1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অস্ট্রেলিয়ায় আক্তারকে খুঁজে দিল ইন্টারনেট

১৮ নভেম্বর ২০১০

আক্তার হোসেন নামক এক তরুণের অপারেশন হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি হাসপাতালে৷ গত বছর বিডিআর বিদ্রোহের সময় তার ডান হাতে আর বুকে গুলি লাগে৷ এরপর তার প্রায় অচল হাতটাকে পুরো সচল করেছেন অস্ট্রেলীয় ডাক্তাররা৷

https://p.dw.com/p/QCDV
অস্ট্রেলিয়ায় অপারেশনের পর আক্তার৷ ছবিটি পাঠিয়েছেন জুলিয়াছবি: Julie Webber/Children First Foundation

আক্তারের খোঁজে নামার আগে এটুকুই ছিল প্রাপ্ত তথ্য৷ ইন্টারনেট ঘেঁটে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম থেকে আরো কিছু তথ্য পাওয়া গেলে৷ কিন্তু এই দিয়েইতো রেডিও রিপোর্ট তৈরি সম্ভব নয়, বরং প্রয়োজন আক্তারের মন্তব্য, ডাক্তারের মন্তব্য সঙ্গে সম্ভব হলে তার সহযোগিদের কথাবার্তা৷

টেলিফোন, ই-মেল

শুরু হলো আক্তারের খোঁজ৷ জার্মানির বনে ডয়চে ভেলে কার্যালয়ে বসে অস্ট্রেলিয়ায় খোঁজাখুজি৷ প্রথমে ফেসবুকে খোঁজ, পাওয়া গেল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক সাংবাদিককে৷ নাম ফজলুল বারী, তিনি আছেন সিডনিতে৷ ফোনে বারী ভাইকে পুরোটা বলার পরে বুঝলাম, তিনিও বিষয়টি সম্পর্কে তেমন অবগত নন৷ তাই বললেন, একটু খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাবো৷

যাই হোক, খোঁজের জন্য সময় দিলাম বারী ভাইকে৷ এদিকে, আমার হাতে সময় কম৷ এরই মাঝে জানলাম ছেলেটা অস্ট্রেলিয়ায় আছে আর দুই-তিন দিন৷ তাই যা করার এখনই করতে হবে৷ অবস্থা বেগতিক, পরদিন আবারো ফোন বারী ভাইকে৷ তিনি জানালেন, এটম রহমান নামক একজনকে ই-মেল করা হয়েছে৷ এখনো উত্তর আসেনি৷ কিন্তু আমার যে অপেক্ষার তর সইছিল না৷

ডাক্তারের খোঁজ দিল গুগল

এখন উপায়! দ্বারস্থ হলাম গুগল-এর৷ দিন কয়েক আগেই গুগল প্রধান জানিয়েছিলেন, সবই নাকি আছে তাঁর ভাণ্ডারে৷ কথা মিথ্যা নয়৷ আগস্টে আক্তারের অপারেশন হয় ক্যাবরিনি হাসপাতালে৷ সেখানে ফোন করে পাওয়া গেল, ডাক্তার জন গ্রিফিৎসকে৷ আক্তারের অপারশন করেছেন তিনি৷ কিন্তু ডাক্তার নিজে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি, তবে আক্তারের কোন খোঁজ দেবেন না৷

One year after BDR mutiny
বিডিআর বিদ্রোহের দিন গুলিবিদ্ধ হন আক্তারছবি: DW

কি মুশকিল! ডাক্তারের সাক্ষাৎকার পেলাম কিন্তু রোগীরই খবর নেই৷ এমন অনুষ্ঠান প্রচার করলে নির্ঘাত লোকে হেসে খুন হবে৷ আবার গুগল৷ কিন্তু গুগলও এখনো আক্তারের খোঁজ পায়নি৷ তবে পেলাম জুলিয়া'র খোঁজ৷

জুলিয়া পর্ব

চিলড্রেন ফার্স্ট নামক এক সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা জুলিয়া৷ তাকে পুরো বিস্তর বলতেই জানালেন, হ্যাঁ, আক্তারকে আমরাই চিকিৎসা করিয়েছি৷ তবে, তার সঙ্গে কথা বলতে হলে এটম রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করো৷ কেননা, এটমই আক্তারের স্থানীয় অভিভাবক৷

আশেপাশে আক্তার

আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আক্তার জুলিয়ার আশেপাশেই আছে৷ তবুও নিয়ম মেনে, এটমকে ফোন৷ কিন্তু তাকে পাওয়া গেলোনা৷ জার্মানিতে সেদিন বুধবার, সকাল আটটা৷ জুলিয়াকে আবারো ফোন দিলাম, এবার খানিকটা মন গলল তাঁর৷ বললো, এই ন্যাও, আক্তারের সঙ্গে কথা বলো৷

অসহায় আক্তার

আক্তার ফোন ধরেই শোনালো তাঁর গল্প৷ খানিকটা অশ্রুসিক্ত আমি৷ কতটা অসহায় মানুষের জীবন৷ দু'দুটো গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিল আক্তার৷ মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর সে৷ অথচ কেউ তাকে সাহায্যে এগিয়ে আসেনি৷ শেষমেষ এক রিকশাওয়ালা আক্তারকে নিয়ে হাসপাতালের পথ ধরলো৷

মজার বিষয় হচ্ছে, চা ফেরি করা আক্তারকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে চিকিৎসা করাতে সহায়তা করেছে এক হকার৷ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা এভাবেই বুঝি এগিয়ে আসে একে অন্যের সহায়তায়৷ এখন প্রায় পুরোটাই সুস্থ সে৷ এই তরুণের বেঁচে ওঠার গল্প শুনতে কান পাতুন ডয়চে ভেলেতে, আগামী বুধবার সকালে...

লেখক: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার