1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হোয়াইট-নোজ সিনড্রোমের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাদুড়

২৬ নভেম্বর ২০১০

পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবী থেকে বহু প্রাণীই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে৷ সে রকম ছোট্ট এক প্রাণী বাদুড়৷ বলা হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে কমে আসছে বাদুড়ের সংখ্যা৷তাদের সুরক্ষায় সচেতনতা গড়ে তুলতে অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক সম্মেলন৷

https://p.dw.com/p/QIop
ছবি: AP

আগামী বছরের ১৬ থেকে ১৮-ই সেপ্টেম্বর আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বাদুড় রক্ষায়৷ তার নামও ব্যাট কনফারেন্স৷ প্রাগে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাদুড়ের বংশবৃদ্ধির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং বাদুড়ের শরীরে দেখা দেওয়া রহস্যজনক নতুন ধরণের এক ফাংগাস৷ এর নাম হোয়াইট-নোজ সিনড্রোম৷ ফাংগাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ খুব কাছ থেকে বাদুড় দেখার সৌভাগ্য এখন খুব কম মানুষেরই হয়৷ শুধু আর বাদুড়ের কথা বলছি কেন? এখন তো আমাদের চোখে পাখিও সেই আগের মত আর পড়ে না৷ আর পাখির কিচির মিচির শোনার সৌভাগ্য বলতে গেলে হয়ই না৷ কিন্তু কেন?

বাদুড় প্রচুর পোকামাকড় খেয়ে থাকে৷ বাদুড় প্রজাতি যদি প্রতি রাতে লাখ লাখ পোকামাকড় না খায় তাহলে আমাদেরকে পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে বাড়ি এবং মাঠেঘাটে রাসায়নিক দ্রব্য স্প্রে করতে হবে৷ ফলে পরিবেশ হবে দূষিত৷ বাদুড় বিশেষজ্ঞ দলের একজন অধ্যাপক পল রেসি৷ তিনি বলেন, ‘‘পোকামাকড়ের বংশ নিয়ন্ত্রণে বাদুড়ের বিশাল অবদান রয়েছে৷ আর সেই কারণেই প্রাণঘাতী কোন কিছু স্প্রে করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার৷ উত্তর আমেরিকার বাদুড় প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ফাংগাস৷ তার নাম জিওমাইসেস৷ এই ফাংগাসে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ বাদুড় প্রাণ হারিয়েছে, আর কিছু প্রজাতি উত্তর আমেরিকায় ধ্বংস হতে বসেছে৷ এই ফাংগাসটি ইউরোপে পৌঁছে যাওয়ায় এবং বাদুড় প্রজাতির মধ্যে এই ধরণের ধ্বংস ডেকে আনার ব্যাপারে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন৷''

Mausohr Fledermaus im Flug
বাদুড় দেখতে পায় না, বিশ্বাস হয়?ছবি: Max-Planck-Institut

ইউরোব্যাট বৈঠকে উপস্থিত শতাধিক প্রতিনিধির মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক রেসি৷ এটি ছিল বাদুড় রক্ষায় জাতিসংঘের ইউরোব্যাটস এগ্রিমেন্ট-এ অংশগ্রহণ করা দলগুলোর বৈঠক৷ অধ্যাপক রেসির সহকর্মীদের একজন টনী হাটসন৷ তিনি বলেন, বাদুড় পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই প্রয়োজনীয় একটি প্রাণী৷ হাডসন বলেন, ‘‘পরিবেশ সুস্থ কিনা তা বোঝার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি বাদুড়ের অনেক অবদান রয়েছে৷ কিন্তু তাদের শারীরিক কাঠামোর কিছু দিক আছে যার ফলে মানুষের চাপ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন তাদের ক্ষতি করে সহজেই৷ কিন্তু আমাদের উচিৎ পরিবেশের স্বাস্থ্য এবং তার পরিবর্তন মনিটর করার কাজে বাদুড়দের ব্যাবহার করা৷''

কিছু সমস্যা অবশ্য মানুষই তৈরি করছে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাড়িঘর উষ্ণ রাখার যে আধুনিক পদ্ধতি মানুষ ব্যবহার করে থাকে আজকাল, তার ফলে বাদুড়রা বিশ্রামের জায়গা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ জাতিসংঘের ইউরোব্যাটস এগ্রিমেন্টের নির্বাহী মহাসচিব আন্দ্রেয়াস স্ট্রাইট বলেন, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা এমন একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করছেন যা মানুষের আরাম এবং বাদুড়ের স্বাস্থ্য দুটোই নিশ্চিত করবে৷স্ট্রাইট বললেন, ‘‘সংরক্ষণের সাথে সংস্কার বা সংস্কার পরবর্তী নির্মাণ কাজের কোন বিরোধ নেই৷ তাই কোথাও যদি সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে খুব সহজেই সমাধান বা আপোশের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব৷''

বাদুড়ের সংখ্যা বেশি কমে গেলে তা মানবজাতির জন্যে সমূহ ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতি সংরক্ষণে তারা মূল্যবান ভূমিকা রাখে৷ তাই চলতি বছরে বাদুড় রক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ইউরোপে কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ অক্টোবরে প্রাগের সম্মেলন ছিল তারই একটি৷ সম্মেলনে ছাত্রছাত্রীরা বাদুড় রক্ষায় এগিয়ে আসে৷ তারা নতুন গবেষণাও শুরু করেছে বাদুড়ের হোয়াইট-নোজ ফাংগাস নিয়ে৷ ছাত্র এবং পরামর্শদাতারা বলছেন, এইক্ষেত্রে অর্থ একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ এই রোগটি নিয়ে গবেষণা করতে তহবিল সংগ্রহ করা এক কঠিন কাজ হয়ে পড়তে পারে৷ ছাত্ররা বাদুড়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, হতাশা ব্যক্ত করেছে তাদের মৃত্যুতে৷ সাথে সাথে অনেকেই বাদুড়ের মৃত্যুর কারণ যে রোগটি, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন৷

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক