২০১০’এর নোবেল জয়ীরা
১০ ডিসেম্বর ২০১০সুইডিশ উদ্ভাবক ও শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেল’এর দান করে যাওয়া অর্থে নোবেল পুরস্কারের প্রচলন৷ তাঁরই ইচ্ছা অনুসারে এই পুরস্কার ‘‘তাঁদেরই দেয়া হবে, যাঁরা মানবজাতির কল্যাণের জন্য অত্যন্ত বড় রকমের কিছু করেছেন৷’’ ১৯০১ সাল থেকে আলফ্রেড নোবেল'এর মৃত্যুদিন ১০ ডিসেম্বরে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়৷ শুধুমাত্র নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্পণ করা হয় অসলো শহরে৷ বাকি সব পুরস্কার প্রাপকদের হাতে তুলে দেন সুইডেনের রাজা স্টকহল্ম শহরে৷
বিশিষ্ট চীনা বিরুদ্ধবাদী লিউ শিয়াওবো নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় চীন কঠোর সমালোচনায় সোচ্চার৷ চার্টার-এইট ইশতেহারের সহপ্রণেতা লিউ বর্তমানে ১১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন৷ অক্টোবর মাসে তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবর ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর স্ত্রীকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে৷ লিউ বা তাঁর স্ত্রী কেউই অসলোয় গিয়ে ১.৫ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার গ্রহণ করতে পারবেননা৷
এবার সাহিত্যে নোবেলজয়ী হলেন পেরুর বেস্ট-সেলার লেখক মারিও ভার্গাস লোসা৷ সুইডিশ নোবেল কমিটি ৭৪ বছর বয়স্ক এই পাঠকপ্রিয় ঔপন্যাসিককে নোবেল পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে বলেছিল: ‘‘ক্ষমতার কাঠামোর যে-রূপ দিয়েছেন তিনি, ব্যক্তির প্রতিরোধ, বিদ্রোহ আর ব্যর্থতার যে-তীব্র ছবি তিনি তুলে ধরেছেন, পুরস্কার তারই স্বীকৃতি৷''
রসায়নে ২০১০ সালের নোবেল বিজয়ীরা হলেন মার্কিন বিজ্ঞানী রিচার্ড হেক এবং দুই জাপানি বিজ্ঞানী আই-ইচি নেগিশা ও আকিরা সুজুকি৷ অরগ্যানিক সিনথেসিস ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেয়া হয়েছে তাঁদের নোবেল পুরস্কার৷ তিন বিজ্ঞানী কার্বন অ্যাটম জোড়া দেয়ার এক পদ্ধতি বের করেছেন যা কিনা নতুন ওষুধ, কৃষিরাসায়নিক এবং ইলেকট্রনিক কোটিং তৈরির কাজে ব্যবহার করা যাবে৷
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুই রুশ বংশোদ্ভূত গবেষক - ৫১ বছর বয়েসি আন্দ্রে গেইম ও ৩৬ বছর বয়েসি কনস্টানটিন নভোসেলভ৷ তাঁরা ন্যানোপ্রযুক্তির নতুন এক বিস্ময়কর বস্তু, দ্বিমাত্রিক গ্র্যাফিন নিয়ে সুদুরপ্রসারী পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন৷
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন বর্ষীয়ান ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট জি.এডওয়ার্ডস, যিনি কিনা কৃত্রিম গর্ভধারণ পদ্ধতি বের করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ বলে বিবেচিত৷ কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ বছর বয়স্ক এই বিজ্ঞানীর সাফল্যের হাত ধরেই ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই জন্ম নেয় বিশ্বের প্রথম ‘‘টেস্ট টিউব শিশু''৷ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় তাঁর উদ্ভাবিত ইন ভিটরো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি (আইভিএফ) আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে মাইল ফলক হয়ে আছে৷
আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়ার প্রথা শুরু হয়৷ এই অর্থ দেয় সুইডেনের কেন্দ্রীয় রাইখসব্যাংক৷ অর্থনীতিতে ২০১০'এর নোবেল বিজয়ীরা হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পিটার এ. ডায়মন্ড, ইলিনয়'এর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ডেল টি. মর্টেনজেন এবং ব্রিটেনের লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স'এর ক্রিস্টোফার এ. পিসারিডেস৷ বাজার অনুসন্ধানের এক তাত্ত্বিক কাঠামো বের করেছেন তাঁরা৷ নোবেল তারই স্বীকৃতি৷
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ