অস্তিত্বের সংকটে জাগুয়ার
মেক্সিকো থেকে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত নিজেকে মেলে ধরা, আমাজনের অববাহিকায় জাগুয়ারের অবাধ বিচরণ৷ মার্কিন মুলুকের কিছু অংশেও জাগুয়ারের দেখা মেলে৷ কিন্তু বনভূমি উজাড় করে শিল্পায়নের আগ্রাসনে সংকুচিত হয়ে পড়ছে বড় বিড়ালের আবাসস্থল৷
ঝুঁকিতে জঙ্গলের প্রতীক
বিড়াল প্রজাতির মধ্য সবচেয়ে শক্তিশালী ও পেশিবহুল হলো জাগুয়ার৷ আমেরিকার বিড়ালের মধ্যে সবচেয়ে বড় এটি৷ আর বিশ্বে তৃতীয়৷ শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ৷ তা দিয়ে ঘণ অরণ্যে ছদ্মবেশে ওত পেতে থাকে জাগুয়ার৷ এটাই তার শিকার কৌশল৷ কিন্তু কৃষিনির্ভর শিল্পায়নের প্রভাবে অস্তিত্বের সংকটে এই প্রাণি৷
ব্রাজিলে বেঁচে থাকার যুদ্ধ
হিসেব মতে, বনভূমি জুড়ে প্রায় ৬০ হাজার জাগুয়ারের বসতি৷ ‘চিংড়ি শিকারি’ বিড়াল, ঘনজঙ্গলে থাকতে বেশি পছন্দ করে৷ তবে কখনো কখনো জলাভূমি কিংবা আংশিক মরুঅঞ্চলেও বাস করে তারা৷ বলিভিয়া সীমান্ত লাগোয়া ব্রাজিলের পান্টালান জলাভূমিতে জাগুয়ারের সবচেয়ে বড় বসতি৷ বনভূমি উজাড় করে শিল্পায়ন হচ্ছে সেখানে৷ ফলে বড়বিড়ালের বসতি সেখানেও হুমিকের মধ্যে৷
গাছের ডালে আশ্রয়
বছরে অন্তত একবার প্লাবন আসে আমাজন নদীতে৷ প্লাবিত হয় নিম্নাঞ্চল৷ রেইনফরেস্টে তৈরি হয় বন্যা পরিস্থিতি৷ তখন গাছের ডালে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখে জাগুয়ার৷ শিকার, খাওয়া, বিশ্রাম--অন্তত চার মাস গাছের ডালে বসেই সারতে হয় সবটা৷ তবে গাছ বাইতে পটু শ কেজি ওজনের জাগুয়ার৷
সয়াবিনের চাষ
বিচরণ আর বসতির জন্য ঘন রেইনফরেস্ট খুব পছন্দ জাগুয়ারের৷ আমাজনের দক্ষিণ ঘেঁষে ব্রাজিলের মাটো গ্রসো রাজ্যে বসতি গড়েছে তারা৷ কিন্তু ভূমি মালিকরা বন কেটে সয়াবিনের চাষাবাদ শুরু করেছে সেখানে৷ গৃহস্থালি পশুর শিল্পপণ্য উৎপাদন করে, ইউরোপে রপ্তানির লক্ষ্যেই এই চাষবাস৷ এরফলে সেখানকার হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে জাগুয়ারের অবাধ বিচরণ বাধার মুখে৷
মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা
জন্মের পর অন্তত দু সপ্তাহ পযর্ন্ত অন্ধ থাকে জাগুয়ার ছানা৷ তাই জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত যত্ন আত্তি, লালন পালন সব দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেয় মা৷ কখনো কখনো বাবাও এগিয়ে আসে৷ বয়স এক থেকে দুই বছর হলেই সাবলম্বী হয় জাগুয়ার৷ বাবা-মাকে ছেড়ে, নিজের আবাস নিজেই গড়ে নেয়৷ বেঁচে থাকতে একটি জাগুয়েরর ২৫ থেকে ১৫০ বর্গকিলোমিটার বনভূমি প্রয়োজন৷
মেক্সিকোর পথে
বিপন্ন প্রাণির তালিকায় উঠে গেছে জাগুয়ারের নাম৷ তাই শিকার ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে মেক্সিকো৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণিকূলের সংখ্যা আশাতীতভাবে কমেছে৷ তবে জাগুয়ার ঠিক বিলুপ্তির মুখে আছে, এমন কিন্তু নয়৷ কোথাও কোথায় সংখ্যা বেড়েছে৷ এক সময় বিলুপ্তির আশঙ্কা থাকলেও, সবশেষ গণনায় দেখা গেছে, চার হাজার ৮শ জাগুয়ার আছে মেক্সিকোতে৷