আইকন লেডি ডায়ানা
তাঁর নানা গাউন, ককটেল ড্রেস, কস্টিউম ইত্যাদি আজ অবধি নিলামে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হয়৷ ফ্যাশন ছিল প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি৷ লন্ডনের একটি প্রদর্শনীতে ঠিক সেই সত্যটাই যেন প্রকাশ পেয়েছে৷
‘কুইন অফ হার্টস’
সামনে তাঁর সেই কিংবদন্তিপ্রতিম ‘ভেরসাচে’ ড্রেস , লেডি ডায়ানা ১৯৯১ সালের একটি ফটো শুট-এ যা পরেছিলেন৷ এই ড্রেসটি নাকি লেডি ডাই-এর জন্য জান্নি ভেরসাচে-র প্রথম সৃষ্টি৷ দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল৷ ড্রেসটি ২০১৫ সালের একটি নিলামে দু’লাখ ডলার মূল্যে বিক্রি হয়৷
ফ্যাশনের আয়নায় জীবন
আশির দশকের ঝালর আর লেস দেওয়া সব ‘রোম্যান্টিক’ ড্রেসের পর আসে ফ্যাশন ডিজাইনারদের সৃষ্ট ইভনিং ড্রেস-এর যুগ৷ প্রিন্সেস ডায়ানা সেই সান্ধ্য পোশাককে কূটনীতির অস্ত্রে পরিণত করেন৷ নব্বই-এর দশকের গোড়ায় যখন তাঁর দাম্পত্য জীবনে সংকটের ছায়া ঘনাচ্ছে, তখন তিনি কি পরছেন, সেটা ডায়ানার পক্ষে হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতা ও ক্ষমতার প্রতীক৷
সূচনায়...
লেডি ডায়ানা স্পেন্সার ফ্যাশনের জগৎ সম্পর্কে বিশেষ জানতেন না৷ তাঁর নিজের একটি ফ্রক, একটি ব্লাউজ ও একজোড়া ভালো জুতো ছিল – বাকিটা নাকি তিনি বান্ধবীদের কাছ থেকে ধার করতেন৷ এই হালকা গোলাপি রঙের শিফন ব্লাউজটি তিনি পরেছিলেন ১৯৮১ সালে, তাঁর প্রথম সরকারি পোর্ট্রেট তোলার সময়৷ বাদামি রঙের টুইড কস্টিউমটি তিনি পরেছিলেন বালমোরালে তাঁর মধুচন্দ্রিমায়৷
চার্লসের সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায়
গোড়ায় তিনি ছিলেন শুধু প্রিন্স চার্লসের সহধর্মিনী৷ ১৯৮১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে চার্লসের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হবার পর ডায়ানাকে ধীরে ধীরে তাঁর নতুন জীবন ও ভূমিকায় অভ্যস্ত হতে হয়৷ যতো তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, ততোই তাঁর পোশাক আরো বেশি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হয় ওঠে৷
পরিচ্ছদই বার্তা
যত তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে, ততই ডায়ানা তাঁর পোশাকের মাধ্যমে কূটনৈতিক বার্তা দিতে শুরু করেন৷ যেমন একবার সৌদি আরব সফর করার সময় তাঁর রেশমি পোশাক বাজপাখির ছবি দিয়ে সাজানো ছিল – কেননা বাজপাখি সৌদি আরবের প্রতীক৷
ট্রাভোল্টার ড্রেস
লন্ডনে ডায়ানার পোশাক-আশাকের প্রদর্শনীতে সবচেয়ে চোখধাঁধানো ড্রেস সম্ভবত ভিক্টর এডেলস্টাইন-এর ডিজাইন করা একটি নীল মখমলের গাউন৷ এই ড্রেসটি পরে ডায়ানা ১৯৮৫ সাল হোয়াইট হাউসে জন ট্রাভোল্টার সঙ্গে নেচেছিলেন৷ এর দু’বছর পরে জার্মানির বন শহরে তাঁকে এই ড্রেসটি পরতে দেখা যায়৷
ফ্যাশন আইকন হবার পথে
তাঁর আত্মবিশ্বাস যত বাড়তে থাকে, ততই নিজের ভাবমূর্তি যে কী হবে, তা নিজে নির্ধারণ করতে ও পোশাকের মাধ্যমে তা ব্যক্ত করতেও শুরু করেন ডায়ানা৷ তাঁর প্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন ক্যাথেরিন ওয়াকার৷ ওয়াকার প্রথমে বিভিন্ন ইভনিং গাউন ও পরে সুদৃশ্য দিনের কস্টিউমে সাজান ডায়ানাকে, যা পরে ডায়ানা নানা চ্যারিটি বলে যেতেন: স্যাভয় হোটেলে ডিনার থেকে শুরু করে এইডস রোগাক্রান্তদের পরিদর্শন অবধি৷
ফটোগ্রাফারদের প্রিয়
ডায়ানার সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সম্পর্ক ছিল প্রেম ও বৈরিতার৷ কখনো তিনি পাপারাৎসিদের বিরুদ্ধ অভিযোগ করতেন, কখনো বা জেনেশুনে মিডিয়ায় গোপন ও অন্তরঙ্গ খবর ছড়াতেন৷ ডায়ানাকে ঘিরে একটা আস্ত শিল্প – বা ব্যবসা – গড়ে ওঠে, যাদের কাজই ছিল ডায়ানার ছবি তোলা আর তাঁর ‘গোপন খবর’ ফাঁস করে অর্থোপার্জন করা৷
প্রিন্সেস থেকে কুইন অফ হার্টস
১৯৯২ সালে চার্লস আর ডায়ানার বিচ্ছেদের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়৷ এর পর থেকে ডায়ানার ‘ওয়ার্ড্রোবের’ প্রকৃতিও যেন বদলে যায়: প্রিন্সেস অফ ওয়েলস-এর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এক ‘পিপলস প্রিন্সেস’ – জনগণের রাজকুমারী – যার অকালমৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার যাকে কুইন অফ হার্টস বলে অভিহিত করেছিলেন৷
আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ এক নারী
প্রদর্শনীর শেষ কামরাটিতে ডায়ানার প্রখ্যাততম ইভনিং গাউনগুলির মধ্যে পাঁচটি রাখা আছে৷ স্টার ফটোগ্রাফার মারিও টেস্টিনো-র সঙ্গে একটি ফটো সেসনে এই ড্রেসগুলি পরেছিলেন ডায়ানা৷ সেই কামরাটিতেই ঝুলছে ডায়ানার একটি আনন্দ ও আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ প্রতিকৃতি, যার বক্তব্য হলো, আমি নিজেকে নিয়ে সুখি৷
প্রতিবেদন: ইউলিয়া হিটৎস/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ