1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে ভাষার বিলুপ্তি

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩

শহরমুখী মনোভাব এবং নিজেদের ভাষায় কথা না বলায় গত ৫০ বছরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ভারতের অন্তত দুই শতাধিক ভাষা৷ সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য৷ চার বছর ধরে দেশব্যাপী চালানো এই গবেষণার প্রতিবেদনটি এ সপ্তাহেই প্রকাশিত হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/19c71
ছবি: picture-alliance/dpa

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে ৫০ বছরে ২৩০টি ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে এবং ৮৭০টি ভাষা এখনও টিকে আছে৷ নন-প্রফিট ভাষা ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই জরিপের প্রধান গনেশ ডেভি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানালেন, ৮৭০টির মধ্যে ৪৮০টিই বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, যা তারা সবক্ষেত্রে ব্যবহার করে৷ তবে ইন্টারনেট আর মোবাইলের দৌরাত্ম্যে এবং হিন্দি আর ইংরেজি ভাষার আগ্রাসনে এসব ভাষাও আজ হুমকির মুখে বলে জানালেন তিনি৷ ভারতে খুব দ্রুতই আরো বেশ কিছু ভাষা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ডেভি৷ আর এ ভাষাগুলো রক্ষা করারই প্রয়াস করছে তাঁর প্রতিষ্ঠান৷

ডেভির দলে তিন হাজার স্বেচ্ছ্বাসেবী কাজ করেছেন৷ ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে সেসব অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মানুষদের কথ্য এবং লিখিত ভাষার নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করেছেন তাঁরা৷ এমনকি যেসব ভাষার পল্লিগীতি এবং মায়ের কাছ থেকে শোনা গল্প এখনও মুখে মুখে প্রচলিত, সেগুলোও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা৷

১৯৬১ সালে ভারত সরকার ভাষার উপর একটি জরিপ করেছিল৷ তখনকার পরিসংখ্যানে বলা হয়েছিল, ভারতে ১১শ'টি ভাষা প্রচলিত৷ ডেভি এবং তাঁর দল সেই ভাষাগুলোর সঙ্গে বর্তমান ভাষাগুলোর তুলনা করেছেন৷ সেখান থেকে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাঁরা ৫০টি ‘ভলিউম' বা খণ্ড তৈরি করেছেন, যার মধ্যে প্রথম পাঁচটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করবে ভারতের পিপলস লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে৷

Buchcover The lost Symbol Das verlorene Symbol Dan Brown
১৯৬১ সালে ভারত সরকারের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছিল, ভারতে ১১শ'টি ভাষা প্রচলিতছবি: picture alliance / empics

ডেভি জানালেন, উপকূলীয় এলাকায় যেসব জেলে সম্প্রদায়ের বাস, তাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে৷ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জেলেরা জীবনের তাগিদে জীবিকা পরিবর্তন করেছে৷ উপকূলীয় এলাকার বেশিরভাগ মানুষই এখন শহরমুখী হওয়ায় সেই ভাষা বিলুপ্তির পথে৷

এমনকি যাযাবর এবং অতীতের নামি অপরাধী গোষ্ঠীরও বিশেষ ভাষা ছিল৷ ভারতের বর্ণ প্রথারও একটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল ভাষা৷ তাই এই শ্রেণির মানুষরা তাদের পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করায় তাদের নিজেদের ভাষার চেয়ে কাজ চালানোর জন্য প্রচলিত ভাষাকেই বেছে নেয়৷ ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নতুন ভাষা স্থান দখল করে৷ প্রচলিত সমাজ থেকে বিচ্যুতির ভয়ে এসব গোষ্ঠীগুলো তাদের সংস্কৃতি, ভাষা অন্যের সামনে প্রকাশ থেকে বিরত থাকে, যার ফলে সেই সংস্কৃতি, ভাষা একসময় হারিয়ে যায়৷

তবে কিছু জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এর ভিন্নতাও দেখা যায়৷ ডেভি জানালেন, এমন কিছু উপজাতীয় গোষ্ঠী রয়েছে, যারা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বেশ সোচ্চার এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে৷ এমনই একটি গোষ্ঠী থাকে ঝারখণ্ডের পূর্বাঞ্চলে৷

পুরো ভারতে ১৯০টি উপজাতি গোষ্ঠী রয়েছে৷ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে হিমালয় এবং ভুটান ও চীন সীমান্তের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এদের আধিক্য বেশি৷ সেসব জায়গায় এদের সংখ্যাটা প্রায় ছয় কোটি৷ এসব গোষ্ঠীর উপস্থিতিই প্রমাণ করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরও ভারতে ভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, মনে করেন ডেভি৷

তাঁর মতে, প্রায় দুশো বছরের ইংরেজ শাসনের পরও ৮০০-টিরও বেশি ভাষা এখনও বেঁচে থাকাটা একমাত্র ভারতের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়৷ তাই এসব ভাষা রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

ভারতের সংবিধানে ২২টি ভাষার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে৷ হিন্দিকে রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং ব্যবসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজিকে প্রাধান্য দেয়া হয় ভারতে৷

এপিবি/ডিজি (এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য