আকাশের ক্লাসরুম
৯ জুন ২০১৬আখেন ফলিত বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রদের গ্লাইডিং শিখতে হয়, তা জানেন? মানে শিখলে ভালো, কেননা, ভবিষ্যতে যারা বিমান তৈরি করবেন, তাদের বিমান চালনা সম্পর্কে একটা ধারণা থাকা ভালো৷ আর মজাটা হলো, উপরি রোজগার...৷
ক্লাসরুম কিংবা লেকচার হলের পড়া নয় – এ হলো মাটি ছেড়ে আকাশে ওঠা! নিঃশব্দে ভেসে যাওয়া...
আবার ল্যাবরেটরিতে একটি জেট ইঞ্জিনের ধোঁয়া বেরোনোর উপর নজর রাখা৷ অথবা একটি স্যাটেলাইট তৈরি করে সেটিকে কক্ষপথে পাঠানো৷ আখেনের ফলিত বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সবই সম্ভব৷
ভোরবেলা৷ যারা ভবিষ্যতে বিমানপোত তৈরি করবেন, তাদের জন্য একটি বিশেষ অধিবেশন৷ আগামী দু'সপ্তাহ ধরে গ্লাইডিং হবে একমাত্র পাঠ্য বিষয়৷ এয়ারোস্পেস ইঞ্জনিয়ারিংয়ের ছাত্রদের পক্ষে এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এই উড়ন্ত পাঠশালার মাস্টারমশাই হচ্ছেন পেটার ডামান৷ পাইলট ও ফ্লাইং ইনস্ট্রাকটর হিসেবে তিনি এত স্বেচ্ছাসেবী পেয়ে খুব খুশি৷ তবুও কাজটা পুরো মনোযোগের সঙ্গে করতে হবে৷ আখেনের ফলিত বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পেটার ডামান জানালেন, ‘‘আকাশে ওঠার আগে প্রত্যেকটি বিমানের খুঁটিনাটি দিকগুলোও ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হয়৷''
প্রযুক্তি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, টিমওয়ার্কও সেইরকম গুরুত্বপূর্ণ৷ এই ‘সামার স্কুল'-এর লক্ষ্য হলো তথাকথিত ‘সফ্ট স্কিল'গুলোর বিকাশ ঘটানো,তা যেমন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, তেমনই সামাজিক ক্ষেত্রে৷ ডামান বললেন, ‘‘ফ্লাইট মেকানিকস সম্পর্কে তত্ত্বগতভাবে যা শেখানো হয়েছে, তার বাস্তবিক-ব্যবহারিক দিকটাকে চেনায় এই সামার স্কুল৷ ছাত্ররা নিজেরাই অভিজ্ঞতা লাভ করেন, একটি বিমানকে ত্রিমাত্রিক ব্যাপ্তিতে নিয়ন্ত্রণ করতে কেমন লাগে – এ কাজে গ্লাইডার বিমান খুবই উপযোগী৷''
একজন শিক্ষানবিশ আর একজন প্রশিক্ষক, ৪০০ কিলোগ্রাম ওজনের হালকা গ্লাইডারটিতে উঠলেন দু'জনে৷ গ্লাইডারে চড়ে ওড়ার সময় ছাত্রদের যে অভিজ্ঞতা হবে, লেকচার থিয়েটারে তা সম্ভব নয়৷ যেমন ইওহানেস ইয়ানকে শোনালেন, ‘‘টেক-অফের আগে আমি চেকলিস্ট অনুযায়ী সব কিছু দেখে নিই৷ আগামী কয়েক মিনিটে যা ঘটতে চলেছে,তার উপর মনঃসংযোগ করা প্রয়োজন৷ গ্লাইডারটা স্টার্ট করার সময় একটু ঝাঁকুনি হয়, তারপর হঠাৎ মাটি ছেড়ে আকাশে ওঠে৷''
কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার এয়ারস্পেস সুপারভাইজ করছেন আর পাইলটদের সঙ্গে বেতারে যোগাযোগ রাখছেন৷ একসঙ্গে তিনটি বিমান আকাশে থাকবে৷ প্রপেলার যুক্ত যে টাওপ্লেন গ্লাইডারটিকে টেনে ৬০০ মিটার উচ্চতায় নিয়ে যাবে, সেটি চালানোর দায়িত্ব পেটার ডাহমানের৷ বিমানগুলি প্রতি দশ মিনিট অন্তর স্টার্ট করবে৷ ভালো থার্মাল পেলে একটি গ্লাইডার চার ঘণ্টা অবধি আকাশে থাকতে পারে৷
গণিতের ফর্মুলা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা৷ মাধ্যাকর্ষণের দ্বিগুণ বা তিনগুণ শক্তি এখানে নিজের শরীরেই অনুভব করা যায়৷ নিকো হোক উচ্ছ্বসিত, ‘‘কোনো সীমানা নেই, ত্রিমাত্রিক উড়াল৷ বিমান যে কোনো দিকে চালানো যায়৷ এ অভিজ্ঞতার কোনো তুলনা নেই৷''
ছাত্ররা এ থেকে দু'ভাবে লাভবান হন: প্রথমত বিমানচালনা সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পেরে; দ্বিতীয়ত, এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিমানচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে চাকরি পেতেও সুবিধা হয়৷