আপনি কি দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত?
বার্লিনের রাস্তায় কয়েকজনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘‘আপনারা কি প্রয়োজনে দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারবেন? দেশের জন্য না পারলে অন্য কিছুর জন্য কি প্রাণ দিতে প্রস্তুত আপনি?’’ কে কী বলেছেন তা জানাতেই আজকের ছবিঘর৷
‘আমার তো কোনো দেশই নেই’
ফুয়াত, বয়স ৩২৷ জার্মানির জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত নন৷ কারণ হিসেবে জানালেন, ‘‘আমার যে দেশ আছে এ কথাই তো আমি বলি না৷ আমার বাবা-মা তুরস্কের৷ আমি বড় হয়েছি এখানে৷ তাই মনে হয় কোনোটাই আমার দেশ নয়৷’’ ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ নিজের দেশের জন্য প্রাণ দিতে রাজি৷ তবে পশ্চিম ইউরোপে এই হার মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ৷ তুরস্কের ৭৩ ভাগ নাগরিক দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত৷
‘প্রাণ না দিয়ে সম্ভবত প্রতিবাদে অংশ নেব’
জুলিয়া জার্মানিতে এসেছে রোমানিয়া থেকে৷ ২৬ বছর বয়সি এই তরুণীও দেশের জন্য প্রাণ দেবেন না৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমি দেশের জন্য মরবো না৷ বরং প্রতিবাদে অংশ নিতে পারি৷ আসলে আমার দেশের ইতিহাস আমাকে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে না৷ তাছাড়া আমার মতামতে কিছু তো বদলাবেও না৷’’ রোমানিয়ার শতকরা ৩৮ ভাগ মানুষ দেশের জন্য জীবন দিতে রাজি, ৪১ ভাগ রাজি নয়৷
শরণার্থী জেমস প্রাণ দিতে প্রস্তুত
২৭ বছর বয়সি জেমন ক্যামেরুন থেকে আসা শরণার্থী৷ তিনি জানালেন, ‘‘আমি দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত৷ আমি আমার দেশকে ভালোবাসি৷ তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে কারো পক্ষে একা লড়াই করা সম্ভব নয়৷ আপনি যা ভাবছেন, আপনার প্রতিবেশী কিন্তু সেই কথাটি ভাবছেনা৷ সেটাই সমস্যা৷ আমি পরিবর্তন চাই৷ কিন্তু পরিবর্তন আনতে সমমনা অনেক লোক দরকার৷ আমি সংঘাতের পক্ষে নই৷ সংঘাত কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে না৷’’
‘আমি জার্মানির হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়নি’
নিজেকে ‘যুদ্ধ-বিরোধী’ দাবি করে এই তরুণ জানালেন, জার্মানির হয়েও তিনি প্রাণ দিতে প্রস্তুত নন৷ কসোভোর যুদ্ধে অস্ত্র ধরার জন্য তাঁকে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলা হয়েছিল৷ সেই ডাকে সাড়া দেননি৷ তবে ইউক্রেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে ঠিকই অংশ নিয়েছেন৷ জরিপ বলছে, জার্মানির মাত্র ১৮ ভাগ মানুষ প্রয়োজনে দেশের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত৷
‘কোনো মূল্যবোধের জন্য লড়তে রাজি’
সোরাইয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির নাগরিক৷ দেশের জন্য প্রাণ দেয়ার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হলো, ‘‘আমি নির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ রক্ষার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত৷ সহিংসতা কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না৷ তাই আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করতে পারবো বলে মনে করিনা৷ আমার তো একক কোনো দেশ নেই৷ ওটাও (ফ্রান্স) আমার দেশ৷’’
‘প্রাণ দিতে পারবো কিনা জানি না’
ক্যানাডার নাগরিক এমিলি কিছুটা সংশয় নিয়ে বললেন, ‘‘দেশের জন্য প্রাণ দেয়ার ইচ্ছে হবে কিনা, তা জানি না৷ খুব কঠিন প্রশ্ন, আমি কখনো বিষয়টি ভেবে দেখিনি৷ আমি তো ক্যানাডার নাগরিক৷ তাই এমন পরিস্থিতির কথা ভাবতেও হয়নি৷ আমার কাছে যুদ্ধ অনেকটা বোকামির নামান্তর৷’’ জরিপ বলছে, ক্যানাডার মাত্র ৩০ ভাগ মানুষ দেশের জন্য অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত৷