1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাজে অগ্রগতি

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১০

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন আইএসএস মানবজাতির পারস্পরিক সহযোগিতার এক অভিনব উদাহরণ৷ বিশ্বের ১৬টি দেশের সহযোগিতার ভিত্তিতে তিলে তিলে গড়ে উঠছে এই কাঠামো৷ অসংখ্য মহাকাশচারী ইতিমধ্যেই ঘুরে গেছেন এই স্টেশন, রেখেছেন তাঁদের অবদান৷

https://p.dw.com/p/M6TZ
মানব জাতির অসাধারণ সৃষ্টি এই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনছবি: ESA/D.DUCROS
Astronauten auf der ISS
আইএসএস’এর বাইরে কর্মরত মহাকাশচারীরাছবি: picture-alliance/ dpa

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন আইএসএস-এ পৃথিবী থেকে পালা করে মহাকাশচারীরা যান, সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরে আসেন৷ যে কোন সময়েই ৬ জন মহাকাশচারী সেখানে বসবাস করতে পারেন৷ তাঁদের মূল্যবান সময় যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য আগে থেকেই তাঁদের কাজকর্ম স্থির করা থাকে৷ কেউ গবেষণাগারে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান৷ কেউ পৃথিবী থেকে আনা কোন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ স্পেস স্টেশনে যুক্ত করেন৷ কেউ বা রক্ষণাবেক্ষণের অন্যান্য কাজ করেন৷

Astronauten auf der ISS
আইএসএস’এর ভিতরে মহাকাশচারীরাছবি: picture alliance / landov

পরিবহন সঙ্কট

বিশাল এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা, প্রয়োজনীয় উন্নতির কাজ চালিয়ে যাওয়া, একের পর এক অংশ যুক্ত করা – এসব মোটেই সহজ কাজ নয়৷ মূলত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশযানগুলিই স্পেস স্টেশনে মানুষ ও পণ্য পরিবহন করে আসছে৷ কিন্তু মার্কিন মহাকাশফেরি প্রকল্পের আয়ু প্রায় শেষ হয়ে আসায় দেখা দিচ্ছে নতুন সঙ্কট৷ মাত্র ৩টি মহাকাশফেরি এখনো চালু অবস্থায় রয়েছে৷ ‘এন্ডেভার'এর সাম্প্রতিক অভিযানের পর আর মাত্র ৪ বার কোন মার্কিন মহাকাশফেরি আইএসএস'এর দোরগোড়ায় আসবে৷ আগামী ১৮ই মার্চ ‘ডিসকভারি'র এক অভিযান শুরু হওয়ার কথা৷ ফলে ভবিষ্যতে মূলত রাশিয়ার মহাকাশযানগুলির উপরেই নির্ভর করতে হবে৷ তবে আকারে ছোট হওয়ায় বড় মাপের পণ্য পরিবহনে তেমন উপযুক্ত নয় রাশিয়ার যানগুলি৷

BdT Spaceshuttle Endeavour wartet
‘এন্ডেভার' সহ ৩টি মার্কিন মহাকাশফেরির আয়ু শেষ হলে পরিবহনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে৷ছবি: AP

স্পেস স্টেশনের বিন্যাস

আইএসএস বিভিন্ন মডিউল বা অংশে বিভক্ত৷ এর মধ্যে ‘ট্র্যাঙ্কুইলিটি' বা শান্তির আবাস নামের মডিউলটি পৃথিবীর দিকে মুখ করে রয়েছে৷ ইটালিতে তৈরি করা হয়েছিল এই অংশ৷ আচমকা শরীর খারাপ লাগলে চিকিৎসার জন্য লাইফ সাপোর্ট যন্ত্রপাতি রয়েছে এই অংশের মধ্যে৷ রয়েছে ব্যায়াম করার ব্যবস্থা এবং একটি শৌচাগার৷ সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশফেরি ‘এন্ডেভার'এর মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশনের এই অংশে বেশ কিছু রদবদল করলেন৷ এছাড়া নানারকম তার বদলে রক্ষণাবেক্ষণের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাজও শেষ করলেন তাঁরা৷

Eine künstlerische Interpretation von der Tranquility genannte Verbindungsknoten Nr. 3
‘ট্র্যাঙ্কুইলিটি'র নতুন ৭ জানালার গম্বুজছবি: ESA

সেখানে তাঁরা বসালেন গম্বুজের মত এক অংশ, যার ৭টি জানালার সামনে বসলে পৃথিবীর অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়৷ প্রত্যেকটি জানালার আলাদা শাটার রয়েছে – চাইলেই বন্ধ করে দেওয়া যায়৷ কোন মহাকাশযান স্পেস স্টেশনে এলে সেটিকেও দূর থেকে দেখা যাবে এই সব জানালার সামনে বসলে৷ যে কোন সময় দুজন মহাকাশচারী ইচ্ছে করলে এই বিশাল গম্বুজের মধ্যে ভেসে বেড়াতে পারেন৷ জানালাগুলি দিয়ে তাঁরা প্রায় যে কোন দিকের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন৷ একদিকে শোভা পাচ্ছে পৃথিবী – বাকি সব দিকে মহাকাশের অতল গহ্বর৷ অসাধারণ সেই অভিজ্ঞতা৷ এই জানালা বসানোর কাজ মোটেই সহজ ছিল না৷ দু-দুবার মহাশূন্যে বেরিয়ে এই কঠিন কাজ সারতে হয়েছে৷ স্পেস স্টেশনের ‘ডেস্টিনি' নামের গবেষণাগারে ‘কানাডা-আর্ম ২' নামের রোবোট হাত এই কাজে সাহায্য করেছে৷

Eine künstlerische Interpretation von der Tranquility genannte Verbindungsknoten Nummer 3
বাইরে থেকে ‘ট্র্যাঙ্কুইলিটি'র দৃশ্যছবি: ESA

সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ

এন্ডেভারের এবারের অভিযানে আরও কিছু কাজ সারতে হয়েছে৷ যেমন স্পেস স্টেশনে দুর্লভ জল পরিশোধন করে তা বার বার ব্যবহার করার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তার কিছু যন্ত্রাংশ বাতিল করে নতুন যন্ত্রাংশ বসাতে হয়েছে৷ ‘ট্র্যাঙ্কুইলিটি' মডিউলের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ থার্মাল চাদর মুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ কোন মহাকাশযান যাতে সরাসরি ‘ট্র্যাঙ্কুইলিটি'র সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, তা সম্ভব করতে বসানো হয়েছে ডকিং পোর্ট৷ নতুন এই বাসস্থানে প্রবেশ করতে যাতে সুবিধা হয়, তার জন্য বসানো হয়েছে বিশেষ হাতল৷

‘এন্ডেভার'এর সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে আইএসএস প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হল৷ গোটা প্রকল্পের মূল্য প্রায় ১০,০০০ কোটি ডলার – যার সিংহভাগই এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷ কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মহাকাশ সংস্থা নাসা'র এবারের বাজেটে বেশ কিছু কাটছাঁট করেছেন৷ বেসরকারী উদ্যোগে বাণিজ্যিক বিকল্প খোঁজার প্রস্তাব রেখেছে ওবামা প্রশাসন৷ তবে কাটছাঁট সত্ত্বেও ২০১৫ সাল থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই স্পেস স্টেশন চালু রাখা যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু একবার এমন এক বিশাল ও অভিনব সুযোগ ভোগ করার পর মানবজাতি কি আবার পিছিয়ে পড়ার মত বোকামি করতে পারে?

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক