1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদালতে ফিরছে নিরাপত্তাহীনতার পুরোনো শঙ্কা

সুলাইমান নিলয় ঢাকা
২৫ নভেম্বর ২০২২

পুলিশের উপর হামলা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঢাকার যে আদালতে ঘটেছে, কারো কারো মতে এটি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আইনজীবীর কর্মস্থল৷ আইনজীবীর সংখ্যায় কেউ কেউ এই আদালতকে আরো এগিয়ে রাখতে চান৷

https://p.dw.com/p/4K3Ru
ঢাকার সিএমএম আদালত
ঢাকার সিএমএম আদালতছবি: Mortuza Rashed/DW

জনবহুল পুরান ঢাকার এই আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন৷ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে আইন অঙ্গনের নানা ব্যক্তির মাঝে৷

এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মো. ফিরোজুর রহমান (মন্টু) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কোর্টে নিরাপত্তাহীনতায় আমরা আছি৷ বিচারকরা আছেন৷ যারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তাদের অভয় বিচরণ চলছে কোর্টের বিভিন্ন জায়গায়৷ নিরাপত্তা বলয় আরেকটু বাড়ানো উচিত এবং সতর্ক হওয়া উচিত৷’’

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘সর্বশেষ যে ঘটনাটি ঘটলো, সেটাতো অবশ্যই প্রমাণ করছে যে, নিরাপত্তাহীনতা অবশ্যই রয়েছে৷’’

এর আগে হোলি আর্টিজানের মামলার রায়ের দিন দণ্ডিত দুই আসামি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আদালত অঙ্গনেই মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি পরেছিল৷ সেটিও তখন ব্যাপক আলোচনায় এসেছিল৷

ফিরে দেখা: জঙ্গি হামলার টার্গেটে বিচারালয়

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর সবচেয়ে বড় হামলাগুলো সিরিজ বোমা হামলার বছর ২০০৫ সালে ঘটেছে৷ সেই বছরের ১৪ নভেম্বর সকালে ঝালকাঠির জেলা জজ আদালতের বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে বোমা হামলায় নিহত হন বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ৷

একই বছরের ২৯ নভেম্বর গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির দুই নম্বর হল রুমে জেএমবির বোমা হামলায় চার আইনজীবীসহ ৯ জন নিহত হন৷ আহত হন অর্ধশতাধিক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী৷

একইদিনে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশের তল্লাশি চৌকির সামনে বোমা হামলা চালায় জেএমবি সদস্যরা৷ ওই ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া এবং শাহাবুদ্দিন নামে এক বিচারপ্রার্থীর প্রাণ যায়৷ আহত হয়আরো প্রায় ১০ ব্যক্তি৷

আসামি ছিনতাই: মুকিম গাজী থেকে শামীম-সোহেল

বাংলাদেশে আসামি ছিনতাইয়ের পুরোনো ইতিহাস ঘাঁটলে বের হয়ে আসবে এক সময় দেশজুড়ে পরিচিত ডাকাত মুকিম গাজীর নাম৷

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে আদালত থেকে অনেক আগে মুকিম গাজী পালিয়েছিল৷’’

স্মৃতি হাতড়ে মুকিম গাজীর ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেইদিন ঢাকার সিএমএম আদালতে যখন মুকিম গাজীকে হাজির করা হয, তখন ডান্ডাবেড়িও পরেছিলেন তিনি৷ দুপুরে খাওয়ার সাথে তার কাছে সহযোগীরা পৌঁছে দেয় পিস্তল৷ সেই পিস্তল দিয়ে ডান্ডাবেড়ি ভেঙে পালান তিনি৷’’

অবশ্য দ্রুতই তাকে আবারো গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান দুলাল৷

আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকের শুরুর এক আলোচিত ডাকাত ছিলেন এই মুকিম গাজী৷ ১৯৯৩ সালের দিকে গ্রেপ্তার এই আসামির বিভিন্ন মামলায় শতাধিক বছরের জেল হয়৷ দুইবার কারাগার থেকে পালান তিনি৷ তবে দুইবারই পরে তিনি ধরা পড়েন৷ জেল পলাতক আসামি হিসাবে তার মাথায় উঠে লাল টুপি৷ কাশিমপুর কারাগারে পৃথক সেলে তাকে আলাদা নজরে রাখা শুরু করে কর্তৃপক্ষ৷

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলালছবি: Privat

তবে আসামি পলায়ন বা ছিনতাইয়ের গল্পে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে৷ সেইদিন জঙ্গি সংগঠন জেএমবির তিন নেতাকে নিয়ে পুলিশ যাচ্ছিল ময়মনসিংহে৷ পথে তাদের উপর হামলা করে জঙ্গিরা৷ শুরু হয় গোলাগুলি৷ জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারায় এক পুলিশ সদস্য৷ তারা ছিনিয়ে নেয় সেই তিন জঙ্গি নেতাকে৷ যাদের একজন পরে ধরা পড়লেও দুই জন পালিয়ে যায় ভারতে৷ অবশ্য সেখানে একজন ধরা পড়ে৷ আরেকজনের খবর এখনো দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷

তবে সব ঘটনাই যেন ছাপিয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও জনাকীর্ণ বিচারিক আদালত ঢাকা কোর্টে দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা৷ পুলিশকে স্প্রে মেরে জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়৷

আসামি ছিনতাইয়ের এই ঘটনার পর ঢাকার আদালত এবং আসামি আনা নেয়া নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন৷ সরকার এ বিষয়ে রেড এলার্টও জারি করেছে৷ তবে বিষয়টা এ রকম নয় যে, ২০১৪ সালের পর এবারই প্রথম আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে৷

চলতি নভেম্বরের ৬ তারিখে সাতক্ষীরায় পুলিশের উপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে৷ যেখানে ৫ পুলিশ আহত হয়৷

একইদিন গাইবান্ধার দুর্গম চরে সাদা পোশাকে আসামি ধরার পর হামলার শিকার হন পাঁচ পুলিশ সদস্য৷ ছিনিয়ে নেয়া হয় আসামি৷

১৯ নভেম্বর আসামি ছিনতাইয়ের অপর চেষ্টাটি ঘটে চট্টগ্রামে৷ সেখানে সংঘাতে ৫ পুলিশ আহত এবং এক নারী নিহত হয়৷ বছরের অন্য সময়গুলোতেই প্রায়ই আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে৷

নিরাপত্তা: কারাগার থেকে আদালত

সম্প্রতি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে দুই জঙ্গিকে আদালত এলাকা থেকে ছিনতাই করা হয়; আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ছিনতাইয়ের এই ছক করা হয় কারাগারে বসেই৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি রিট করেছেন৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনেক আসামির আইনজীবী হিসাবেও তিনি কাজ করেছেন৷

এটা (যাত্রাপথের নিরাপত্তাহীনতা) সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের দুর্বলতা: শিশির মনির

আদালতের ভেতরে বাইরে এই আসামিদের অধিকারের সীমানা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বা একাধিক আসামিকে কনডেম সেল নামে পরিচিত আট ফিট বাই আট ফিট একটা রুমে রাখা হয়৷

‘‘এরা সপ্তাহে একবার সরকারিভাবে আত্মীয় স্বজনের সাথে ফোনে কথা বলতে পারে৷ আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলতে পারে৷ কোন কোন জায়গায় কনডেম সেলের সামনে একটা বারান্দা আছে, এই বারান্দায় তারা হাঁটতে পারে, সেখানে পরস্পরের সাথে তারা দেখাও করতে পারে৷’’

‘‘তাদের সাথে তাদের আত্মীয় স্বজন দেখা করতে পারে, আইনে আছে প্রয়োজনমত৷ এক মাসের মধ্যে একবার দেখা করতে পারবে৷ সেটা দূরত্ব বজায় রেখে৷ এ সময় দেখার দূরত্বে একজন কনস্টেবল থাকলেও তিনি আসামি ও স্বজনদের কথা শুনতে পান না৷

‘‘আইন অনুযায়ী কনডেম সেলে থাকা আসামিদের অন্য মামলা থাকলে তাদেরকে আনতে আদালতে৷’’

শিশির বলেন, শুনানির সময়, সাক্ষীর সময়, যুক্তিতর্কের সময় আসামির উপস্থিতি অনিবার্য৷ যেহেতু এই আসামি রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকে, সে জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাকে হাজির করা৷ এটার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ আর কেউ জামিনে থাকলে ব্যক্তিগতভাবে হাজিরা দিতে হয়৷

যাত্রাপথের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের দুর্বলতা৷ আইন অনুযায়ী যেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা৷ যে যথাযথ পদ্ধতি মানার কথা, আনা নেয়ার ক্ষেত্রে কিংবা ভেতরে থাকার ক্ষেত্রে৷

তিনি বলেন, কনডেম সেলে থাকা একজন বন্দি আইন অনুযায়ী সপ্তাহে একবার (পরিবারের সাথে) যোগাযোগ করবে৷ এর বাইরে যোগাযোগ করতে যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয় এগুলো সে কোথায় পায়, কার মাধ্যমে পায়, কীভাবে পায়?

‘‘শুধু তাই নয়৷ আপনি দেখবেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে যে, জেলের ভেতরে অনেকে বাসা বাড়ির মতো করে থাকে৷ তা কী করে থাকে?’’

‍‍‘‘আনা নেয়ার নিরাপত্তা দিতে না পারা পুলিশ কর্তৃপক্ষের অক্ষমতা বা অনভিজ্ঞতা দায়ী৷ আর জেলে থাকা অবস্থায় তারা যে বেআইনি কাজ যদি কেউ করে থাকে, সে জন্য জেল কর্তৃপক্ষ দায়ী৷’’

‘‘আমাদের দেশে এ রকমও দেখবেন যে, আজ জেলে গেছে, কালকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেছে৷ পিজি হাসপাতালে রাজার হালে কেউ কেউ থাকে৷ যাদের এ রকম ইনফ্লুয়েন্স থাকে৷ এগুলো আইনের দোষ না৷ এগুলো হলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জড়িতদের অবহেলা এবং বেআইনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হওয়া দায়ী৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা থেকে বের হতে হলে প্রথম কাজ হলো, কারাগারে থাকুক, কোর্টে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে হোক, আর কোর্টের মধ্যে হোক, এক্ষেত্রে যে বিধিবিধান আছে, কারাবিধি আছে, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের বিধান স্পষ্টভাবে পালন করতে হবে৷ প্রভাবশালী মহলের কেউ জেলে গেলে তিনি রাজার হালতে থাকবেন, আর গরিব মানুষ থাকবেন অবহেলায়, এই বৈষম্য বন্ধ করতে হবে৷ এগুলোকে কেন্দ্র করে দুর্নীতিকে ট্র্যাকল দিতে হবে৷

‘‘যারা ভালোভাবে থাকেন, ভালোভাবে থাকতে চান, বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে চান, জেল কর্তৃপক্ষ যাদেরকে এই সুযোগ সুবিধা দেন, পত্রিকায় এসেছে এগুলোর ব্যাপারে কী রকম উৎকোচ লেনদেন হয়, এ ব্যাপারে আমি মনে করি, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সকল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক ভূমিকা পালন করতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এই জিনিসগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে কারাগার সত্যি সত্যিই একটা নিরাপদ স্থানে পরিণত হবে৷ আসামিরাও আইন অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে৷ সুবিধাভোগী যারা (বেশি) সুবিধা নিতে চায়, আইন অনুযায়ী তাদেরটা অবশ্যই বারণ করতে হবে৷’’

‘‘এই পদ্ধতি ছাড়া আমরা কখনোই কারাগারের ভেতরকার এবং আসামিদের আনা নেয়ার ক্ষেত্রে যে সেফটি সিকিউরিটি মেইনটেইন করতে পারবো না৷’’

ঢাকার আদালতে জঙ্গি: ভয়টা কোথায়?

পুলিশের উপর হামলা করে ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর আদালতকে ঘিরে জঙ্গি তৎপরতার উদ্বেগ ছড়িয়েছে নতুন করে৷

এই ঘটনায় আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাত্র একজন কনস্টেবল দুইজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিকে নিয়ে এসেছে৷ এটা কীভাবে হতে পারে?

এই ঘটনার পর ভয়ের কথা জানিয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজুর রহমান মন্টুও৷

ঢাকার যে আদালতে এই ঘটনাটি ঘটেছে, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিচারিক আদালত৷ তবে এখানকার আইনজীবীরা দাবি করেন, আইনজীবী সংখ্যার দিক থেকে এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় আদালত৷ কারো কারো মতে, পৃথিবীর মধ্যে এত আইনজীবীর আদালত আর দ্বিতীয়টি নেই৷

ফিরোজুর রহমান মনে করেন, আইনজীবী সংখ্যার দিক থেকে ঢাকার আদালতকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত বলা যেতে পারে৷

তার দাবি, এখন এই আদালতে শিক্ষানবিশসহ মোট আইনজীবীর সংখ্যা প্রায় ৮৩ হাজার৷

এটি আবার পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ এক এলাকায় অবস্থিত৷ ঢাকার প্রধান নদী-বন্দর সড়কে অবস্থিত এই আদালতের পাশেই রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজের মত বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷

দেড় কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহর এবং ঢাকা জেলার অন্যান্য এলাকার মানুষকে বিচারের জন্য আসতে এখানে৷ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বহু মামলার বিচারও হয় এখানে৷

এসব কারণে ঢাকার আদালতে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে অনেকের মাঝে৷

এই আদালতের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান বলেন, আদালত অঙ্গনের চারপাশে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে৷ নিশ্ছিদ্র নিরাপদ বলয় সৃষ্টি করতে হবে৷ আইনজীবী মহল পুলিশ বিভাগসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা থাকবে, তাদের আরো সতর্ক হতে হবে৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বার থেকে উদ্যোগ নিচ্ছি, আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো৷

ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর উদ্বেগ ছড়িয়েছে অন্য আদালতগুলোতেও৷ নিরাপত্তা জোরদার করার খবর পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন আদালত থেকে, যার মধ্যে রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও৷

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীর সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল বলেন, সুপ্রিম কোর্টে আমাদের অনেকগুলো গেট রয়েছে৷ সেখানে আমাদের সীমিত চলাচল৷ সেখানে চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করছি৷ সেখানে যাকেই সন্দেহ হচ্ছে, তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হচ্ছে৷

‘‘মোটামুটি বলা যায়, আমাদের দিক থেকে যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার, তা আমরা নিয়েছি৷’’

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্যদেরকে বলেছি, যাদের গাড়ি আছে, তারা গাড়ির স্টিকার নেবে৷ সবাইকে তাদের পরিচয়পত্র সাথে রাখতে বলেছি৷ যেন কোন জিজ্ঞাসাবাদে কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়৷ আর সার্বিকভাবেও আমাদের একটা নিরাপত্তা পদক্ষেপ আছে৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো নিরাপত্তাহীনতা আমাদের মধ্যে তৈরি হয় নাই৷ জাতি হিসাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করা জাতি৷ একটা সাহসী জাতি৷ সেই নিরাপত্তাহীনতা আমাদের মধ্যে কখনোই তৈরি হয় না৷ কিন্তু এটি সহজ করে নেয়ার বিষয় না৷ এটিকে শক্ত করে নিতে হবে৷

তিনি বলেন, যতকিছুই হবে, আমাদের আদালতের নির্বিঘ্ন কার্যক্রম চলছে, চলবে৷ এটা কখনোই হয়নি৷ যখন আদালতকে টার্গেট করে বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রম চলেছিল, তখনো হয়নি৷ এখনো মানসিকভাবে আমরা বিপর্যস্ত না৷

‘‘আমরা এটাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি৷ তবে আমরা সিরিয়াসলি নিচ্ছি বিষয়টাকে৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিচ্ছে, বার নিচ্ছে, সরকারও নিচ্ছে৷ এটাকে সাংস্কৃতিকভাবে মোকাবেলার জন্য সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা দেশকে নিয়ে ভাবে, যেমন, বিভিন্ন এনজিওগুলো তারাও এ বিষয়ে প্রচেষ্টা নেবে বলে আশা করি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা জনগণ৷ আমাদেরও একটা দায়িত্ব আছে৷ বিরোধী দলেরও দায়িত্ব আছে৷ সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে আমরা যদি মনে করি, জঙ্গিদের আমরা মোকাবেলা করবো৷’’

‘‘এটা একটা ক্রস বর্ডার ইস্যু৷ জঙ্গিবাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশন হওয়া উচিত৷ সারা বিশ্বে রাষ্ট্রনায়করা বসবে৷ সেখানে কিছু পলিসি তৈরি হবে৷’’

পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের দাবি

আদালত অঙ্গনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পুলিশের আলাদা একটি ইউনিট গঠনের দাবি করেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷

এখানে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি মার্শাল আর্টের মত দক্ষতার কথা উল্লেখ করেন৷

তিনি বলেন, ‘‘মাত্র একজন কনস্টেবল দুইজন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে যদি নিয়ে যায়, এটা তো হতেই পারে না৷ কী ধরনের আসামি সেটাও ভাগ করার ব্যাপার আছে৷ চুরির মামলার একজন আসামি আর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামির ক্ষেত্রে তো সতর্কতা অনেক বেশি প্রয়োজন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিরা জোরেশোরে কাজ করে যাচ্ছে৷ তাদের পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগুচ্ছে৷ আমরা সফল হয়েছি অনেক ক্ষেত্রে৷ কিন্তু পুরোপুরি তাদের পরিকল্পনা বন্ধ হয়ে যায় নাই৷ তাদেরকে পুরোপুরি দমিয়ে দিতে পারিনি৷’’

বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে দেশের বিভিন্ন হামলার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি৷

সে রকম হামলা হলে তা ঠেকিয়ে দেয়ার মতো নিরাপত্তা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি তো মনে করি, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই৷ লোকবল বাড়াতে হবে৷ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ পুলিশের যথেষ্ট লোকবল আছে কি-না, সেটাও দেখার বিষয়৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এ ব্যাপারে পুলিশের একটি আলাদা ইউনিট হওয়া উচিত৷ যারা আদালতে নিরাপত্তা দেবে, বিচারকদের নিরাপত্তা দেবে, যারা আসামিদের যেন ছিনিয়ে নেয়ার মত ঘটনা ঘটতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেবে৷ সেই ইউনিটে বিশেষায়িত পুলিশদের নিয়োগ করতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখানে দুইটি কর্তৃপক্ষ যুক্ত৷ একটা হচ্ছে, জেল কর্তৃপক্ষ, আরেকটা হচ্ছে, পুলিশ৷ জেল কর্তৃপক্ষের জেলের ভেতরে৷ যখন তারা আসামিকে পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়, তখন তাদের দায় দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়৷ সেখানে প্রশিক্ষণ, জনশক্তির বিষয়টা আসে৷’’

‘‘এখানে জেল কর্তৃপক্ষের দায় নেই, সেটা বলা ঠিক নয়৷ কারণ আমরা অতীতেও দেখেছি, তারা সহজেই মোবাইলে কথা বলতে পারছে৷ একে অন্যের সাথে কথা বলছে৷ ষড়যন্ত্র করতে পারে৷ এগুলোর ব্যাপারে খুব কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন৷’’

‘‘পুলিশ ভ্যানেও অনেক রকমের দুর্নীতি হয়৷ আমরা কিন্তু এ সব জানি৷ পয়সার বিনিময়ে তাদেরকে মোবাইল দেয়া হচ্ছে৷ একটি ঘটনায় একজন আসামিকে এমন টুপি দেয়া হয়েছিল, যেখানে জঙ্গিবাদের প্রচারণা হয়৷’’

‘‘আসামিদের যখন আদালতে আনা হয়৷ প্রত্যেক আদালতে কিন্তু জেল রয়েছে৷ সেখানে যাদেরকে (যে সব পুলিশ সদস্যকে) দায়িত্ব দেয়া হয়, তাদের পারিবারিক ইতিহাস ঘেটে দেখার প্রয়োজন রয়েছে৷’’