1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১০ লাখ টাকায় মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অভিযোগ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৬ জানুয়ারি ২০১৮

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানাতে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ৷ জানা গেছে, এভাবে নাকি দুই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অবশ্য এই অভিযোগ প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/2rZXO
মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন এক নারী চিকিৎসক
ছবি: privat

‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা' নামে একটি সংগঠন শনিবার ঢাকার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ওই অসাধু বাণিজ্যের অভিযোগ তোলে৷ সংগঠনটি শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করে৷ সংগঠনের আহ্বায়ক আবীর আহাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুই থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ঢোকানো হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে৷ এর জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দায়ী৷ উনি প্রতিটি উপজেলায় কমিটি করেছেন তালিভুক্তির জন্য৷ কমিটির সদস্য হতে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, তালিকাভুক্তির টাকার ভাগও তিনি নিচ্ছেন৷'' 

A K M Mozammal Haq - MP3-Stereo

আবীর আহাদ আরো অভিযোগ করেন, ‘‘সারা দেশে কোনোভাবেই দেড়লাখের বেশি মুক্তিযোদ্ধা নেই৷ এখন ওনারা বানাচ্ছেন সাড়ে তিন লাখ৷ অর্থাৎ দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধাই ভুয়া৷ অর্থের বিনিময়ে এদের মুক্তিযোদ্ধা করা হচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দায়ী৷ আমাদের দাবি দু'টি৷ এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর পদত্যাগ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিকভাবে অধিকার দিতে হবে৷''

আবীর আহাদ জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একজন লেখক এবং গবেষক৷ সাংবাদিকতাও করেছেন৷ তিনি মুক্তিযেদ্ধা এবং ৯ নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন৷ এমনকি একটি গ্রুপের কমান্ডারও ছিলেন তিনি৷  তাই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এই বাণিজ্য বন্ধে মাঠে নেমেছেন৷ এবং এ কারণেই ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা' নামে মুক্তিযোদ্ধাদের এই নতুন সংগঠন গড়েছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এই সংগঠনে আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন৷''

টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অভিযোগ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ রকম বাজারি অভিযোগ করলে হবে না৷ তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে৷ কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি দেব৷ কিন্তু তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো অভিযোগ নিয়ে আমার কোনো কথা নেই৷'' 

Abir Ahad - MP3-Stereo

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আগে কী হয়েছে আমি বলতে পারব না, তবে আমার সময়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে ছ'হাজার জনকে বাদ দিয়েছি৷ যোগ করেছি মাত্র চারশ’ জনকে৷ এঁরা হলেন বীরাঙ্গনা, মুজিব নগর সরকারের কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্মী, যাঁদের নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় নেয়া হয়েছে৷ কোনো সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা আমার সময় তালিকাভূক্ত হয়নি৷ কোনো মায়ের ছেলে নেই যে, প্রমাণ করতে পারবে আমি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধ করেছি৷ আমি চ্যালেঞ্জ করছি৷ বেশি দরকার নাই৷ পারলে পাঁচজনের ঘটনা প্রমাণ করুন৷

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১২ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সঠিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গেজেটের মাধ্যমে ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি গঠন করে৷

তালিকাভুক্ত ২ লাখ ৩০ হাজার সদস্যের মধ্যে কারা ভুয়া, যাচাই-বাছাই এবং নতুন অন্তর্ভুক্তির জন্য সারা দেশে যে কমিটি করা হয়, তাদের কাজ নিয়ে এরপর অভিযোগ ওঠে৷ অভিযোগ ওঠে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা এবং তালিকা থেকে বাদ দেয়ার৷ শতাধিক কমিটির সদস্যদের অভিযোগ ওঠার পর ৩৫টি উপজেলার ৪৫টি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়৷ এই যাচাই-বাছাই কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৬৬টি মামলা হয়েছে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷