1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাবা হত্যার বিচার পেয়েছি'

সমীর কুমার দে, ঢাকা১ অক্টোবর ২০১৩

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মুত্যদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা ও অপহরণ-নির্যাতনের নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়৷

https://p.dw.com/p/19s8q
আদালতে ঢোকার আগে সাকা চৌধুরীছবি: picture-alliance/dpa

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বা সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ২৩টি৷ প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে সাতটি হত্যা-গণহত্যার এবং দুটি অপহরণ-নির্যাতনের৷ এছাড়া আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছয়টি অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষী হাজির না করায়, সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না বলে রায়ে উল্লেখ করেছে ট্রাইব্যুনাল ১৷

ঘোষিত রায়ে প্রমাণিত নয়টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে ফাঁসি, তিনটিতে ২০ বছর করে এবং বাকি দুটিতে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ তবে ন্যায়বিচার পাননি বলে দাবি করে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা জানিয়েছেন সাকা চৌধুরীর স্ত্রী৷

Bangladesch Salauddin Quader Chowdhury Urteil 01.10.2013 Dhaka
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের পর বিজয় উল্লাস...ছবি: picture-alliance/dpa

সাকা চৌধুরীর আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে তিন নম্বর অভিযোগ ছিল নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা৷ ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীকে নিয়ে শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ে যান৷ ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের সঙ্গে সাকা চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা ৫/৭ মিনিট কথাবার্তা বলে চলে যায়৷ চলে যাওয়ার আনুমানিক ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে সাকা চৌধুরী আবারো পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে কুণ্ডেশ্বরী ভবনে প্রবেশ করেন৷ সে সময় নূতন চন্দ্র সিংহ বাড়ির ভিতরে মন্দিরে প্রার্থনারত ছিলেন৷ সাকা চৌধুরী তাঁকে মন্দিরের ভেতর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসেন এবং উপস্থিত পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশে বলেন, একে হত্যা করার জন্য বাবার নির্দেশ আছে৷ পরে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করার জন্য সাকা চৌধুরী উপস্থিত পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের নির্দেশ প্রদান করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ‘ব্রাশফায়ার' করে৷ গুলিবিদ্ধ নূতন চন্দ্র সিংহ মাটিতে পড়ে ছটফট করা অবস্থায় সাকা চৌধুরী নিজে তাঁকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন৷ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে চারটি অভিযোগে মৃতু্যদণ্ড হয়েছে, তার মধ্যে এই মামলাটি অন্যতম৷ এই মামলায়ও তাকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত৷ দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ও প্রবীণ সাংবাদিক শফিউল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করে শুধুমাত্র কুন্ডেশ্বরীর প্রতিষ্ঠাতাকেই হত্যা করা হয়নি৷ নূতন চন্দ্র সিংহ ছিলেন নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত৷ চট্টগ্রামের রাউজানের মতো এক অজপাড়াগাঁয়ে নারী শিক্ষার জন্য তিনি ১৯৬০ সালে কুন্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন৷ সেই বিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগ পেতেন মেয়েরা৷ মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা যখন খুবই কঠিন, তখন তিনি ১৯৭০ সালে সেই রাউজানেই প্রতিষ্ঠা করেন কুন্ডেশ্বরী বালিকা মহাবিদ্যালয়৷ নূতন চন্দ্র সিংহ এলাকায় ‘দান বীর' হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ গরিব মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়াতেন৷ অসহায় মানুষের মেয়ের বিয়েসহ সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে নিঃস্বার্থভাবে দান করতেন তিনি৷

সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এস. এম. মাহবুবুল আলম৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, নূতন চন্দ্র সিংহ আসলে রাউজানের মতো গ্রামে নারী শিক্ষার আলোর প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন৷ আসলে পাকিস্তনি বাহিনী তাকে এই কারণেই সবচেয়ে বেশি টার্গেট করেছিল৷ তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ জন শিক্ষক তখন পালিয়ে কুন্ডেশ্বরী ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ পরে ফটিকছড়ির রামগড় দিয়ে তিনি ওই শিক্ষকদের ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন৷ ওই শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেট৷

রায়ের পর তাত্‍ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এত দীর্ঘ সময় পর যে রায় হলো, এটাই স্বস্তির৷ ৪২ বছর পর হলেও আমি আমার বাবা হত্যার বিচার পেয়েছি৷ এতেই আমি খুশি৷ যত দ্রুত সম্ভব এই রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চান তিনি৷''

epa03890710 Members of the elite force Rapid Batalion Action (RAB) stand guard in the streets during the verdict of Salauddin Quader Chowdhury, one of the leaders of the Bangladesh Nationalist Party (BNP) in Dhaka, Bangladesh, 01 October 2013. The war-crimes court has given the death sentence verdict to Salauddin for genocide and deadly torture of Hindus and leaders of the now rulling Awami League in Chittagong during the independence war in 1971. EPA/ABIR ABDULLAH
নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ঢাকায়...ছবি: picture-alliance/dpa

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাকা চৌধুরীর ফাঁসি হওয়ায় তার হাতে নিহতদের পরিবার স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী হিন্দু সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তার অপরাধের গভীরতা নির্ণয় করে আদালত সঠিক রায় দিয়েছে বলেই মনে করেন তিনি৷

সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন যে, তারা ন্যায় বিচার পাননি৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন৷ বাঁধাই করা একটি বই সাংবাদিকদের দেখিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘‘এই রায়ের কপি আগে থেকেই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে৷ আমরা এটা সংগ্রহ করেছি৷ আপনারা সাংবাদিকরা, কেন এটা সংগ্রহ করতে পারলেন না? সাক্ষীরাও আদালতে বলেছেন যে, তারা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ঘটনাস্থলে দেখেননি৷ তারপরও এই রায় দেয়া হলো৷

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটি সপ্তম রায়৷ তবে এই প্রথম কোনো বিএনপি নেতার যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণা হলো৷ এর আগে ঘোষিত আরও ছয়টি মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে জামায়াতের সাবেক-বর্তমান ছয়জন নেতা৷ এর মধ্যে চারটি মামলার রায় ট্রাইব্যুনাল ২ আর দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল ১৷ ঘোষিত অন্য ছয়টি রায়ের মধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও জামায়াতের পলাতক সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি এবং জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে৷ আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিলেও, সাজা বাড়িয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মুত্যুদণ্ড দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য