আফগানিস্তান নিয়ে মতভেদ মার্কিন কর্মকর্তাদের
১৬ আগস্ট ২০১০প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া পরপরই আফগানিস্তানে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ওবামা৷ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, যুদ্ধ দ্রুত শেষ করে সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনা৷ ঠিক করেছিলেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকেই সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে৷ কিন্তু পরিস্থিতি সে কথা বলছে না৷ ২০০১ সালে অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে নিহত হয়েছে ২ হাজার বিদেশি সৈন্য৷ কমেনি সহিংসতাও৷ আর এর মধ্যেই, আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর সমর অধিনায়ক মার্কিন জেনারেল পেট্রেয়াস বললেন, আগামী বছর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ সবকিছু নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর৷ বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি৷
গতকাল রোববার এনবিসি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেট্রেয়াস বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ওভাল অফিসে বসেই আমার কথা হয়েছে৷ তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আমার বিশ্লেষণের ওপর তাঁর ভরসা আছে৷ আর আমিও আমার দায়িত্বটি ভালোভাবেই বুঝি৷ তাই যে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে পরিস্থিতি বুঝে৷ কোনো সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়লে, আমি আগে থেকেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলব৷
ইরাক যুদ্ধের কৃতিত্বধারী পেট্রেয়াস কয়েক মাস আগেই আফগানিস্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন৷ আর এরপর এই প্রথম কোনো টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি৷ পেট্রেয়াসের কথা হলো, আফগানিস্তানে সফলতা মাত্র আসতে শুরু করেছে৷ তাই সৈন্য প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি৷ পেট্রেয়াস যখন এই কথা বলছেন, তখনই অন্য কথা বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস৷ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পেট্রেয়াস আবার তাঁরই অধীন৷ গেটস সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘২০১১ সালের জুলাই মাস থেকেই সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে৷ আর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ থাকা ঠিক নয়৷'' সরাসরি না বললেও পেট্রেয়াসকে ইঙ্গিত করেই যে তাঁর এই বক্তব্য, তা আর বলার অপেক্ষা করে না৷ আর এটাও বোঝা যাচ্ছে যে, দুই সহযোগীর ভিন্ন অবস্থানের কারণে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বেশ বেগ পেতে হবে৷
ওদিকে, মার্কিন কর্মকর্তাদের এই মতভেদের মধ্যেই তালেবান জানিয়েছে, আফগানিস্তানে বেসামরিক মানুষ হত্যার ঘটনায় যদি আন্তর্জাতিক তদন্ত হয়, তবে তাতে সহায়তা দিতে রাজি তারা৷ আজ সোমবার, এক বিবৃতিতে তারা একথা জানায়৷ এছাড়া, তদন্ত দলে তালেবান প্রতিনিধিকেও রাখতে হবে বলে জানানো হয় বিবৃতিটিতে৷ তবে তালেবান গোষ্ঠীর পাশাপাশি, দলটিতে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন এবং ন্যাটো বাহিনীর প্রতিনিধিও থাকতে পারে৷
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ এক সপ্তাহ আগে জানিয়েছিল, বোমা হামলা ও সামরিক অভিযানে নিরীহ আফগানের হতাহতের সংখ্যা ৩১ শতাংশ বেড়েছে৷ যার জন্য দায়ী মূলত তালেবান৷ তবে এই জঙ্গি গোষ্ঠী এই দায় মাথায় নিতে নারাজ৷ তারা বলেছে, ন্যাটো হামলাতেই নিরীহ মানুষ মারা পড়ছে বেশি৷ আর পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো সে খবর ঢেকে রেখে তালেবানের ওপর দোষ চাপাচ্ছে৷
পেট্রেয়াস অবশ্য আবারো তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতির কথা জানিয়েছেন৷ এ কথা আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও বলে আসছিলেন৷ পেট্রেয়াস বলেন, ‘‘আমাদের বুঝতে হবে, হামিদ কারজাই একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷ আমাদের লক্ষ্য এক৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের মতের মিল রয়েছে৷ আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতের অমিল থাকলেও, তা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷''
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ