মিয়ানমারের স্বাধীনতা
৪ জানুয়ারি ২০১৩পুরো নাম রিপাবলিক অফ দ্য ইউনিয়ন অফ মিয়ানমার৷ ৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৩৮ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট দেশটিকে ছোট্ট ‘মিয়ানমার' নামেই চেনে সবাই৷ কিছু কিছু দেশ অবশ্য আগের নাম ‘বার্মা'-কেই ধরে রেখেছে৷ তবে নাম যাঁর কাছে যা-ই হোক, দেশটির চিত্র বলতে গেলে কিন্তু সবার কাছেই তা একরকম৷ সামরিক শাসন আর গণতন্ত্রের অনিঃশেষ সংগ্রামের দেশ, যেখানে একদিকে অং সান সু চির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সামরিক কর্মকর্তাদের আস্ফালণ৷ স্বাধীন মিয়ানমারের ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে অবশ্য মানতেই হবে যে, এ মুহূর্তটা একটু ‘অন্যরকম' এবং ৬৫ বছর আগে স্বাধীন হবার সময়ও অবস্থাটা ছিল ‘অন্যরকম'৷
ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মিয়ানমার মুক্ত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি৷ দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা অং সান সু চির জন্য সেই দিনটি শুধু আনন্দের নয়, কিছুটা বেদনারও, কেননা তাঁর বাবা অং সান যে সেই দিনটি দেখে যেতে পারেননি! স্বাধীনতার মাত্র ছয় মাস আগে আততায়ীর গুলিতে মারা যান তিনি৷ অথচ দেশকে বৃটিশ শাসনের অর্গল থেকে মুক্ত করতে কী না করেছেন তিনি! রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন৷ গড়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি৷ মিয়ানমারের মানুষ এখনো তাঁকে মানেন স্বাধীন মিয়ানমারের জনক এবং আধুনিক সামরিক বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে৷
দুঃখজনক একটা বাস্তবতা হলো বাবার হাতে গড়া সেই সামরিক বাহিনীই অং সান সু চিকে, তাঁর দেশের গণতন্ত্রকে বন্দি রাখে অনেক বছর৷ শুধু সু চির রাজনৈতিক জীবন হিসেব করলেও সময়টা প্রায় ২২ বছর৷ সেই ১৯৯০ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)৷ কিন্তু সামরিক জান্তা সরকার গৃহবন্দি করে তাঁকে৷ তাই জনগণ দেশ পরিচালনার অধিকার দিলেও সে সুযোগ পাননি অং সান সু চি৷ পরের ২০ বছরের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর বন্দিই থাকতে হয়েছে তাঁকে৷ আন্তর্জাতিক অবরোধ, মানবতাবাদী এবং গণতন্ত্রকামী মানুষদের দাবি টলাতে পারেনি সামরিক জান্তাকে৷ নানা কৌশলে আটকে রাখার পর ২০১০ সালে মুক্তি দেয়া হয় সু চিকে৷ গত বছর সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেন তিনি৷ সেই সুবাদে এখন তিনি বিরোধী দলের নেত্রী৷
কিন্তু সেই ভূমিকায় খুব কি সক্রিয় বা সরব নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি পাওয়া গণতন্ত্রের এই মানসকন্যা? দেশে যে অশান্তি, হানাহানি লেগেই আছে এ বিষয়ে কতটা সোচ্চার তিনি? রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজের অবস্থানটা পরিষ্কার করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল৷ এ কারণে সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে সে চেষ্টা তিনি করেছেনও৷ কিন্তু নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, স্পর্ষকাতর একটি বিষয়কে বুঝেশুনে নিয়ন্ত্রণ করার যে যুক্তিগুলো তিনি দেখিয়েছেন, তা সব শান্তিকামী মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার কথা নয়৷
স্বাধীনতার ৬৫ বছর পূর্তিতে অনেক অর্জনের কথাই হয়ত গর্ব নিয়ে বলতে পারবেন মিয়ানমারের মানুষ৷ বলতে পারবেন তাঁদের একজন অং সান সু চি আছেন৷ তাঁর বাবা অং সানের মতো একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন এ কথাও নিশ্চয়ই বলতে ভুলবেন না তাঁরা৷ কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, অং সান এবং তাঁর মেয়ের স্বপ্নের দেশ কি মিয়ানমার আজও হয়েছে? জবাবে অনেকে নিশ্চয়ই লজ্জায় মাথা নোয়াবেন!