েছে নানা লাক্সারি হোটেল৷ আপাতত মাস্কাট বিমানবন্দরকে বাড়ানো হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷
হিসেব মেলে না
খনিজ তেল থেকে আয় যেভাবে কমে আসছে, পর্যটনশিল্পের পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব নয়৷ আজ ওমানের জিডিপি-র ছয় শতাংশেরও কম আসে পর্যটন থেকে৷ ওদিকে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, বাড়ছে তাদের চাহিদা ও দাবিদাওয়া৷
তরুণ জনতা
প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ ওমানি বেরচ্ছেন স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে – কাজের খোঁজে৷ আর তাদের সকলেই যে চাকরি পাচ্ছেন, এমন নয়৷ বিশেষ করে তরুণ জনতার মধ্যে বেকারত্ব বেশি৷ অধিকাংশই সরকারি চাকুরি করেন, কেননা সেখানে বেতন ও সুযোগসুবিধা বেশি৷
শান্তিপুরে অশান্তি
আরব বসন্তের টানে ওমানেও বিক্ষোভ মাথা চাড়া দিয়েছিল৷ হাজার হাজার মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আর জীবনযাত্রার উন্নতির দাবিতে আন্দোলন করেন৷ সরকার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেবার পর বিক্ষোভ থামে৷ তবে বিক্ষোভে একজন মানুষের প্রাণহানি বিশেষভাবে শান্তিপ্রিয় বলে পরিচিত ওমানকে সচকিত করে৷
ইবাদি ইসলাম
ওমানের মুসলিমদের অধিকাংশ হলেন ইবাদি মুসলমান৷ ইবাদিরা নিজেদের সুন্নি বা শিয়াপন্থিদের অংশ বলে মনে করেন না – যে কারণে সুলতান কাবুস তাঁর দেশকে উপসাগরীয় এলাকার যাবতীয় শিয়া-সুন্নি বিরোধ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন৷