হিটলার এবং নাৎসিরা যেভাবে শিল্পকলার অবমাননা করেছে
একনায়ক হিসেবে সারা বিশ্বে কুখ্যাতি অর্জন শুরুর আগে হিটলার ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী৷ ‘ফ্যুহরার’ যেসব শিল্পকর্মকে ঘৃণা করতেন, সেগুলোর ভাগ্যে ‘পতিত শিল্পকর্ম’-র তকমা জুটতো এবং জাদুঘর থেকে তা সরিয়ে ফেলা হতো৷
‘পতিত’ শিল্প
মডার্ন আর্ট-এর ধরন, এর শিল্পী বা বিষয়বস্তু হিটলারের একেবারেই পছন্দ ছিল না, তাই নাৎসিরা একে বলতো ‘পতিত শিল্পকর্ম’৷ ১৯৩৭ সাল থেকে নাৎসিরা জার্মানির জাদুঘর থেকে এসব শিল্পকর্ম সরিয়ে দিয়েছিল৷ এই ছবিতে হিটলার এবং সেসময়কার প্রচারণা মন্ত্রী গোয়েবেলসকে মিউনিখের একটি জাদুঘরের প্রদর্শনীতে দেখা যাচ্ছে৷
হিটলারের শিল্পকর্ম
রোমান্টিকতা এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শিল্পকর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল হিটলারের৷ তিনি পছন্দ করতেন সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য৷ তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে তাই ছিল ক্রানাখ, টিনটোরেটো এবং বোর্ডোনের ছবি৷ আর তার অনুসরণীয় ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাভেরিয়ার লুদভিগ আই এবং ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট৷ অবসরের পর নিজের শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর ইচ্ছে ছিল হিটলারের৷ নিৎস শহরে ফ্যুহরার জাদুঘরে প্রদর্শনী আয়োজনের ইচ্ছা ছিল তার৷
বাজেয়াপ্ত
নাৎসিরা কেবল প্রগতিশীল শিল্পীদের নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা জাদুঘরে তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল৷ ১৯৩৭ সালে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ১০১ টি জার্মান জাদুঘর থেকে ২০ হাজার শিল্পকর্ম সরিয়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ৷
হিটলারের জাতীয়তাবাদী ধরন
হিটলারের জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনায় বিমূর্ত শিল্পের যে কোনো স্থান নেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ১৯৩৭ সালের ১৮ই জুলাই মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘গ্রেট জার্মান আর্ট’ প্রদর্শনীতে৷ সেখানে চিরাচরিত প্রাকৃতিক দৃশ্য, ইতিহাস এবং নগ্ন চিত্রকর্মের প্রদর্শন হয়েছিল, এর বাইরে বিমূর্ত কোনো শিল্পকর্ম ছিল না৷
‘পতিত শিল্প’ হিসেবে চিহ্নিত করার কারণ
কখনো কখনো হিটলারের ঘনিষ্টজনরাও নিশ্চিত হতে পারতো না, কোন শিল্পীর কাজ হিটলার অনুমোদন দেবেন৷ তবে, আধুনিক কালের সৃজনশীল শিল্পী মাক্স বেকমান, ওটো ডিক্স, আর্নেস্ট লুদভিগ ক্রিসনারের কাজের অনুমোদন দেননি তিনি৷
পতিত শিল্পকর্মের প্রদর্শনী
‘পতিত শিল্পকর্ম’ নামের প্রদর্শনীতে ৩২ টি জার্মান জাদুঘর থেকে বাজেয়াপ্ত করা ৬৫০ টি শিল্পকর্মের প্রদর্শন হয়েছিল৷ সেখানে মানসিক প্রতিবন্ধীদের আঁকা স্কেচও স্থান পেয়েছে৷ বিভিন্ন শহরে এটির প্রদর্শন হয়, যা দেখেছিল ২০ লাখ মানুষ৷
নিষেধাজ্ঞা যখন বৈধতা পেল
১৯৩৮ সালের ৩১ শে মে ‘পতিত শিল্পকর্ম বাজেয়াপ্ত’ আইন প্রণয়ন করা হয়, যার মাধ্যমে ঐ শিল্পকর্মে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে বৈধতা দেয়া হয়৷ যুদ্ধপরবর্তী কালেও ঐ আইনটি কার্যকর ছিল৷
পতিত শিল্পকর্ম পোড়ানো
বাজেয়াপ্ত হওয়া শিল্পকর্মগুলো বার্লিনের গুদামঘর এবং শ্যোনহাউজেন প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ ১৯৩৯ সালের ২০শে মার্চ বার্লিনের অগ্নি নির্বাপন বিভাগ ৫০০০ শিল্প নির্দশন পুড়িয়ে ফেলে, যেটা তারা ‘মহড়ার’ অংশ বলে চালিয়ে দেয়৷
সুইজারল্যান্ডে নিলাম
১৯৩৯ সালের ৩০শে জুন সুইজারল্যান্ডে নিলামের সময় ১২৫টি ‘পতিত শিল্পকর্ম’ চিহ্নিত হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়৷