1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৬০ তম বার্লিনালের সেরা পুরস্কার

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০

‘বার্লিনালে' অর্থাৎ বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা পুরস্কার নিঃসন্দেহে স্বর্ণভালুক৷ এই পুরস্কারই এবার ছিনিয়ে নিল তুরস্কের ছবি ‘হানি’৷

https://p.dw.com/p/M91q
তুরস্কের ছবি ‘হানি’র পরিচালক সেমিহ্ কাপ্লানগ্লু (ডানে)ছবি: picture alliance / dpa

এক বাবা ও ছেলের হৃদয়স্পর্শী ঘটনা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে ‘হানি' ছবির কাহিনি৷ জার্মানি ও তুরস্কের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি পরিচালনা করেছেন সেমিহ্ কাপলানগ্লু৷ শান্ত ও ধীর লয়ের এই ছবির ঘটনা প্রবাহে ছড়িয়ে রয়েছে কাব্যিক মাধুর্য৷ তুরস্কের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধুচাষি এক পরিবারের গল্প ‘হানি’৷ বাবার সঙ্গে সঙ্গে মধু সংগ্রহে পাহাড়ি বন জঙ্গলে, ঘুরে বেড়ায় ৬ বছরের বালক ইউসুফ৷ কথা বলে কম৷ স্কুলে তার তেমন বন্ধু বান্ধব নেই৷ বাবাই একমাত্র বন্ধু৷ একদিন মধুর সন্ধান করতে গিয়ে গহিন জঙ্গলে ঢুকে আর ফিরে আসেননা বাবা৷ ছেলের কাছে যেন পৃথিবী ভেঙে পড়ে৷ ভাষা হারিয়ে ফেলে সে৷ এই ছবিতে কোনো সংগীত ব্যবহার করা হয়নি৷ সংলাপও কম৷ নৈসর্গিক নানা শব্দ তরঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে আবেগ ও অনুভূতি৷ বিয়োগান্তক এই ছবিটিতে শিশু তারকা বোরা আলতাস-এর অভিনয় দর্শক ও জুরিদের মন ছুঁয়ে যায়৷ ‘‘সুটিং করার সময় একটি ভালুক মধুর সন্ধানে কাছে চলে এসেছিল৷ পরে অবশ্য সেটি চলে যায়৷ এখন সেই ভালুকটি এখানে৷’’ সেরা ছবির জন্য স্বর্ণ ভালুক পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এই মন্তব্য করেন পরিচালক সেমিহ্ কাপ্লানগ্লু৷

Eröffnung der Berlinale 2010 in Berlin Flash-Galerie
বার্লিনালে’কে ঘিরে ক’টা দিন বার্লিন ছিল উৎসবে মুখরছবি: AP

উল্লেখ্য ৪৬ বছর পর আবার একটি তুর্কি ছবি বার্লিনালে চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ ভালুক পেল৷ ১৯৬৪ সালে মেতিন এর্কান পরিচালিত তুর্কি ছায়াছবি ‘ড্রাই সামার' এই চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নিয়েছিল স্বর্ণ ভালুক৷

বিতর্কিত পরিচালক রোমান পোলানস্কি সুইজারল্যান্ডে গৃহবন্দি থাকার কারণে বার্লিনালে উৎসবে না আসতে পারলেও তাঁর পুরস্কার পাওয়ার সম্ভবনার কথা আলোচিত হচ্ছিল উৎসব অঙ্গনে৷ রাজনৈতিক থ্রিলার ‘গোস্ট রাইটার’-এর জন্য সেরা পরিচালক হিসাবে রোমান পোলানস্কি পেলেন রৌপ্য ভালুক পুরস্কার৷ প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আত্মজীবনী লেখার জন্য নিয়োগ দেয়া হয় এক গোস্ট রাইটারকে৷ আর তাকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে গেছে ছবির ঘটনা প্রবাহ৷ পুরস্কার গ্রহণ করেন ছবির প্রযোজক অ্যালেন সারডে৷

রাশিয়ান ছায়াছবি ‘হাউ আই এন্ডেড দিস সামার’-এ অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার রৌপ্য ভালুক পেলেন যৌথভাবে গ্রেগরি ডব্রিগিন এবং সের্গেই পুসকেপালিস৷ এই ছবির ক্যামেরাম্যান পাভেল কস্টোমারভ সেরা শৈল্পিক কৌশলের জন্য পেয়েছেন পুরস্কার৷ যুদ্ধ বিরোধী ছবি ‘ক্যাটারপিলার’-এ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের শিনোবু টেরাজিমা৷

শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য রৌপ্য ভালুক পেলেন চীনা চিত্রনির্মাতা ওয়াং কুয়ান তাঁর ‘অ্যাপার্ট টুগেদার’ ছবি জন্য৷ ছবিটিতে এক প্রেমিক যুগলের বিচ্ছেদ ও মিলনের কাহিনি তুলে ধরেছেন পরিচালক৷ চীন ও তাইওয়ানের বিভক্তির কারণে এই দুই প্রেমিক প্রেমিকাকেও বছরের পর বছর আলাদা থাকতে হয়েছে৷ জীবনের শেষ প্রান্তে তারা আবার পরস্পরের কাছাকাছি আসতে পারেন৷ওয়াং এই ছবিটি উৎসর্গ করেছেন একদা বিভক্ত বার্লিন নগরীর উদ্দেশে৷ উল্লেখ্য ৩ বছর আগে বার্লিনালে চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ ভালুক জয় করেছিলেন পরিচালক ওয়াং কুয়ান৷

জুরি মন্ডলীর বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হয় রুমেনিয়া ও সুইডেনের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইফ আই ওয়ান্ট টু হুইসেল, আই হুইসেল’৷

সেরা প্রথম ছায়াছবির জন্য ৫০ হাজার ইউরো অর্থ মূল্যের বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয় বার্লিনালে উৎসবে৷ এবার এই পুরস্কারটি পেলেন সুইডেনের চলচ্চিত্র নির্মাতা বাবাক নাজাফি তাঁর ‘সেব্বে’ ছবির জন্য৷ সুইডেনের এক শহরতলীর দারিদ্র্য ও সমস্যাজর্জরিত পরিবারে বেড়ে ওঠা এক কিশোরকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে ছবির কাহিনি৷ পরিচালকের নিপুণ হাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক সমাজের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷

বার্লিনালে ক্যামেরা দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় জাপানের পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার ইয়াজু ইয়ামাতাকে৷ ৮০টিরও বেশি ছবি নির্মাণ করেছেন বর্ষীয়ান এই সিনেমা ব্যক্তিত্ব৷

এবারের বার্লিনালে চলচ্চিত্র উৎসবে জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কোনো ছবি বড় রকমের পুরস্কার পায়নি৷ তবে সব মিলিয়ে এই চলচ্চিত্র উৎসব সফল হয়েছে বলে মনে করেন আয়োজকরা৷ এবারের বার্লিনালেতে রেকর্ড সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতির কথা জানান উৎসব পরিচালক ডিটার কসলিক৷ ৩ লক্ষ দর্শক বিভিন্ন বিভাগে উপভোগ করেছেন ৪০০-এর মত ছায়াছবি৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক