1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইএস শিবির থেকে সন্তানদের ফেরানোর চেষ্টা

২৪ জুলাই ২০২০

এক সময় সিরিয়ায় আইএস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা। সন্তানদের দেশে ফেরানোর লড়াই চলাচ্ছেন তাঁদের বাবা-মায়েরা।

https://p.dw.com/p/3fqXB
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Alleruzzo

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে সে দেশে ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি করে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা। মধ্য প্রাচ্য তো বটেই, ইউরোপ থেকেও বহু মানুষ সে সময় যোগ দিয়েছিলেন আইএস জঙ্গিদের সংগঠনে। এখন যাঁদের অনেকেই সিরিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক। ফ্রান্স-সহ বহু দেশ সেই আটক ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছে। যদিও আটক ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ, যতটা গুরুত্ব সহকারে সরকারের এ কাজ করা উচিত ছিল, তা করা হচ্ছে না। অনেকে ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ।

ফ্রান্সে ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আন্তোনিয়ো (আসল নাম নয়)। দীর্ঘ দিন শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করেছেন তিনি। বছর পাঁচেক আগে আচমকাই তাঁর মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বেশ কিছুদিন অপেক্ষার পরে আন্তোনিয়ো জানতে পারেন, তিউনিশিয়ার বন্ধুর সঙ্গে সিরিয়ায় চলে গিয়েছেন তাঁর মেয়ে। যোগ দিয়েছেন আইএসশিবিরে। আন্তোনিয়ো জানিয়েছেন, বাড়ি ছাড়ার কিছু দিন আগেই ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন তাঁর মেয়ে। তাঁর ধারণা, তিউনিশিয়ার ওই বন্ধুর মাধ্যমেই আইএস জঙ্গিদের সংস্পর্শএ এসেছিলেন তিনি।

আন্তোনিয়ো খবর পেয়েছেন, কিছু দিন আগে কুর্দ ক্যাম্পে আটক করা হয়েছে তাঁর ২৬ বছরের মেয়েকে। একটি বাচ্চাও হয়েছে তাঁর। খবর পাওয়ার পর থেকেই মেয়েকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছেন আন্তোনিয়ো। কিন্তু তারই মধ্যে খবর আসে ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তাঁর মেয়ে। বিষয়টি ফরাসি সরকারকেও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ ফরাসি সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে না।

ফ্রান্সে আইএস-এ যোগ দেওয়া ছেলেমেয়েদের পরিবারগুলি একটি সংগঠন তৈরি করে ফেলেছে। ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে আনার জন্য যারা লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দলের সদস্যদের বক্তব্য, প্রায় পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে কেবল ইউরোপ থেকেই আইএস-এ যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ফ্রান্স থেকে গিয়েছিলেন প্রায় দেড় হাজার জন। তাঁদের অনেকেই এখন বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি। তবে ক্যাম্প থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার খবরও পাচ্ছেন অনেকে। অনেকেরই ধারণা, কুর্দরা এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে সরিয়ে নিচ্ছে তাঁদের।

ফরাসি সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, তঁদের ছেলেমেয়েরা আআইএস-এ যোগ দিয়ে কী কী অপরাধমূলক কাজ করেছে, তা তাঁদের জানা নেই। অপরাধের শাস্তি তাঁদের পাওয়া উচিত, এ কথা মানেন তাঁরা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের বিচার যাতে নিরপেক্ষ হয়, সে বিষয়েও সরব তাঁরা। সে জন্যই ছেলেমেয়েদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর দাবি করা হচ্ছে।

ফরাসি সরকারের বক্তব্য, সিরিয়া থেকে অনেককেই ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া জারি আছে। তবে কাজটি করতে সময় লাগবে। সিরিয়ার এখনও যা পরিস্থিতি, তাতে দ্রুত কাউকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু সংগঠনটির বক্তব্য, সরকার ছেলেমেয়েদের ফিরিয়ে আনতে আদৌ আগ্রহী নয়।

কিন্তু কেন ফিরে আসতে চাইছেন ওই ফরাসি নাগরিকরা? এক সময় পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে যাঁরা আইএস জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়েছিলেন, কেন তাঁরা দেশে ফিরে আসতে চাইছেন? আইএস ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা এমন অনেকেরই বক্তব্য, তাঁদের সামনে কাচের স্বর্গ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সিরিয়ায় গিয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন, কী অবর্ণনীয় ঘটনা চলছে সেখানে। বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে ফের তাঁরা দেশে ফেরার চেষ্টা শুরু করেন। কেউ ফিরতে পেরেছেন, কেউ পারেননি। ছেলেমেয়ে হারানো পরিবারগুলির আশা, একবার ফিরিয়ে আনতে পারলে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবেন তাঁদের সন্তানরা।

এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)