1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌অবাঙালি শিব’ নিয়ে হুলুস্থূল

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যেন ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরেছেন শিল্পী তৌসিফ হক৷ শিবভক্তরা তাঁর ওপর যেমন খেপেছেন, তেমনি বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলার আটপৌরে ধর্মাচরণ বনাম উত্তর ভারতীয় উগ্র ধর্মবিশ্বাসের৷

https://p.dw.com/p/3YK9d
ফাইল ফটোছবি: Reuters/UNI

সারা বিশ্ব কদর করত যাঁর, সেই মকবুল ফিদা হুসেনকে ভারত ছাড়তে হয়েছিল, কারণ, তিনি নগ্ন সরস্বতীর ছবি এঁকেছিলেন, যদিও প্রাচীন ভারতীয় চিত্রকলা, বা মন্দিরগাত্রের ভাস্কর্যে দেব-দেবীদের সবসময় নগ্ন চেহারাতেই দেখা যায়৷ তাতে তাঁদের দেবত্ব বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হয় না৷ কিন্তু সেই যুক্তির কথা, চিরন্তন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উদারতার কথা বিতর্ক থামাতে পারেনি৷ প্রবল বিক্ষোভ এবং প্রাণনাশের হুমকির মুখে দেশ ছেড়েছিলেন বিখ্যাত শিল্পী৷ ফেসবুকে কলকাতার চিত্রকর তৌসিফ হকের আঁকা শিবের ছবি নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ সেটাই৷ মুসলিম হয়ে তৌসিফ কেন হিন্দু দেব-দেবীর চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করলেন!‌

বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে উত্তর ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্বের ধারণা বাকি দেশের ওপর, বিশেষত বাংলায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, শিবের চেহারা নিয়ে মন্তব্য করে তৌসিফ আসলে সেই দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন৷ কী বলেছিলেন তিনি?‌ যে পেশীবহুল, মাস্তান চেহারার শিব মোটেই বাঙালির প্রিয় শিবঠাকুর নন৷ বাঙালির আরাধ্য শিব হলেন ভুঁড়িওয়ালা, নাদুসনুদুস একজন, যিনি দিনভর গাঁজার নেশায় বুঁদ থাকেন আর স্ত্রী পার্বতীর গঞ্জনা শোনেন৷ বাংলার বিভিন্ন লোককথায়, গানে, ছড়া আর কবিতায় শিবের যে ধারণা প্রচলিত এবং জনপ্রিয়, সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তৌসিফ৷

‘উপেক্ষা করাই ভাল!’

ফলে তাঁকে হিন্দুত্ববাদীদের সমবেত প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে৷ তারা একযোগে রিপোর্ট করে তৌসিফের ফেসবুক প্রোফাইলটি ব্লক করিয়ে দিয়েছেন৷ তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে৷ প্রথমত, সোশাল মিডিয়ায় বহু লোক তৌসিফের আঁকা ছবিটি শেয়ার করে পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ বাঙালি মানসে শিবসহ সমস্ত দেবদেবীর যে সাদাসিধে, আটপৌরে, গেরস্থ ধারণা চিরস্থায়ী হয়ে আছে, তা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা শুরু হয়েছে৷ মঙ্গলকাব্য এবং পৌরাণিক চিত্রমালা থেকে অসংখ্য ছবি সংগ্রহ করে এনে ফেসবুকে পোস্ট করে প্রমাণ দেওয়া হয়েছে, তৌসিফ ভুল কিছু বলেননি৷ বাঙালি যা ভাবে, তিনি সেটাই এঁকেছেন৷

যদিও তৌসিফ কিছুটা পিছু হটে ক্ষমা চেয়েছেন৷ সোমবার নতুন একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি লিখেছেন, ‘‌‘‌আমি যে ছবিটি এঁকেছিলাম, সেটির উপরে যে ক্যাপশন দিয়েছিলাম, তার উদ্দেশ্য কখনোই কাউকে অপমান করা, কিম্বা কারো উপাস্যকে ছোট করা ছিল না৷ আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দেখা থেকে ছবিটি এঁকেছিলাম৷ লৌকিক এক শিবের কথা বলতে চেয়েছিলাম, যেমনটা আটপৌরেভাবে আমরা ভেবে থাকি৷ যেমন, আমার পাড়ার যে মেয়েটির বাবা অসুস্থ, মা কাজ করে, মেয়েটি টিউশন পড়িয়ে কিছুটা উপার্জন করে বাবার চিকিৎসা করায়, আমার চোখে তিনিই লক্ষ্মী কিম্বা সরস্বতী৷ ঠিক তেমনি শিব একজন আমাদেরই দেখা মানুষ৷ তিনি নম্র, সৎ, প্রেমিক, এভাবেই আমার কল্পনাকে বলার চেষ্টা করেছি৷’’

কিন্তু মূল বিতর্কের বিষয়টি তাতেও চাপা পড়ছে না যে, বাঙালির ধর্মীয় ধারণাকে বদলানোর চেষ্টা করে চলছে উত্তর ভারতের তথাকথিত গো-বলয়ের উগ্র ধর্মবোধ, যা বাঙালির চিরকালীন বিজয়া দশমীর কোলাকুলি আর মিষ্টিমুখের ঐতিহ্যকে বদলে ফেলতে চায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয় মিছিলে৷ যা দুর্গাপুজোর সামাজিক উৎসবকে বদলাতে চায় নবরাত্রির বিধিনিষেধে৷ এ নিয়ে এখন চিন্তিত অনেকেই৷ কিন্তু উপেক্ষা করাই ভালো৷ গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়৷ ডয়চে ভেলেকে বললেন বিশিষ্ট লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়৷ বাংলার সংস্কৃতিকে নষ্ট করার এই অপচেষ্টার একমাত্র প্রতিরোধ তাকে অবহেলা৷ মনে করছেন তিনি৷