1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৩২ ধারা কার্যকরের আগেই এই আচরণ!

১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর বনানীতে অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙার চার সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে৷ এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাংবাদিকরা৷

https://p.dw.com/p/2ruTW
Bangladesch Dhaka, Gewalt gegen Journalisten in Universität
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকে আড়াই ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তাদের আটক রাখা হয়৷

আটকে রাখা সাংবাদিকরা হলেন- মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিবেদক বদরুদ্দোজা বাবু, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাজহার মিলন, ক্যামেরা পার্সন সাইফুল ইসলাম, সোহাগ এবং প্রযোজক সায়েম খান৷

তাঁদেরকে রাতে ছেড়ে দিলেও দুটি ক্যামেরা ও তাঁদের মোবাইল ফোন রেখে দেওয়া হয়৷ বদরুদ্দোজা বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদীনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম৷ আগেই কথা বলে সময় ঠিক করা হয়েছিল৷ সাক্ষাৎকার গ্রহণের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম সংক্রান্ত নথিপত্র দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়৷ এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং ক্যামেরাম্যান ও প্রডিউসারের উপর প্রথমে হামলা করেন এবং পরে অন্যান্য লোকজন এসে তাঁদের মারধর করে৷ গুলি করে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়৷''

ঘটনাটি প্রসঙ্গে বাবু তাঁর ফেসবুক পাতায় #গুপ্তচর ব্যবহার করে লিখেছেন,‘‘এরকম পরিস্থিতিতে আগে অনেকবার পড়েছি৷ তবে এবারের অভিজ্ঞতা ছিলো ভিন্ন৷ মেরে ফেলার হুমকি, চাকরি খেয়ে ফেলার ধমক, পুলিশে ধরিয়ে দেয়া, এমনকি দু'জন সাংবাদিকের গায়ে হাতও তুলেছে তারা৷ না তারা অশিক্ষিত নয়, তারা শিক্ষার আলো ছড়ান সমাজে! অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের চেয়ারম্যান তিনি, নাম ইশতিয়াক আবেদিন৷ ছিলেন তাদের গোটা পরিবার, যারা বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য৷

একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম সেখানে৷ মেইলে প্রশ্ন পাঠিয়ে সময় ঠিক করা হয়৷ সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে তাদের নানা অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণসহ তুলে ধরতেই ক্ষেপে যান চেয়ারম্যান৷ ক্যামেরা ভাঙেন, মোবাইল কেড়ে নেন আর গালিগালাজ তো ছিলই৷ আড়াই ঘণ্টা আটক থাকার পর বনানী পুলিশ স্পটে যায়, আমার সহকর্মীরা সবাই ছুটে যান৷ বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকার সাংবাদিকরাও আসেন৷ আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই৷''

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বেশ কয়েকবার পুরস্কার পাওয়া বাবু আরও লিখেছেন, ‘‘গোপনীয় কিছু নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি না৷ বড় ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছি আমরা৷ সেই বিষয়ে তাদের বক্তব্য কী,  তা জানতে গিয়েছিলাম৷ প্রশ্ন করেছি, চোখে চোখ রেখে, আমাদের অপরাধ ছিলো এটাই৷ যদি বলেন, এটা গুপ্তচরের কাজ, তাহলে বলতে চাই আমি গুপ্তচর৷  জনস্বার্থে করি সাংবাদিকতা৷আমার সাহস আপনারা, যারা ছুটে গিয়েছিলেন কিংবা উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন, আমাদের ফিরে আসার। আমরা থামতে চাই না।’’

ঘটনার আরেক সাক্ষী সাংবাদিক মাজহার মিলন ফেসবুক পাতায় লিখেছেন,‘‘আমাদের কাজের ধরনটাই এমন বিপদসংকূল৷ এটা স্বীকার করেই এই পথে হাঁটা৷ অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভিার্সিটি এআইইউবি দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা৷ আমাদের অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অভিযোগ উঠে এসেছে৷ গত তিন মাস ধরে তিলে তিলে আমরা সেগুলোর প্রমাণ সংগ্রহ করেছি৷ সবগুলো প্রমাণ তাদের সামনে পেশ করেছি৷ কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা দুর্নীতি-অনিয়ম ঢাকতে চান পেশিশক্তি ব্যবহার করে৷ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আর সদস্যরা (প্রায় সবাই-ই এক পরিবারের) কতটা হিংস্র হতে পারেন সেই ধারণা আমাদের ছিল না৷ আমার শার্ট খুলে গোপন ক্যামেরা আছে কিনা, চেক করতে গিয়ে বোতামগুলো ছিঁড়ে ফেলেছেন৷ তাদের পরিবারের সব সদস্য মিলে যে গালিগালাজ তিন ঘন্টা ধরে করেছেন, সেসব মুখে আনার অযোগ্য৷ আমাদের চাঁদাবাজ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টাও হয়েছে৷ আমাদের সবগুলো ফুটেজ তারা নষ্ট করেছে৷ সবার সবগুলো মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফরম্যাট দিয়েছে৷ রেখে দিয়েছে ক্যামেরা ও সেলফোনের মেমোরি কার্ড! আমাদের পারিবারিক, পেশাগত জীবনে সেটা খুব বড় একটা ক্ষতি৷ আমরা দেখেছি, তাদের হাত অনেক লম্বা৷ গণমাধ্যমের অনেক বড় বড় কেউকেটাদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে, রয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গভীর যোগাযোগ৷ রয়েছে মাস্তান বাহিনী৷ ভয়ভীতি দেখিয়ে, জীবননাশের হুমকি দিয়ে, কিংবা অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে নিশ্চয়ই অনেককে থামিয়ে রাখা যায়৷ কিন্তু সবাই বিক্রির জন্য নয়, থামার জন্য নয়৷ এই সমাজ-রাষ্ট্রকে দুর্নীতিমুক্ত করে ফেলব, সেটা বলছি না৷ কিন্তু আমাদের যতটুকু করার আছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেটা করে যাব৷''সাংবাদিক আশরাফুল হক লিখেছেন, ‘‘

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত মানুষের এমন আচরণ, ভাবতেও পারিনি! সহকর্মীদের আড়াই ঘণ্টা আটকে রেখেছিলেন৷ ভরসা ছিলেন সাংবাদিকরাই৷ খবর পেয়ে ছুটে গেছেন সবাই৷ সেই ঐক্যই শক্তি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছেন সহকর্মীরা৷''

মাহবুব হাসান দোষীদের শাস্তি দাবি করে লিখেছেন, ‘‘মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু ভাই, মাজহার মিলন ভাই, ক্যামেরাপার্সন সাইফুল ভাইসহ পাঁজনকে আটকে রেখে মারধর করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই৷ সেই সাথে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই৷''

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান