আইএস পত্নীর বিরুদ্ধে রায় ইয়াজিদিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
২৬ অক্টোবর ২০২১জার্মানির লোনে শহরের ২৩ বছর বয়সি জেনিফার ডাব্লিউ. ইরাকে গিয়ে ঐ আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেছিলেন৷ নতুন জার্মান স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহায়তা করতে ঐ আইএস জঙ্গি ২০১৪ সালে একজন ইয়াজিদি নারী ও তার পাঁচ বছরের কন্যাশিশুকে অপহরণ করে দাস হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন৷ ২০১৫ সালের আগস্টের একদিন খুব ছোট অপরাধের শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের ঐ শিশুকে কড়া রোদের মধ্যে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল৷ ঐ অবস্থায় সে মারা যায়৷
জার্মানির ‘হায়ার রিজিওনাল কোর্ট অফ মিউনিখে' আড়াই বছর ধরে বিচার চলার পর জেনিফার ডাব্লিউ.কে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ বিচার চলার সময় জেনিফার দাবি করেছিলেন, ঐ ঘটনার সময় তিনি ক্ষমতাহীন ছিলেন৷ তার পক্ষে স্বামীর বিরোধিতা করা সম্ভব ছিল না৷
তবে আদালত মনে করেছেন, ঐ সময় জেনিফার হস্তক্ষেপ করতে পারতেন৷ তা না করে তিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন৷ তাই তাকে ‘দাস হিসেবে ব্যবহার করে হত্যার' দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে আজীবন কারাদণ্ডের দাবি করেছিলেন আইনজীবীরা৷ তবে আদালত ১০ বছর কারাদণ্ডের শাস্তির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, ঐ হত্যার পেছনে মূল দায়ী ব্যক্তি হলেন জেনিফারের স্বামী৷
আইএসের আমলে উত্তর ইরাকে বাস করা সংখ্যালঘু কয়েক হাজার ইয়াজিদি হত্যা ও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন৷ ধর্মের দোহাই দিয়ে আইএস ইয়াজিদিদের ‘শয়তানের পূজারি' হিসেবে বিবেচনা করতো৷
জার্মানির আদালত বলেছেন, আইএসে যোগ দিয়ে জেনিফার ডাব্লিউ. ‘ইয়াজিদি ধর্মের ধ্বংস' এবং ‘ইয়াজিদিদের দাস হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি' সমর্থন করেছেন৷ এই রায়ে স্পষ্টভাবে ইয়াজিদিদের গণহত্যার বিষয়কে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে - যা ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা৷
নিজেদের উপর নির্যাতন চালানো ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে কয়েক বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন ইয়াজিদিরা৷ এই প্রথমবারের মতো ইয়াজিদি গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে আইএসের কাউকে অভিযুক্ত করা হলো৷
এর আগে জার্মানির ড্যুসেলডর্ফের এক আদালত আইএসে যোগ দেয়া এক নারীর বিরুদ্ধে চারবছরের বেশি কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন৷ ঐ নারীর অপরাধ ছিল, তিনি তার জন্য কাজ করা এক ইয়াজিদি নারীকে অন্যের দাস হিসেবে ব্যবহার হতে দিয়েছিলেন৷
জেনিফার ডাব্লিউর বিরুদ্ধে রায় এটাই প্রমাণ করছে যে জার্মানি এসব ভয়ংকর অপরাধীদের বিচারের চেষ্টা করছে৷ তবে এই বিচার প্রক্রিয়া এটাও দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইরাক বা সিরিয়া থেকে প্রমাণ জোগাড় করা কতটা কঠিন৷ এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী জোগাড় করা, অপরাধের স্থান পরিদর্শন করা খুব কঠিন, কখনও তা অসম্ভবও৷
মাটিয়াস ফন হাইন/জেডএইচ