1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগামী বছর অবসর চাইছেন দলাই লামা

২৩ নভেম্বর ২০১০

তিব্বতের প্রবাসী সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার আর বইতে চাইছেন না সেদেশের আপামর মানুষের প্রবীণ ধর্মগুরু দলাই লামা৷ জানা গেছে, আগামী বছরেই এই দায়িত্ব থেকে নাকি অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/QGX5
দলাই লামা (ফাইল ছবি)ছবি: AP

সেই ১৯৬০ সাল থেকে ভারতের উত্তরাংশের ধরমশালায়, এক পাহাড়ি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে প্রবাসী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই এই দায়িত্বভার টানছেন তিনি৷ তিব্বতের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অনেক সয়েছেন তিনি৷ অনেক দায়িত্বই বহন করেছেন এই প্রবীণ, প্রাজ্ঞ মানুষটি৷ আজ অর্ধশতক পরে তাঁর মনে এখন অবসরের চিন্তাটিই প্রবল হয়ে উঠেছে৷

মঙ্গলবার দলাই লামার একজন মুখপাত্র তেনজিন টাকলা জানিয়েছেন, আগামী বছরেই দলাই লামা তাঁর দায়িত্ব থেকে অবসর নেবেন বলে মনস্থ করেছেন৷ তিনি বলেন, ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো সরাসরি একজন রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন করা হয়েছে৷ আর তারপর থেকেই দলাই লামা তাঁর বিবিধ দায়িত্ব কমানোর কথা এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বারংবার বলে আসছিলেন৷ অবশেষে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে অবসরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷

দলাই লামার মুখপাত্র তেনজিন আরো বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দলাই লামা নাকি তিব্বতের প্রবাসী সংসদের কাছে তাঁর অবসরে যাওয়ার প্রস্তাবটি রাখার কথা ভাবছিলেন৷ তিনি জানিয়েছেন, দলাই লামার এই অবসর গ্রহণের মধ্যে তাঁর রাষ্ট্রপ্রধান এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির বিষয়ইটিই মুখ্য৷ তিব্বতিদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে তাঁর যে ভূমিকা এবং অপরাপর কর্তব্য সেসব এর অর্ন্তভুক্ত নয়৷ কেবলমাত্র তিনি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এবং প্রশাসনিক নানাবিধ কাগজপত্র দেখা, তাতে স্বাক্ষর করা এইসব থেকে মুক্তি চাইছেন৷

তেনজিন আরো জানিয়েছেন, অবশ্য অবসর গ্রহণ করলেই যে এই মানুষটি তিব্বতের রাজনীতির সর্বোচ্চ অবস্থানটি থেকে সরে যাচ্ছেন তা নয়৷ তিনি তো দলাই লামা, কাজেই তিব্বতিদের কাছে তাঁর অবস্থানটি চিরকাল একরকমই থাকবে৷ এই রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্বের আসনটি তার৷ শুধু দাপ্তরিক কাজকর্ম থেকে অবসর নেবেন তিনি৷

নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত ৭৫ বছর বয়েসি এই প্রবীণ ধর্মগুরু চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিব্বতিদের স্বাধিকার আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে বিশ্বনন্দিত৷ এছাড়াও বিশ্বে মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলার একজন পুরোধা প্রবক্তা৷ তিনি বৌদ্ধ ধর্মমত এবং বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষার জন্যও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন৷ গত কয়েকমাসে তিব্বতিদের এই ধর্মগুরু বেশ কয়েকটি দেশ টানা সফর করেছেন৷ এরমধ্যে রয়েছে ক্যানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড এবং জাপান৷

দলাই লামার মুখপাত্র তেনজিন এই ধর্মীয় নেতার অবসর গ্রহণ প্রসঙ্গে আরো জানিয়েছেন, ২০১১ সালের মার্চে যখন সংসদ অধিবেশন শুরু হবে সেই অধিবেশনের সময়টিতে দলাই লামা তাঁর অবসর গ্রহণের বিষয়টি উত্থাপন করবেন৷ হয়তো এরপরের ছয়মাস ক্রমশ দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেবেন তিনি৷ তেনজিন অবশ্য বলেছেন, সংসদে আলোচনার জন্য উঠবে এটা নিশ্চিৎ হলেও অবসর গ্রহণের বিষয়টি এখনো নিশ্চিৎ নয়৷

এদিকে দলাই লামার অবসর গ্রহণ প্রসঙ্গে প্রবাসী সংসদের স্পিকার পেনপা টিসেরিঙ্গ বলেছেন, প্রত্যেক তিব্বতিই চান দলাই লামা আজীবন, অন্তত যতদিন তাঁর শারীরিক সামর্থ্যে সম্ভব হয় তিনি এই দায়িত্বে থাকবেন৷ এটা অতি অবশ্যই একটি বড় ধরণের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ঘটনা যা ঘটতে চলেছে৷ আমাদের জন্য এটি অনেক বড় একটি বিষয়৷ তিনি সংসদে কি বলেন এখন আমাদের আসলে তার জন্যই অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে চীন এবং তিব্বতের মধ্যস্থতার সময়ে তাঁর উচিৎ মূল দায়িত্ব নেয়া৷ তিনিই তো আমাদের কন্ঠস্বর, বলেন স্পিকার পেনপা৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক